ঢাকা, সোমবার   ১২ মে ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ নরসুন্দর পেশা

আ নো য়া র  কা জ ল

প্রকাশিত : ১৬:২৫, ৬ এপ্রিল ২০২১

Ekushey Television Ltd.

মানুষ মাত্রই সৌন্দর্য পিয়াসীআর এই সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ হলো চুল যুগে যুগে এই চুল নিয়ে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই চুল-দাড়ি কাটা-ছাটা, সেভ করা প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজের একটি অংশ সেই কারণেই কেশবিন্যাসের কারিগর নাপিতের  প্রয়োজনীয়তা আগে হাট-বাজারের বট বৃক্ষের ছায়ায়, খেয়াঘাটে, ফুটপাতে কিংবা গ্রামগঞ্জের জলচৌকিতে বা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে নাপিতরা গ্রামবাংলার মানুষের চুল-দাড়ি কাটতো। সেই আদি পরিচিত দৃশ্য এখন সচরাচর চোখে পরে না কারণ আধুনিক সভ্যতার ক্রমবির্বতনে কেশ কারিগরদের গতিধারায় লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া

যাদের  শৈশব কেটেছে গ্রামে তাদের স্মৃতিতে আজও  চোখের সামনে ভাসে সে স্মৃতিময় দিনগুলো তবে এখনও গ্রামের কিছু হাট-বাজারে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। যদিও তা খুবই কদাচিৎ।

নাপিত বা নরসুন্দর  কারা

মানুষকে দেখতে সুন্দর করা যাদের কাজ, তারাই নরসুন্দর যাকে আমরা  বলি নাপিত বা শীল বংশ পরম্পরায়  তারা পেশাকে ধারণ করে চলেছে  যুগ যুগান্তরে নাপিত বা নরসুন্দর এমন এক শ্রেণীর পেশা যারা পুরোনো কায়দায় রাস্তার পাশে আয়না ঝুলিয়ে বিভিন্ন ভাবে মানুষের চুল ছাঁটেন এবং দাড়ি - গোঁফ কামিয়ে থাকেন  নরসুন্দর বাংলাদেশের সর্বত্রই বিরাজমান ছিল, এদের সামাজিক অবস্থান মিশ্র ধরনের বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের লোকজন পেশায় সম্পৃক্ত থাকলেও বেশির ক্ষেত্রেই এরা নরসুন্দর সম্প্রদায়ভুক্ত

নরসুন্দরদের  পসরা

গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে গেলে এখনও কোথাও কোথাও  চোখে পড়ে চিরচেনা সেই দৃশ্য  রাস্তার পাশেহাটে-ঘাটে জলচৌকিতে বসিয়ে কাঠের বক্সে বসে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি, সাবান, ফিটকারি, পাউডার লোশন নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সুন্দর করার কাজ করে যাচ্ছেন এসব নরসুন্দর বা নাপিতরা

কাজের ধরন

নাপিত বা নরসুন্দররা হলো চুল ছাঁটা বা কাটার কাজে নিয়োজিত বিশেষ পেশার লোক হিন্দু মুসলমান উভয় সমাজে নাপিত ছিল এরা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান স্বরূপ আগেকার দিনে হিন্দু সস্প্রদায়ের বিয়ে জন্ম উৎসবে নাপিতরা কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত মুসলিম পরিবারবর্গও নবাগত শিশুর মাথা ন্যাড়া করার জন্যে নরসুন্দরের দ্বারস্থ হতো হিন্দু পরিবারে কারও মা অথবা বাবা মারা গেলেও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর নাপিত তার ছেলেদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়

গ্রামের বাজারে নাপিতদের নির্দিষ্ট স্থানে বা দোকানে লোকেরা তাদের চুল কাটা, ছাঁটা, এবং ছোটখাট কাটাছেঁড়ার কাজ করত এসব সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ  করত নাপিত এই উপার্জনের অর্থ হতে পারে, আবার কোন দ্রব্যসামগ্রীও হতে পারে আগেকার দিনে নাপিতদেরকে কাজের বিনিময়ে সাধারণত দ্রব্যসামগ্রী দেওয়া হতো এই বিনিময় প্রথার নাম ছিল যজমানি ব্যবস্থা গ্রামের লোকজন সারা বছরের সেবার বিনিময়ে নাপিতদের ফসলের মৌসুমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান,পাট,চাল,গম,সরিষা,ভুট্টা,আলু  ইত্যাদি খাদ্যশস্য দিত

চালাকিপনা, রসিকতা, আড্ডাবাজি গল্প বলায় নাপিতদের বিশেষ দক্ষতা ছিল এক পরিবার থেকে আরেক পরিবারে এবং এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামের তথ্য আদান-প্রদান হতো নাপিতদের মাধ্যমে আমরা অনেকেই এই অতি প্রয়োজনীয় মানুষের খবর রাখি না, রাখার প্রয়োজনও অনুভব করি না

আধুনিক যুগে

বর্তমানে চুল-দাড়ি কাটার সরঞ্জাম যন্ত্রপাতিতেও পরিবর্তন হয়েছে সেলুনে এখন আর শান দেয়া ক্ষুর দেখাই যায় না তার বদলে এসেছে ব্লেড লাগানো ক্ষুর এসেছে শেভিং ক্রিম, লোশন ব্লোয়ার, চুলের কলপ আগে এগুলো ছিল কল্পনার অতীত

দৈনন্দিন গ্রামীণ জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অনুষাঙ্গিক বিষয়ের  মধ্যে  চুল কাটা-ছাটা,সেভ ইত্যাদি  কাজে  দীর্ঘকাল ধরে নিয়োজিত নরসুন্দর বা নাপিতদের বর্তমানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে   আগেকার দিনে তাদের আয় দিয়ে সংসার ভালোভাবে চললেও এখন তারা  আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছেনা তাই দিনে  হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম পেশা নরসুন্দর বা নাপিত  

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি