ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪

টেলিভিশন দেখার শুদ্ধাচার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

টেলিভিশন আমাদেরকে ঘরে বসেই দূরকে কাছে এনে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আর কম্পিউটার কাজে এনেছে গতি। যুগের সাথে ছন্দ মেলাতে আমরা ব্যবহার করছি কম্পিউটার−কখনো ডেস্কটপ, কখনো ল্যাপটপ, কখনো-বা নোটবুক। টিভিতেও এসেছে বিপ্লব। সাদা-কালোর পর রঙিন, সম্প্রতি এসেছে স্মার্ট টিভি। প্রযুক্তি অগ্রসর হচ্ছে তার নিজস্ব গতিতে। কিন্তু এর ব্যবহারের যে মাপকাঠি সেটা মেনে চলতেই হবে। 

চলুন জেনে আসা যাক টেলিভিশন দেখার জন্য কী কী শুদ্ধাচার অনুসরণ করতে হবে...

> অনির্দিষ্ট ও অফুরন্ত সময় নিয়ে টিভির সামনে বসবেন না। অযথা টিভি চালিয়ে রাখবেন না। কোন অনুষ্ঠান কতক্ষণ দেখবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন।

> একেবারে সামনে বসে টিভি দেখবেন না। অন্তত ছয় ফুট দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখুন। এতে আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে। সেইসাথে টিভির প্রতি আসক্তি কমবে, বাঁচবে আপনার সময়।

> টিভিতে দেখা ভায়োলেন্স হিংসা সন্ত্রাস চক্রান্ত ষড়যন্ত্র পরকীয়া ইত্যাদি বাস্তব জীবনে অবচেতনভাবে প্রলুব্ধ করে এসব ঘটনায় জড়িয়ে পড়তে। ফলে সৃষ্টি হয় টেনশন হতাশা আসক্তি আর অন্তর্দ্বন্দ্ব। টিভি সিরিয়ালে আসক্তি পারিবারিক ও মানসিক প্রশান্তি নষ্ট করে। তাই টিভি সিরিয়াল দেখা সচেতনভাবে এড়িয়ে চলুন।

> প্রামাণ্য, শিক্ষামূলক, ভ্রমণ-বিষয়ক ও উৎসাহব্যঞ্জক অনুষ্ঠানগুলোই দেখার জন্যে নির্বাচন করুন।

> একই খবর বার বার একাধিক চ্যানেলে দেখা থেকে বিরত থাকুন।

> ট্রেন্ডি হতে গিয়ে বা আড্ডায় অংশ নেয়ার জন্যে ওয়েব সিরিজ, এনিমেশন, বিনোদন ম্যাগাজিনের পাল্লায় পড়বেন না।

> টিভি দেখতে দেখতে খাবেন না। এতে খাবারের স্বাদ কমে যাবে, কিন্তু খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। খাবারের প্রতি মনোযোগ দিন। খেয়ে তৃপ্তি বাড়বে, পুষ্টিও পাবেন।

> শোবার ঘরে টিভি রাখবেন না, ড্রইং রুমে বা এমন স্থানে রাখুন, যাতে একা দেখার সুযোগ না থাকে।

> অন্যান্য চ্যানেলে আরো ভালো প্রোগ্রাম চলছে কিনা তা খুঁজতে ক্রমাগত রিমোট চাপতে থাকবেন না।

> টিভি রুমে গুরুজন অথবা মেহমান কেউ থাকলে সচেতন হোন−আপনি যা আনন্দ নিয়ে দেখছেন, তাতে তিনি বিরক্ত বা বিব্রত হচ্ছেন কিনা।

> অতিথি হয়ে কোথাও গেলে মেজবানের বিনা অনুমতিতে টিভি অন-অফ করা, রিমোট নিজের হাতে রাখা থেকে বিরত থাকুন। অনেকে মিলে টিভি দেখার সময় চ্যানেল পাল্টানোর আগে অন্যদের অনুমতি নিন।

> ছুটির দিনগুলোতে মুভি, সিরিয়াল বা অনলাইনে অলস সময় পার না করে পরিবারকে সময় দিন। সৃজনশীল, আত্ম উন্নয়নমূলক বা সেবা কাজে অংশ নিন।

শিশুদের জন্যে গাইডলাইন

নিচের বর্ণিত গাইডলাইনগুলো আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস প্রণীত শিশুদের জন্য।

> টিভিকে বেবি-সিটার বানাবেন না। সন্তানের সাথে গল্প করুন; মননশীল ও শিক্ষামূলক বই তাকে পড়ে শোনান।

> টিভি স্মার্টফোন ইউটিউব দেখিয়ে শিশুকে খাবার খেতে অভ্যস্ত করাবেন না।

> বয়স ১৮ মাস হওয়ার আগে শিশুকে কোনো ধরনের স্ক্রিনের সামনে নেবেন না।

> ১৮ মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে শুধু শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম দেখাতে পারেন, তা-ও দিনে সর্বোচ্চ একঘণ্টা। এসময় মা-বাবা/ অভিভাবক অবশ্যই সাথে থাকুন।

> ছয় বছরের বেশি বয়সের শিশুদের জন্যে প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার সীমিত রাখুন। স্ক্রিন যেন শিশুর চিন্তাশক্তি, ঘুম, খেলাধুলা ও সুন্দর বিকাশকে ব্যাহত না করে।

সন্তানের টিভি আসক্তি কমাতে

> টিভি দেখার নেশা আপনার থাকলে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনুন। শিশুর সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি করুন। সে-ও যেন বোঝে যে, কোনো প্রিয় অনুষ্ঠান দেখা সহজেই ছেড়ে দেয়া সম্ভব।

> সন্তানকে টিভি দেখতে দিলেও নির্দিষ্ট সময়ের বেশি নয়। নিজেই বেছে দিন এমন কিছু শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান, যা আপনি সন্তানের সঙ্গে বসে দেখতে পারেন।

> বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে শিশুকে ছোটবেলা থেকেই বই উপহার দিন ও পড়তে উৎসাহিত করুন। নিজেও পড়ার সময় বের করুন। প্রয়োজনে একই বই একসঙ্গে (পাঠচক্রে) বসে পড়ুন।

> সন্তানের জন্যে বরাদ্দ সময়ে অন্য কোনো কাজ করবেন না। তার সঙ্গে খেলুন বা তাকে নিয়ে ধারেকাছে (পার্কে/ জাদুঘরে/ মনোরম স্থানে) কোথাও বেড়াতে যান।

> সন্তানকে প্রযুক্তি আসক্তি থেকে মুক্ত করতে বকাঝকা নয়, উদ্বুদ্ধ করুন। আপনিই হোন তার প্রথম ও সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

> বয়স অনুযায়ী সন্তানকে ঘরের কাজে সম্পৃক্ত করুন। ভাইবোনের সাথে সবকিছু শেয়ার করতে শেখান। তাহলে সে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত হবে।

> নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুসারে সন্তানকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিন। নিজেও অনুশীলন করুন।

> সন্তানদের প্রযুক্তি বিষয়ে সঠিক ধারণা দিতে নিজেও প্রযুক্তির ভালো-মন্দ সম্পর্কে ধারণা রাখুন।

> স্মার্ট টিভির রিমোট কন্ট্রোল শিশুর নাগালে রাখবেন না।

> সন্তানকে সৃজনশীল ও সেবামূলক কাজে উৎসাহিত করুন, যাতে স্ক্রিন আসক্ত হওয়ার মতো অবসর তার না থাকে।

> সন্তানকে ভার্চুয়াল গেম খেলতে না দিয়ে মাঠে গিয়ে ঘাম ঝরানোর মতো খেলা দলবদ্ধভাবে খেলতে উৎসাহিত করুন। এতে তার একাকিত্ব কাটবে, অবসাদগ্রস্ততা কমবে, সহনশীলতা এবং সামাজিক যোগাযোগ-দক্ষতা বাড়বে।

> বাসায় স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ কমান। সন্তানের রোল মডেল হতে নিজেও ভার্চুয়াল আসক্তি থেকে দূরে থাকুন।

লেখাটি শহীদ আল বোখারী মহাজাতক- এর লেখা "শুদ্ধাচার" বই থেকে নেওয়া 

এমএম//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি