ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

অসুস্থদের করোনা ভাইরাসে করণীয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩১, ৯ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ২২:৩৫, ৯ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসে যে কেউই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে যারা আগে থেকে বিশেষ কিছু অসুখে ভুগছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া বয়স্ক লোকেরাও এই ভাইরাসে সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন এবং তাদের জীবন এর ফলে হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত যে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, চীনসহ সারা বিশ্বে, তাদের বেশিরভাগই বৃদ্ধ রোগী।

তাদের ছিল নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে তারা হৃদরোগে ভুগছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে হৃদরোগের মতো বিশেষ কিছু অসুখে ভুগে থাকলে আপনি হয়তো করোনাভাইরাসের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হতে পারেন।

এরকম মানুষের জন্যে এখানে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো:

কাদের ঝুঁকি বেশি

অসুখে ভুগলেই যে আর কারো চেয়ে আপনার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তা নয়। শুধু আপনাকে বাড়তি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আপনার দেহে যাতে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ না ঘটে সেজন্যেই এসব সাবধানতা। কারণ আপনি আক্রান্ত হলে এর উপসর্গ গুরুতর রূপ নিতে পারে এবং আপনি সহসাই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে, যারা একটু বয়স্ক অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন, করোনাভাইরাসে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যারা নিচের রোগগুলোতে ইতোমধ্যেই আক্রান্ত তাদের সাবধান থাকা জরুরি।

  • অ্যাজমা বা হাঁপানি
  • ডায়াবেটিস
  • হৃদরোগ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ মানুষই কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্বাভাবিক সর্দি কাশির মতোই প্রথম কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে তারা সেরে ওঠেন।

তবে কিছু কিছু মানুষের জন্যে এটা গুরুতর রূপ নিতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে, এই সংখ্যা যদিও অনেক কম, এই ভাইরাসটি প্রাণহানিরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কীভাবে নিরাপদ থাকবো
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্যে সাধারণ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এসব বিষয় মেনে চললেই আপনি খুব সহজেই ভাইরাসটিকে ঠেকাতে পারবেন।

বলা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশি থেকে যে জলীয় পদার্থ নির্গত হয় তার মাধ্যমেই এটি ছড়িয়ে থাকে। ওই জলীয় পদার্থের সংস্পর্শে এলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

আমরা যখন হাঁচি কাশি দেই তখন সেই জলীয় পদার্থ টেবিলে চেয়ারে কিম্বা আমাদের হাতে এসে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে নির্গত ওই পদার্থের মধ্যেই থাকে করোনাভাইরাস। তার পর আমরা যখন হাত না ধুয়ে কিছু স্পর্শ করি তখন সেই ভাইরাসটি অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে। যেমন সিঁড়ির হাতল, দরজার হ্যান্ডল ইত্যাদি।

একারণে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যা যা করা জরুরি:

  • হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু অথবা জামার হাতা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন (হাত দিয়ে নয়)
  • ব্যবহৃত টিস্যুটি সাথে সাথেই ময়লা ফেলার জায়গা বা বিনে ফেলে দিন
  • সাবান ও পানি দিয়ে বার বার হাত ধুয়ে ফেলুন। সাবান ও পানি কাছে না থাকলে হ্যান্ড -স্যানিটাইজার বা হাত জীবাণুমুক্ত করার জেল ব্যবহার করুন।
  • অসুস্থ লোকজনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • হাত পরিষ্কার না থাকলে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না

আমি কি মুখে মাস্ক পরবো?
ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশন বলছে: "ভাইরাসটি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমরা মাস্ক পরার সুপারিশ করি না। এগুলো যে খুব একটা কার্যকর তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এছাড়াও যাদের ফুসফুসের সমস্যা আছে তারা মুখে মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।"

জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে?
বেশিরভাগ মানুষই তাদের কাজে যেতে পারেন, যেতে পারেন স্কুল কলেজে এবং অন্যান্য জায়গাতেও যেখানে লোকজন আসা যাওয়া করে।

আপনাকে তখনই ঘরের ভেতরে আলাদা হয়ে থাকতে হবে যখন ডাক্তাররা আপনাকে এভাবে থাকার উপদেশ দেবেন।

অসুস্থ বোধ করলে কী করবো?
করোনাভাইরাসের উপসর্গ হচ্ছে:

  • কাশি
  • শরীরে তাপমাত্রা বেশি হওয়া
  • শ্বাস কষ্ট

এসব উপসর্গ থাকলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

লন্ডনে রয়্যাল কলেজের একজন চিকিৎসক ড. জনাথন লিচ বলছেন, "সবচেয়ে জরুরি রোগীর আতংকিত না হওয়া। হয়তো দেখা যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ঠাণ্ডা কাশি বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে, করোনাভাইরাসে নয়।"

যদি মনে হয় যে আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাহলে প্রথমেই হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি কিম্বা ডাক্তারখানায় ছুটে না গিয়ে ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র নার্স ফিলিপা হবসন বলছেন, "আপনার শরীরে যদি উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে নিজেকে আর সকলের কাছ থেকে আলাদা করে রাখুন। এবং ডাক্তারকে ফোন করে পরামর্শ নিন। ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করবেন, খেয়াল রাখবেন শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না যায় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম করুন।"

আমি কি ওষুধ অব্যাহত রাখবো?
অসুস্থ হয়ে পড়লেও স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে আপনি আগে থেকে যেসব ওষুধ খাচ্ছিলেন সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে।

অসুস্থ অবস্থায় আপনার যদি ওষুধ ফুরিয়ে যায় তাহলে বন্ধু বান্ধব বা পরিবারের কাউকে সেই ওষুধ এনে দেওয়ার অনুরোধ করুন।

লন্ডনে ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রফেসর পিটার ওপেনশ বলছেন, এরকম অসুস্থ লোকজনের ঘরে কমপক্ষে চার সপ্তাহের ওষুধ থাকা দরকার।

ঘরে অতিরিক্ত কিছু খাবার দাবার রেখে দেওয়াও ভালো, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

ফ্লু-র টিকা নিতে হবে?
করোনাভাইরাস ফ্লুর মতো নয়। এটি একেবারেই আলাদা ধরনের ভাইরাস। ফ্লুর কারণেও আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এবং কোন কোন ব্যক্তির বেলায় এই ফ্লু গুরুতর রূপ নিতে পারে।

ফ্লু-র টিকা নেয়া থাকলে ভালো।

বিশেষ করে যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, শিশু, যাদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা ছাড়াও গর্ভবতী নারীরাও ফ্লু-র টিকা (ফ্লু জ্যাব) নিতে পারেন।

শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি থাকলে?
অ্যাজমা ইউকে নামের সংস্থা বলছে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে প্রতিদিন ইনহেলার (সাধারণত বাদামী) নিন। করোনাভাইরাসসহ অন্য কোনো ভাইরাসেও যদি আক্রান্ত হন তাহলে ইনহেলার অ্যাজমা অ্যাটাক থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।

তবে নীল রঙের ইনহেলারটিও সবসময় সাথে রাখুন। যদি দেখেন শ্বাস কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে তখন এটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট যদি তীব্র হয় এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

ডায়াবেটিস থাকলে
যারা টাইপ ওয়ান বা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের বেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তাদের বেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।

ডায়াবেটিস ইউকে নামের একটি সংস্থার কর্মকর্তা ড্যান হাওয়ার্থ বলছেন: "যাদের ডায়াবেটিস আছে করোনাভাইরাস কিম্বা কোভিড-১৯ তাদের শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।"

"আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং কাশি, জ্বর এবং শ্বাস কষ্টের উপসর্গ থাকে, তাহলে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রার ওপর সতর্ক নজর রাখতে হবে।"

দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে
যারা দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে সমস্যা এবং দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা দুর্বল হলে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন এবং এই অসুস্থতা মারাত্মক রূপও নিতে পারে।

ব্রিটেনে চিলড্রেন্স ক্যান্সার ও লিউকেমিয়া গ্রুপের পরামর্শ হচ্ছে: যেসব শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের পিতামাতার উচিত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে কী করা উচিত এবিষয়ে পরামর্শ নেওয়া।

ব্রিটিশ লিভার ট্রাস্ট বলছে, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমানোর উপায় হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার নিয়ম কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা।

তবে কারো শরীরে এসব উপসর্গ দেখা দিলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।

গর্ভবতী নারীদের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
গর্ভবতী নারীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি- এমন কথা বলার পক্ষে এখনও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংক্রমণ এড়াতে অন্যদের মতো তাদেরও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গাইড লাইন মেনে চলতে হবে।

ধূমপায়ী হলে
যুক্তরাজ্যে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি দাতব্য সংস্থা অ্যাশের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা আর্নট বলছেন, যারা ধূমপান করেন তাদের উচিত করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে ধূমপান কমিয়ে ফেলা কিম্বা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া।

"ধূমপায়ীদের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাদের নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা ধূমপান করেন না তাদের দ্বিগুণ।"

তিনি বলেন, "ধূমপান ছেড়ে দেওয়া নানা কারণেই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। করোনাভাইরাসের কথা মাথায় রেখেই তাদের উচিত ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। এতে তার দেহে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।"

ধূমপান ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলে তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।

বয়স্ক হলে কি আলাদা থাকা দরকার?
ব্রিটেনে কর্তৃপক্ষের উপদেশ হচ্ছে বয়স্ক লোকজনদের আলাদা থাকার প্রয়োজন নেই। বয়স্ক লোকজনদের নিয়ে কাজ করে এরকম একটি দাতব্য সংস্থা এইজ ইউকের একজন পরিচালক ক্যারোলিন আব্রাহামস বলেছেন, পরিবারের সদস্যদের উচিত তাদের বয়স্ক আত্মীয় স্বজনের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা।

"তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কোন উদ্বেগ থাকলে অথবা এবিষয়ে তথ্যের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।" বিবিসি

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি