ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাবুন, বিশ্বাস করুন, অর্জন করুন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২২, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৪:০১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২

আসলে মানুষ যা ভাবতে পারে তা অর্জন করতে পারে। তাই অর্জন করতে হলে আগে ভাবতে হবে। একজন মানুষ যখন ভাবতে পারে- আমি পারি; আমি করব- তখন সে করতে পারে এবং যখন সে ভাবে না হবে না, পারব না; তখন হয়ও না, পারেও না।

আপনি সফল হবেন না ব্যর্থ হবেন, আলোকোজ্জ্বল দীপ্যমান হবেন নাকি নিষ্প্রভ হবেন, প্রদীপের দীপশিখার মতো জ্বলজ্বল করবেন না টিমটিম টিমটিম করতে করতে নিভে যাবেন, যেমন অনেক বাতি আছে না এই টিমটিম একটু একটু জ্বলে তারপরে নিভে যায়। তো নিভে যাবেন, এটা নির্ভর করে আপনার ভাবনার ওপরে।

আসলে খেলাধুলা, পড়াশোনা, জীবনযুদ্ধ বা বাস্তব রণক্ষেত্র বলেন, (খেলাধুলাও অনেকটা রণক্ষেত্র) এখানে দুইপক্ষ নামে জানপ্রাণ দিয়ে নামে। কিন্তু জানপ্রাণ দিয়ে নামুক বা যেভাবে নামুক জয়-পরাজয়টা কিন্তু নির্ধারিত হয়ে যায় ভাবনার ওপরে। যে টিম ভাবতে পারে যে, আমরা জিতব, সে টিম জিতে। তার খেলা একরকম হয় আর যে টিম মনে করে যে, হেরে যাব, পারি কি না পারি ইস কী জানি কী হয়! তারা হেরে যায়।

তো আসলে জয় বা পরাজয় সাফল্য বা ব্যর্থতা, আপনি সফল হবেন না ব্যর্থ হবেন, নক্ষত্র/স্টার হবেন না উল্কাপিণ্ড হবেন, (উল্কাপিণ্ড কী হয়? নিভে যায় আর স্টার নক্ষত্র জ্বলজ্বল করে আলো ছড়ায়), জ্বলজ্বল করবেন না নিভে যাবেন এটা নির্ভর করে আপনার ভাবনার ওপরে।

গোলাবারুদ বা রসদ কিছুই ছিল না, শুধু ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তির ভাবনা!

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা যদি আমরা ধরি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বললেন যে, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। একটা সুসজ্জিত নির্মম বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্যে যে প্রস্তুতি দরকার যে অস্ত্রশস্ত্র দরকার যে গোলাবারুদ দরকার, যে রসদ দরকার তার কিছুই আমাদের ছিল না, কিন্তু ভাবনা ছিল যে, স্বাধীনতা মুক্তি। এবং এই ভাবনাটা সর্বত্র ছড়িয়ে গেল।

অস্ত্র নাই ঠিক আছে। শত্রুর অস্ত্র আমার অস্ত্র, রসদ নাই ঠিক আছে শত্রুর রসদ আমার রসদ এবং যেহেতু আমরা বিশ্বাস করতাম যে, আমরা স্বাধীন হব, আমরা জয়ী হব। আমরা স্বাধীন হয়েছি, জয়ী হয়েছি।

আর আমাদের জাতি পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতি, পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ জাতি। আমাদের জাতি যখন কোনোকিছু ভাবে যে, এটা সে করবে, তখন তার ব্রেন সে লক্ষ্যে কাজ করতে শুরু করে এবং সে সেটা অর্জন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এত কম সময় কোনো জাতি রক্তাক্ত যুদ্ধ করে এরকম একটা নৃশংস হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন হতে পারেনি। কিন্তু আমরা পেরেছি। কেন? আমরা ভাবতে পেরেছি তাই।

ভাবনাটাই বিশ্বাসে এবং বিশ্বাস রূপান্তরিত হয়েছে কর্মে!

আমরা যেহেতু সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতি এবং যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সবচেয়ে দক্ষ, তো আমাদের ভাবনাটাও বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছে প্রথম। তারপরে সেটা কর্মে রূপান্তরিত হয়েছে এবং সারাদেশের মানুষ মুক্তির সেনানী হিসেবে কাজ করেছে, সৈনিক হিসেবে কাজ করেছে- কেউ অস্ত্র নিয়ে, কেউ রসদ সরবরাহ করে, কেউ খাবার সরবরাহ করে।

একটা ছোটো মেয়ে তার একটা পোষা ছাগল, সেটাও নিয়ে এসেছে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানোর জন্যে যে, ‘আমার এই ছাগলটাই আছে’। খুব যত্নের ছাগল, এটা মুক্তিযোদ্ধারা খাবে। মেয়েটি গরিব কিন্তু কোনো পয়সা নেয়নি।

কারণ যখন ভাবনাটা সৎ ভাবনা হয়, ভাবনাটা সুন্দর ভাবনা হয়, তখন কী হয়? তখন স্রষ্টার অনুগ্রহ তার ওপর আসে এবং স্রষ্টা আমাদের সহায় ছিলেন তাঁর দয়া আমাদের ওপর নাজিল হয়েছে। যে কারণে সবচেয়ে স্বল্পতম সময় আমরা স্বাধীন হয়েছি।

তলাবিহীন ঝুড়ির অনেক কিছুই এখন পৃথিবীর সেরা দশে!

আমাদেরকে বলা হতো, স্বাধীন হয়েছে তাতে কী হয়েছে? তোমরা কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। তোমরা ফকিরই থাকবে।
তো এরকম আমরা স্বাধীন হলাম। আমাদের সম্পর্কে অনেকে বলল, এটা তলাবিহীন ঝুড়ি, এটা চলতে পারবে না। কিন্তু আমরা সবসময় বিশ্বাস করতাম যে, আমাদের দেশ হচ্ছে স্বর্গভূমি। আমাদের মানুষগুলো হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে দক্ষ। আমরা যদি লক্ষ্যস্থির করি, আমরা যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারি।

আমরা এখন ধান উৎপাদনে চতুর্থ। ইলিশে নম্বর ওয়ান। কাঁঠালে দ্বিতীয় এবং ইনশাআল্লাহ আগামী দশ বছরের মধ্যে কাঁঠালে আমরা কী হব? প্রথম। সবজিতে তৃতীয়। আলুতে ছয় নম্বর। আমে অষ্টম, পেয়ারায় অষ্টম, ছাগলের দুধে দ্বিতীয়। মিঠা পানির মাছে তৃতীয়।

অর্থাৎ যেখানে আমরা ধরেছি, যেখানে আমরা আমাদের ভাবনাতে মনোযোগ দিয়েছি, ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েছি, যা নিয়ে আমরা ভেবেছি, সেখানে আমরা সবসময় টপ অব দ্য লিস্টে অর্থাৎ দশের মধ্যে চলে আসছি।

‘আঁকিও না লিখিও না, বসে বসে ভাবি’

এখন থেকে ১১০/১১১ বছর আগে ফ্রান্সের প্যারিস শহরের একটা রেস্টুরেন্টে তরুণ লেখকদের আড্ডা হতো। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর- এরা সবসময়ই আড্ডা দিতে সেইসময় পছন্দ করতেন।

তো এক আড্ডায় তরুণ সব, যাদের পরবর্তী সময়ে অনেক নামডাক হয়েছে। ওখানে নিয়মিত যারা আড্ডা দিতেন তাদের মধ্যে ছিলেন চিত্রকর পাবলো পিকাসো, কবি নাট্যকার জাঁ ককতো, কবি এপোলিনিয়ার এবং আরও অনেকে। 

একদিন চিত্র পরিচালক জাঁ ককতো লক্ষ্য করলেন, এদের পাশের টেবিলে এক ভদ্রলোক রোজ বসেন। চুপচাপ বসে তাদের কথা শোনেন। দেখলেই বোঝা যায় যে, লোকটার তেমন টাকা-পয়সা নাই।

একদিন ককতোর কৌতূহল হলো। জিজ্ঞেস করলেন, ‘মশাই কী করেন? ছবি আঁকেন না গল্প কবিতা লেখেন?’

তিনি বললেন, ‘আঁকিও না লিখিও না। তবে লেখা বা আঁকা নিয়ে আপনারা কী ভাবেন তা জানার আমার খুব ইচ্ছে। তাই বসে বসে আপনাদের কথা শুনি।’

জ্যঁ ককতো তখন আবার পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে করেনটা কী?’

ভদ্রলোক বললেন, ‘আসলে আমার কাজ হলো ভাবা, বসে বসে আমি ভাবি।’

ককতোর একটু বিরক্তিই হলো! ‘মশাই কী নিয়ে ভাবেন?’

তখন সে ভদ্রলোক বললেন, ‘জানেন তো আমার দেশের সম্রাট অত্যাচারী। আমি ভাবি, কীভাবে এই অত্যাচার উচ্ছেদ করে আমার দেশের মানুষ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে নিশ্চিত করে থাকার ব্যবস্থা করবে।’

ককতো ভাবলেন, লোকটার কি স্ক্রু ঢিলা, মাথা খারাপ, নইলে এমন ভাবনা আসতে পারে মাথায়? কারণ সে দেশের সম্রাট অত্যন্ত ক্ষমতাবান, অত্যন্ত ক্ষমতাশালী দেশ। তারপরে এটা হচ্ছে ১৯১০-১১ সাল!

সাত বছর পরে তখন ককতো, পিকাসো এদের একটু নামডাক হয়েছে। এমন সময় একদিন ককতো খবরের কাগজ নিয়ে পিকাসোর কাছে ছুটে আসলেন। বললেন, ‘ঐ লোকটার কথা মনে আছে, যে লোকটা রেস্টুরেন্টে আমাদের পাশের টেবিলে বসে আমাদের তর্ক-আলোচনা শুনতো, আর অত্যাচারী সম্রাটের শাসন উচ্ছেদ করার কথা ভাবত?’

পিকাসো বলেন, ‘হ্যাঁ মানে আছে। কী হয়েছে?’

ককতো বললেন,‘ওই লোকটা তো সত্যি সত্যি রাশিয়ায় বিপ্লব করে ফেলেছে। জারের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে এবং রাশিয়ার নতুন নাম হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে গেছে।’

সেই লোকটির নাম ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেলিন। লেলিনের নাম শোনেননি এরকম মানুষ খুব কম আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতির পিতা লেলিন।

‘মনছবি’  নিয়ে আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা কী বলছেন?

এই ভাবনাটা খুব ইম্পর্টেন্ট। ভাবনা থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি, ভাবনা থেকে আমরা অনেকগুলো ক্ষেত্রে দশের মধ্যে ঢুকে গেছি এবং অনেকগুলো ক্ষেত্রে শুধু ঢুকেছি না, আমাদের এই ভাবনাটাকে আমরা যদি ভাবতে থাকি, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা দশের মধ্যে থাকব।

যদি আমরা দেখি সবক্ষেত্রে, আপনি যেভাবে ভাববেন ঘটনা কিন্তু সেভাবেই ঘটবে। যে কারণে মনোবিজ্ঞানীরা এখন বলেন, জীবনে আপনি যেখানে যেতে চান বা যা হতে চান, করতে চান সেটার একটা মানসিক চিন্তা মনে মনে ভাবতে হবে অর্থাৎ মনোজগতে সেটা হতে হবে। যেটাকে আমরা বলি মনছবি।

কল্পনা ভাবনাকে কীভাবে নির্ভেজাল করবেন?

যখন আপনি কল্পনা করতে থাকবেন, ভাবতে থাকবেন তখন এই ভাবনাটাই আপনাকে লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।

১. ভাবুন- ভালো ও সৎ ভাবনা!

এই যে ভাবনার শক্তি এটাকে খেলোয়াড়রা খুব চমৎকারভাবে ব্যবহার করছে এবং ক্রীড়াঙ্গনে যত সফল খেলোয়াড় রয়েছেন তারা আগে ভাবেন কী করবেন, কীভাবে বলটাকে মারবেন, কীভাবে গোল করবেন, কীভাবে হিট করবেন এবং তারপরে তিনি বাস্তবে খেলেন। অতএব সবসময় ভাবতে হবে।
এই ভাবনার জন্যে কী করতে হবে? ভাবনাটা যেন ঠিক হয়, এলোমেলো যেন না হয়, ভাবনাটা যেন ডাইলুটেড না হয় মানে ভেজাল না হয়, এজন্যে নির্ভেজাল ভালো ও সৎ ভাবনা ভাবতে হবে।

ভাবনার মধ্যে নেতিবাচক কোনোকিছু ঢুকলে কী হবে? দুধের সাথে পানি মিশালে কী হয়? পানি ভালো জিনিস কিন্তু দুধের পানিটা তখন ভেজাল হয়ে যায়। তাই ভাবনাকে ভেজাল করা যাবে না। ভাবনাকে একদম পিওর দুধ, পিওর মধুর মতো রাখতে হবে, যাতে কোনো ভেজাল না ঢোকে।

২. জীবনের একটা লক্ষ্য ঠিক করুন

তো এই ভাবনা ঠিক করার জন্যে কী করতে হবে? জীবনের একটা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।

সুপারম্যানের যে আইডিয়া এটা দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিটশে থেকে নেয়া। ফ্রেডরিখ নিটশে বলেন, ‘জীবনে যার বেঁচে থাকার একটা কারণ আছে জীবনটা তার জন্যে অনেক সহজ এবং আমি আমার জীবন থেকে উপলব্ধি করেছি, জীবনটা কত সহজ হতে পারে। কেন? আমার বেঁচে থাকার একটা কারণ আছে আমি এই কারণে বেঁচে থাকব এবং এটাই আমার জীবন, এটাই আমার মরণ। অতএব জীবনটা আমার জন্যে খুব সহজ।’

বেঁচে থাকার যে কারণ ওটাকেই যদি আপনি জীবন মনে করতে পারেন, কোনোকিছুই আপনার জীবনকে আটকাতে পারবে না।

৩. লক্ষ্যের ব্যাপারে সচেতন হোন

আসলে মনোবিজ্ঞানীরা গত ৭০ বছর ধরে এই গবেষণা করেছেন এবং সুদীর্ঘ এই গবেষণার ফলাফল থেকে তারা বলেন, যাদের জীবনের একটা লক্ষ্য আছে তারা লাভ করেন দীর্ঘজীবন এবং যত সুন্দর, যত বড় লক্ষ্য হবে, তার জীবনটা তত সুন্দর হবে, তত দীর্ঘ হবে। তাদের ঘুম ভালো হয়, স্ট্রোক ও বিষন্নতার ঝুঁকি থেকে তারা মুক্ত থাকেন এবং যারা নিজ লক্ষ্যের ব্যাপারে যত সচেতন তাদের রোগ এবং অন্যান্য কারণে তাদের মৃত্যু হার তত কম।

এএইচএস
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি