ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪

শিশুর সঠিক বৃদ্ধিতে যেসব খাবার ও পুষ্টি প্রয়োজন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সামিয়া তাসনিম

সামিয়া তাসনিম

একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন বাবা মায়ের এবং পরিবারের সবারই অনেক স্বপ্ন আর চিন্তাভাবনা চলে আসে। শিশুকে কি খাবার দিলে সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে! কি খাওয়াবে, কতটুকু খাওয়াবে এই চিন্তা প্রত্যেকেই করে থাকেন। অনক সময় সঠিক জ্ঞানের অভাবে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে শিশুদের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় না।

শিশু জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই একমাত্র খাবার। শিশু জন্মের সময় মায়ের বুকে যে, হলদে আঠালো ও স্বচ্ছ দুধ নিঃসৃত হয় তাকে কলস্ট্রাম বলে। এর ভিতরে থাকে রোগ প্রতিরোধক উপাদান যা শিশুকে নানারকম সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। নিচে শিশুদের পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

অনেকেই চিন্তা করেন কতটুকু দুধ খাওয়াতে হবে কতক্ষণ পর পর?
শিশুর উপযুক্ত বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালরি দরকার। জন্ম থেকে ছয় মাস পর্যন্ত যে পরিমান ক্যালরি প্রয়োজন তা হলো প্রতি কিলোগ্রাম দেহের ওজনের জন্য প্রতিদিন ১২০ কিলোক্যালরি এবং সাত থেকে ১২ মাস পর্যন্ত প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য প্রতিদিন ১০০ কিলোক্যালরি। দেহের ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোট ক্যালরি চাহিদা বাড়তে থাকে যদিও তখন প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ক্যালরির চাহিদা কমতে থাকে।

জন্মের সময় শিশুর খাদ্য চাহিদা ৩৫০ থেকে ৫০০ কিলোক্যালরি থাকে। এক বছর বয়সে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ কিলোক্যালরি হয়। ছয় মাস বয়সের পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার না দিলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এর কারণ হলো, দুধের চাহিদা পূরণ না হওয়া। শিশুর দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি দুধে ওই সময় না পাওয়া। যেমন ভিটামিন সি ও লোহা দুধে এত কম আছে যে এতে শিশুর চাহিদা পূরণ হয় না। আর জন্মের সময় শিশু মাত্রি গর্ভ থেকে যে পরিমাণ লোহা নিজের দেহে সঞ্চিত করে নিয়ে আসে, তা দিয়ে তার প্রয়োজন ছয় থেকে সাত মাস মিটতে পারে। এ সময় এই দুইটি পুষ্টির ঘাটতি হলে শিশুর এনিমিয়া হওয়ার আশংকা থাকে। এ সময় ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি` র চাহিদা বেশি হয়, যা শুধু দুধ থেকে পূরণ করা সম্ভব না। ভিটামিন সি` র জন্য ফলের রস, লোহার জন্য ডিমের কুসুম ও ভিটামিন এ ও ডি এর জন্য কডলিভার তেল খাওয়ানো ভালো। এটা না থাকলে গাঢ় সবুজ শাক ও গাজর ভালো করে সিদ্ধ করে ছেকে আশ বাদ দিয়ে খাওয়ানো যাবে। শিশুকে কিছুক্ষণ সকালের রোদে শুইয়ে রাখলে শিশুর ত্বকের নীচে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা শিশুর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

জন্মের সময় বাংলাদেশের সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর ওজন হয় ৩-৩.৫ কিলোগ্রাম। পুষ্টি চাহিদা ঠিকভাবে পালন করা হলে পাঁচ মাসে তার ওজন প্রায় দ্বিগুণ ও এক বছরে ৩ গুন হয়।
এই ধারা ঠিক রাখতে শিশুকে প্রতিদিন সুষম খাবার দিতে হবে ছয় মাস বয়স থেকে।
ভাত, ডাল ও সবজি, শাক সিদ্ধ করে ছেকে এক সঙ্গে মিশিয়ে সেই নরম খাদ্য ২/১ চামচ করে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হয়। অনেকের ধারণা ভাত শিশুর জন্য ভালো না। কিন্তু ভাত অত্যন্ত সহজপাচ্য জন্য শিশুর জন্য খুবি উপযোগী। এর সঙ্গে ডাল ও নরম সিদ্ধ সবজি যেমন পেপে, গাজর, আলু বা কপি তেলহীন মাছ একসঙ্গে চটকিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে সুজিও ভাতের মতো সহজপাচ্য।

প্রিম্যাচিউরড শিশুদের দেহের গঠন যথাযথ রূপে হয় না এদের ওজন কম থাকে। এইসব শিশুদের খাওয়ানোর ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এদের ক্যালরি চাহিদা একটু বেশি থাকে অথচ পরিপাকের মতো ক্ষমতা থাকে না। এ সময়েও মায়ের দুধই সব চেয়ে উত্তম, তবে বিশেষ ফরমূলায় খাবার দিলে চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়। অপরিণত শিশুর প্রোটিন এর চাহিদা বেশি থাকে। প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ৪-৫ গ্রাম প্রোটিন প্রতিদিন খাওয়াতে পারলে শিশুর ওজন দ্রুত বাড়বে।
এভাবে প্রত্যেক শিশুর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার দিলে শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবে।
মনে রাখতে হবে এই বয়সটায় শিশুর আসল সময়। এখন যদি শিশু সঠিকভাবে সঠিক পুষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে তাহলে বড় হয়েও সেইসব শিশু সুস্থ ও নীরোগ থাকতে পারবে।

লেখক: পুষ্টিবিদ, ল্যাব এইড পল্লবী, ঢাকা।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি