ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: সর্তক হওয়ার এখনই সময়

মীর ইমরান আলী

প্রকাশিত : ২০:০৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রত্যেকটি খাত। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতাও ব্যাহত হয়েছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে বহু জীবন। কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউবা ব্যবসা, কেউবা স্বজন। এ এক ভীতিকর অবস্থা। 

বর্তমানে করোনার প্রথম ঢেউ শেষে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। আমরা কমবেশি সবাই জানি যে, কম তাপমাত্রায় ভাইরাস দীর্ঘদিন ধরে বাঁচতে পারে। এ কারণেই সবার আশঙ্কা বাংলাদেশের আবহাওয়া এখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য উপযুক্ত। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই সংক্রমণের নতুন রোগী শনাক্তের হার হু হু করে বাড়ছে। 

গত ১ নভেম্বর দেশে রোগী শনাক্ত হয় এক হাজার ৫৬৮ জন। ২ নভেম্বরে এক হাজার ৭৩৬ জন, ৩ নভেম্বর এক হাজার ৬৫৯ জন, ৪ নভেম্বর এক হাজার ৫১৭ জন আর ৫ নভেম্বর এক হাজার ৮৪২ জন। এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অর্থাৎ- গত এক মাসের বেশি সময় থেকেই শনাক্তের হার ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে গত ২ নভেম্বর রোগী শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮টি ল্যাবে ১৬ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৬ হাজার ৮৩৮টি। এর মধ্যে দুই হাজার ৩১৬ জনের দেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ৭১ হাজার ৯৩৯ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৫ জনের। যা নিয়ে করোনায় এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৪৮ জনে।

এখন উদ্বেগের বিষয় হলো- দেশে গত আগষ্টে যখন সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে তখন থেকেই মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে উদাসীনতা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতের মধ্যে এই উদাসীনতাই কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে, শুরু হতে পারে দ্বিতীয় ঢেউ।

এই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে সম্প্রতি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় করোনা মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে সরকার। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে তা মোকাবিলা করা সম্ভাব না, যদি আমরা স্বস্থ্যবিধি মেনে না চলি। 

শীতকালে সাধারণত জ্বর, হাঁচি, কাশি, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন অনেকে। অন্যদিকে করোনা ভাইরাস শীতল আবহাওয়ায় দীর্ঘকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারে। তাই এই সময় সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটা উত্থান দেখা দিতে পারে। দেশের স্ব্যস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও আশঙ্কা করছেন- স্ব্যস্থ্যবিধি না মানলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এ মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। 

এদিকে, দেশে স্ব্যস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না কড়াভাবে। অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব, মানুষ গাদাগাদি করে বাসে ভ্রমণ করছেন। করোনা মহামারীর শুরু থেকেই ঢাকায় সংক্রমণ বেশি। এখনও সে ধারা অব্যাহত আছে। গত এক মাসে নতুন রোগী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি রাজধানীতে। অথচ রাস্তা-ঘাট, হাটবাজার ও জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে মানুষের চলাফেরা অনেকটাই করোনা-পৃর্ব স্বাভাবিক সময়ের মতোই। 

সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে একটা ভয়ের কারণ রয়েছে। একটা বিষয়ে খুব পরিষ্কার থাকা দরকার যে, করোনার টিকা আগামী কয়েকমাসে বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী আসার সম্ভাবনা খুবই কম। এ অবস্থায় যদি যথাযথ স্ব্যস্থবিধি অনুসরণ না করা হয়, তবে এ সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আরও বাড়বে এবং তার বিরুপ প্রভাবও হবে বহুমুখী। 

বাংলাদেশের বহু নাগরিক করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লাগা দেশগুলোতে বাস করে। এর আগেও তাদের মাধ্যেমে রোগটি মহামারী আকার নিয়েছিলো। এখনও আক্রান্তদের অসাবধানতামূলক আচরণ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণে। তাই প্রবাসীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। 

তবে সবচেয়ে বড় সংকট হলো- ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। এর মধ্যেই বিদেশ থেকে মানুষ আসছে, অনেকে আবার বাইরে যাচ্ছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধেই করোনা ভাইরাস পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিদেশ থেকে যারাই দেশে আসবে তাদেরেই করোনা ভাইরাস টেস্টের পর নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক। 

বিমানবন্দর, স্থলবন্দর বা সমুদ্রবন্দর- যে পথেই দেশে আসুক, সব জায়গায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব জায়গায় কোয়ারেন্টাইনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। 

আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্ত মানা হলে এবং দেশের ভিতরেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। ভুললে চলবে না যে, করোনা বিস্তার লাভ করেছিলো প্রবাসীদের দ্বারা এবং মানুষের অবহেলার কারণে। আমরা করোনায় যে পরিমাণ মানুষ হারিয়েছি, ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি- তা খুবই দুঃখজনক। আমরা এমন কিছু মানুষ হারিয়েছি, যাদের শূন্যতা পূরণের নয়। 

এহেন অবস্থায় বাংলাদেশেও শীত পড়ে গেলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লাগতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। 

চিকিৎসকদের অভিমত- রোগী একটু বাড়তে শুরু করেছে। মাস্ক পরাসহ সামাজিক দৃরত্ব মেনে চলা জরুরি। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিকভাবে মেনে চললে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা আমাদের জন্য সহজ হবে। এজন্য সরকারের সাথে জনগণকেও করোনা প্রতিরোধ ভূমিকা রাখতে হবে। নতুবা আবার মহামারী দেখা দেবে। যেটা মোকাবিলা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের বিকল্প নাই।

লেখক- শিক্ষার্থী, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি