ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জীবনধারা পরিবর্তনে কমতে পারে হৃদরোগে মৃত্যুর হার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ২০:০০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

অসুস্থতার পর খ্যাদ্যাভাসে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন

অসুস্থতার পর খ্যাদ্যাভাসে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন

বিংশ শতাব্দীর ৭০ ও ৮০-র দশকে বাংলাদেশে অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ ছিল সংক্রামক রোগ; এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ডায়রিয়ায়। সচেতনতা বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ইত্যাদির ফলে সংক্রামক রোগে মৃত্যু ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অন্যদিকে বাড়তে থাকে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু। 

১৯৮৬ সালে যেখানে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু ছিল ৮%; ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯% এবং ২০১৬ সালে ৬৭%; এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে, প্রায় ১৫%। মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ ছিল ক্যান্সার। অন্যান্য কারণের মধ্যে ধূমপান, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্রনিক রোগ অন্যতম।

এর কারণ কী? গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এর প্রধান কারণ আমাদের জীবনদৃষ্টি ও জীবনাচারে পরিবর্তন। নেতিবাচক জীবনদৃষ্টি, সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক অশান্তি, অর্থনৈতিক অতৃপ্তি ইত্যাদি কারণে যেমন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে; অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও শারীরিক পরিশ্রমহীনতার কারণে হৃদরোগ এমনকি হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত ঘটে যাচ্ছে। এ-ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি পাঁচ জনে একজন উচ্চ রক্তচাপে এবং প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, স্থূলতা—এই রোগগুলোকে একত্রে বলা হয় ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’। লাইফস্টাইল অর্থাৎ জীবনযাত্রার ভুল থেকেই হয় এ রোগগুলো। প্রকাশ ভিন্ন ভিন্ন হলেও এই রোগগুলো হওয়ার পেছনের কারণগুলো মোটামুটি একই রকম। তাই এগুলোর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পেছনের কারণগুলোকেও সামনে আনা প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পেছনের কারণগুলো পেছনেই থেকে যাচ্ছে, সামনে থাকছে শুধু ওষুধ আর সার্জারি। অথচ আমরা সকলেই জানি, ওষুধ খেয়ে বা সার্জারি করে এসব রোগে পূর্ণ নিরাময় হয়েছে— এমন নজির নেই।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্র একই চিত্র, এমনকি  আমেরিকাতেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘটনাই বলে দেয়—কী হচ্ছে সেখানে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ও ব্যয়বহুল। হাই-টেক এই চিকিৎসা ব্যবস্থার বলি হচ্ছেন অনেকেই, যেমন হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

ডা. কাল্ডওয়েল এসেলস্টাইন
২০০৪ সালে বিল ক্লিনটন করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিল ক্লিনটনের চিকিৎসকেরা তার বাইপাস অপারেশন করেন। বাইপাসের পর ক্লিনটন ভালোই ছিলেন। ওষুধপত্র নিয়মিত খাচ্ছেন আর জীবনযাপন করছেন আগের মতোই। ২০১০ সালে তার আবার বুকে ব্যথা হয়। সমস্যা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার করোনারি ধমনীতে দুটি  স্টেন্ট বা রিং পরানো হয়। আগের মতোই সবকিছু চলতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হৃদরোগ চিকিৎসার প্রধান দুটি পন্থা—এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি— দুটোই তার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়ে গেছে। কিন্তু ক্রমশ অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এখন কী করণীয়?

ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ক্যালিফোর্নিয়ার কার্ডিওলজিস্ট ডা. ডিন অরনিশ এবং ওহাইও-র ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সার্জন ডা. কাল্ডওয়েল এসেলস্টাইন মিলিতভাবে বিল ক্লিনটনকে ভিন্ন চিকিৎসা দেন। তারা তার খাদ্যাভ্যাসে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। তাকে দেয়া হয় Whole Foods,Plant Based Diet. এতে সমস্ত প্রাণিজ আমিষ (মাছ মাংস ডিম দুধ) বন্ধ রাখা হয় এবং উদ্ভিজ্জ আমিষসহ পূর্ণ শস্যদানা (whole grain), ফলমূল শাকসবজি সালাদ বিন মাশরুম ইত্যাদি দেয়া হয় এবং একদম বিনা তেলে রান্না করা হয়—যা ‘ভেগান ডায়েট’ নামে পরিচিত। সাথে ব্যায়াম।

কার্ডিওলজিস্ট ডা. ডিন অরনিশ
কিছুদিনের মধ্যেই তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। ছয় মাসের মধ্যেই তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। জীবনধারা পরিবর্তনের এই অসাধারণ ফলাফল দেখে বিস্মিত বিল ক্লিনটন তার অনুভূতির কথা মিডিয়ার কাছে তুলে ধরেন। শুধু বিল ক্লিনটন নন, আমেরিকায় বহু হৃদরোগী ডা. ডিন অরনিশ এবং ডা. কাল্ডওয়েল এসেলস্টাইনের জীবনধারা পরিবর্তনের কর্মসূচি অনুসরণ করে তাদের ব্লকেজ রিভার্স অর্থাৎ হৃদরোগ নিরাময় করতে সক্ষম হয়েছেন।

৭৬ বছর বয়সে বিল ক্লিনটন

গবেষণা থেকে এটিই প্রতীয়মান  হয় যে, সঠিক জীবনদৃষ্টি ও জীবনধারা এবং মেডিটেশন করোনারি ধমনীর  ব্লকেজ কমাতে পারে। এই গবেষণার ফলাফল ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় Journal of Current and Advance Medical Research (JCAMR)-এ।

পৃথিবীজুড়ে শত শত গবেষণার উপসংহার হচ্ছে—এই রোগগুলো হওয়ার পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ ভুল বা অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ খেলে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। মানুষের পুষ্টি-সংক্রান্ত ৩৫ বছরের দীর্ঘ গবেষণা থেকে ড. টি. কলিন ক্যাম্পবেল প্রণীত বই দ্য চায়না স্টাডি-তে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ। এ-ছাড়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ অতিরিক্ত প্রাণিজ খাবার, চিনি ও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ, স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও টেনশন।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি