ঢাকা, সোমবার   ১৭ জুন ২০২৪

বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অনিয়ম বন্ধে অটোমেশন পদ্ধতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫৪, ৭ জুন ২০২৩

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর এতে লেজেগোবরে অবস্থা সচিবালয় কর্তাদের। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মালিকেরা বলছেন, বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় হতো শুধু বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। অর্থনীতির দুঃসময়ে মন্ত্রণালয়ের নতুন নিয়ম দা’য়ের কোপের মতো ক্ষত সৃষ্টি করলো। শিক্ষা বছরের শুরুতেই অধিদফতর পুরো ব্যবস্থাপনায় ডাল-ঝোল লাগিয়ে ফেলেছে। কারণ এতোদিন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি কমিটিতে তাদের প্রতিনিধিরাই থাকতেন। তাহলে এবার কেনো নতুন কানুন জারি হলো! 

সূত্র বলছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক হারে বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি। অধিকাংশ আসছেন ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও কাশ্মীর থেকে। সার্কভুক্ত দেশ পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও ভুটান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ তাদের দেশের তুলনায় এখানকার মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত ও খরচ তুলনামূলক কম। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ২০১১ সালে খুলনা মহনগরীর সোনাডাঙ্গায় প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনার প্রথম বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ। এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় পরের বছর ২০১২ সালে। ৫ বছর মেয়াদি স্নাতক পর্যায়ের এম.বি.বি.এস. শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে। ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ডিগ্রি কোর্সকে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পেশাদার পরীক্ষার নামে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এখানে প্রতি বছর ৫০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে ৩০-৫০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়ে থাকে। এভাবে অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে দিনে দিনে বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। যাদের কাছ থেকে সরকার বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার মতো বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। প্রতি বছর বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার নতুন বিদেশি শিক্ষার্থী এদেশে ভর্তি হচ্ছেন। এদের বড় অংশই নেপালের। দেশটির ৯০ শতাংশ চিকিৎসকের সার্টিফিকেট বাংলাদেশের।

অধিদপ্তর বলছে, দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে আফগানিস্তানসহ সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০৪টি আসন রয়েছে। সরকারি ডেন্টাল (বিডিএস) কলেজে রয়েছে ১৩টি আসন। সার্কের বাইরের দেশের নাগরিকদের সরকারিতে এমবিবিএস কোর্সে ৭২টি এবং বিডিএস কোর্সে ২৭টি আসন রয়েছে। অথচ বেসরকারিতে এমবিবিএস কোর্সে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১৪২৭ জন এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১৭৩৭ জন ভর্তি হন। এছাড়া ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১৯৭০ জন ভর্তি হন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সরকারিতে এমবিবিএস কোর্সে ১১৫ জনের অনুমোদন দেয়ার পর ৯৬ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থী ছিলেন ৭৬ জন। ডেন্টালে ভর্তি হওয়া ছয়জনের মধ্যে সার্কভুক্ত ছিলেন চারজন।

হঠাৎ করে অটোমেশন পদ্ধতির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। যেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে কেনাকাটায় দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ বিদ্যমান, সেখানে বেসরকারি মেডিক্যাল শিক্ষায় ভর্তির বিষয়টি সরাসরি তাদের হাতে নিয়ে যাওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ সরকারের শেষ সময়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কেন? বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই পরিবেশকে পছন্দ হবে না।  অন্য দেশে চলে যাবে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের ঘোষিত একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেকটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডিন ও সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ থাকেন। এমন একটি গঠিত শক্তিশালী ভর্তি কমিটি থাকতে সেখানে হঠাৎ করে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে কেন? এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, এই কমিটি তো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত। কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। অতীতে ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। 

দুদিন আগে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অভিভাবকেরা।  তারা বলছেন, দেশে প্রথম বারের মতো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। তারা বলেন, অটোমেশন পদ্ধতি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। অটোমেশন নয়, প্রচলিত নীতিমালাই সঠিক। যারা ঢাকার বাইরে থাকেন, তারা যদি অটোমেশনে ঢাকায় ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে থাকা-খাওয়ার বাড়তি খরচ জোগাড় করতে হয় অভিভাবকদের। অন্যদিকে যিনি ঢাকা থেকে বাইরে যাবেন, তাকেও একই হয়রানির শিকার হতে হবে। তাই প্রচলিত পদ্ধতিতে ভর্তি হলে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন উভয়ই। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেন, প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তিতে অনিয়ম হলে অবশ্যই ধরা পড়বে। তখন সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবে অধিদপ্তর। নিয়েছেও তারা। সরকারের নীতিমালা থাকতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার অর্থ হলো, বেসরকারি মেডিক্যাল শিক্ষায় একটি অসন্তোষ সৃষ্টি করা। ফলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল মেডিক্যাল শিক্ষাকে অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়ে অটোমেশনের আওতায় আনলে ব্যয়বহুল বেসরকারি মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়া অনিবার্য। তাই নিজেদের ব্যর্থতা অন্যদের ওপরে চাপানো উচিত নয়। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। তারা মনে করেন, অটোমেশন পদ্ধতি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এটা মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।

সরকারের শেষ সময়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কেন? বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই পরিবেশকে পছন্দ হবে না। তারা অন্য দেশে চলে যেতে পারে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে তখন প্রশ্ন উঠবে। মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের ঘোষিত একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডিন ও সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ থাকেন। এমন একটি শক্তিশালী ভর্তি কমিটি থাকতে সেখানে হঠাৎ করে অটোমেশন পদ্ধতি কেন চালু করা হচ্ছে? এ নিয়ে অনেকেরেই প্রশ্ন। কারণ, এই কমিটি তো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত। কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। অতীতে ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেন, প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তিতে অনিয়ম হলে অবশ্যই ধরা পড়বে। তখন সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবে অধিদপ্তর, নিয়েছেও তারা। সরকারের নীতিমালা থাকতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার অর্থ হলো, বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় একটি অসন্তোষ সৃষ্টি করা। ফলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল মেডিকেল শিক্ষাকে অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়ে অটোমেশনের আওতায় আনলে ব্যয়বহুল বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়া অনিবার্য। তাই নিজেদের ব্যর্থতা অন্যদের ওপরে চাপানো উচিত নয়। বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেডিকেল শিক্ষায় ভর্তির আগ্রহ কেন বেশি—এই প্রসঙ্গে তারা বলেন, বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষায় বেসরকারিতে অবকাঠামোগত কিছু দুর্বলতা থাকলেও পড়াশোনার মান ভালো। শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পাশ করে নিজের দেশের এন্ট্রি পরীক্ষায় রাশিয়া, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো ফল করছেন। এবং বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি থাকায় শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শেখার সুযোগ বেশি। রোগের ধরন অনুযায়ী একাধিক বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল গড়ে ওঠায় শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত শিখতে পারছেন। 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি