ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

সৈয়দ হক ছিলেন গানের যাদুকর

প্রকাশিত : ১১:২৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, চিত্রনাট্যকার সব শাখায় ছিল তার সাবলীল পদচারণা। এ জন্য তাকে বলা হয়ে থাকে ‘সব্যসাচী লেখক’। সাহিত্যর আকাশে আলো জ্বালার আগেই তিনি কাজ শুরু করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রে।   

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন একজন আপাদমস্তক চলচ্চিত্রের মানুষ, গানের মানুষ। তার হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র পেয়েছে নতুন ধারা। চিত্রনাট্য লেখার মধ্য দিয়ে তিনি এ জগতে পথ চলা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবির জন্য প্রথম চিত্রনাট্য লিখেন। এরপর মাটির ময়না, ময়নামতি, বড় ভাল লোক ছিল, তোমার আমার ঠিকানা, নতুন দিগন্ত, ক খ গ ঘ ঙ, গেরিলার মতো বিখ্যাত এসব চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন সৈয়দ হক। পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।

চিত্রনাট্য লিখার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। যে গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যদিও তার কখনো ইচ্ছে ছিল না গান লেখার। সময়ের প্রয়োজনে সিনেমার অর্থ বাঁচানোর জন্য হাত দেন গান লেখায়। সেই যে শুরু আর থামেননি। জীবনের শেষ সময়েও তিনি গান লিখে গেছেন।

সৈয়দ হক তখনো বাংলা সাহিত্যর স্থান দখল করেননি। তার আগেই তিনি সিনেমার জন্য কাজ শুরু করেন। তার প্রথম গানটি ছিল ‘সুতরাং’ ছবির জন্য ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে ভালোবাসবে বলে ওগো’। এই গানটি ১৯৬১ সালে ফরাসগঞ্জে একটি মেসে বসে তিনি লিখেন। গানটি গেয়েছিলেন আঞ্জুমান আরা বেগম। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক সত্য সাহা। তারা দুইজনে মিলে গানটি সাজান। এই ছবির চিত্রনাট্য সংলাপ এবং সবগুলো গান তিনি নিজে লিখেন।   

সৈয়দ শামসুল হকের আরেকটি অসামান্য গান হলো ‘যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে, সে কি তুমি নও, ওগো তুমি নও’। ভীষণ জনপ্রিয় এই গানটি সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ছবির জন্য তিনি লিখেন। গানটি গেয়ে ছিলেন ফেরদৌসি রহমান।  

সৈয়দ শামসুল হকের আরেকটি জনপ্রিয় গান হলো ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, রঙ ফুরালেই ঠুস,। অসাধারণ এই গানটির রচয়িতা তিনি। এই গানটি তিনি ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবির জন্য তিনি লিখেছিলেন। এই ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপের সঙ্গে সবগুলো গান তার করা। আলম খানের সুরে গানটি গেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। সব শ্রেণির শ্রোতাদের মুখে মুখে আজও এই গানটি শোনা যায়।  

‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না, তোমার তুলনা’ জনপ্রিয় এই গানটিও লিখেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। ‘আশির্বাদ’ ছবির জন্য আলম খানের সুরে গানটি গেয়ে ছিলেন রুনা লায়লা ও এন্ড্রু কিশোর। দেশীয় চলচ্চিত্রের সেরা দশটি প্রেমের গানের মধ্যে এই গানটিকেও ভাবা হয়। ওই সময় এই গানটি সব শ্র্রেণির মানুষের মুখে মুখে ছিল।    

পরিচালক কাজী জহিরের গ্রীন রোডের বাসায় বসে তিনি লিখেছিলেন ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়, মিছে তারে শিকল দিলাম রাঙা দুটি পায়’। কালজয়ী এ গানটির সুর ও কণ্ঠ দিয়েছিলেন বশীর আহমেদ।

এরপর বহু বছর আর কোনো গান লেখেননি সৈয়দ হক। তিনি লিখেছেন, ‘মাটির ঘরে চাঁদ নেমেছে’ শিরোনামের একটি গান, লিখেছিলেন ‘বাসর হবে মাটির ঘরে’ ছবির জন্য। আলাউদ্দিন আলীর সুর-সংগীতে এতে কণ্ঠ দেন রুনা লায়লা ও সুবীর নন্দী।  

এছাড়া এক সময় মানুষের মুখে মুখে ছিল ‘এমন মজা হয় না, গায়ে সোনার গয়না, বুবু মনির বিয়ে হবে বাজবে কত বাজনা’। দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকা কালজয়ী আরও অনেক গানের মধ্যে রয়েছে একই অঙ্গে এত রূপ- চলচ্চিত্রের ‘জানি না সে হৃদয়ে কখন এসেছে, প্রাণের মাঝে দোলা দিয়েছে’। ফেরদৌসি রহমান ও মোস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে নদী বাঁকা জানি, চাঁদ বাঁকা জানি, তাহার চেয়ে আরও বাঁকা তোমার ছল না’। গানটিও বেশ জনপ্রিয় ছিল। আরও বেশ কিছু গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আমি চক্ষু দিয়া দেখতে ছিলাম জগৎ রঙ্গিলা, চাম্বেলিরও তেল দিয়া কেশ বান্ধিয়া, পাগল পাগল মানুষগুলো পাগল সারা দুনিয়া, কেহ পাগল রূপ দেখিয়া, কেহ পাগল শুনিয়া। এই যে আকাশ, এই যে বাতাস। ‘তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া, রাস্তা দিয়া হাঁইটা চলে রাস্তা হারাইয়া’।

সৈয়দ হক শুধু গান লিখা নয় তিনি একজন সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে নির্মাণ করেছিলেন চলচ্চিত্র। তার পরিচালনায় ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’ নামের একটি উর্দু সিনেমা তৈরি করে পরিচালকের খাতায়ও নাম লিখেছিলেন সৈয়দ হক।  

সৈয়দ হকের গানের সব চেয়ে বেশি সুর করেছিলেন প্রয়াত সত্য সাহা। এ ছাড়া আলম খান, আবদুল আহাদ, সমর দাস, বশীর আহমদ ও আলাউদ্দিন আলী তার লেখা গানে সুর করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সুরকার আলাউদ্দিন আলী বলেন, আসলে তিনি ছিলেন একজন আসাধারন মানুষ। তার সর্বশেষ একটি গানের সুর আমি করেছিলাম। তিনি অসম্ভব ভালো একজন গীতিকার। এ বিষয়ে বলার আর কিছু নেই। তার মতো এত গুণের অধিকারী একজন মানুষ আর পাওয়া যাবে না।    

এসি/এসএইচ

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি