ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪

গায়ে ভারত ও পাকিস্তান আর মাথায় সৌদি আরব

শামীম আজাদ

প্রকাশিত : ২০:১২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২০:৩২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে কবি শামীম আজাদ

স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে কবি শামীম আজাদ

একেবারে শিশুকাল থেকেই খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনার সংগে নিজেদের সংস্কৃতি, রুচি এমনকি দেশপ্রেমটাও ধর্মের মত গুরুত্ব দিয়ে শেখাতে হবে। নিজ সন্তানের উপলব্ধির দ্বার খোলা থাকবে তবেই।

দেশকে ঘিরে নিজ সততা নিজের মায়ের মতই তখন মাথায় থাকবে। না হলে একদিন তারা যখন বড় হবে তখন নিজ সংস্কৃতি বিচ্যুত হবার উপলব্ধিতে চরম বঞ্চনায় পাগল হয়ে উঠবে। এবং তখন পরিবারকে দায়ী করে বাবা -মা’কে যে নিন্দা করবে না তা কে বলতে পারে?

আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে যখন ঈদ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিয়েতে দেখি মন খারাপ হয়ে যায়। তাদের গায়ে ভারত ও পাকিস্তান আর মাথায় সৌদি আরব। আর ছেলেরা এমন কিম্ভূত আচকান পরে কোমরে তলোয়ার লট্‌কে বিয়ের আসরে বসছে যেনো বিয়েতো নয় নারী জয়ের যুদ্ধে এসেছে!

যাহোক তবু বৈশাখ, ফাল্গুনে, ফেব্রুয়ারীতে এখনো দেখা যায় দেশের তাঁতের শাড়ি। আচ্ছা এই যে এরা দেশের কাপড়, মায়ের দেয়া অপেক্ষাকৃত কম দামী কাপড় পরেছে তাতে তাদের এক আউন্স কম সুন্দর লাগে? তাহলে কেনরে বাচ্চারা, তোরা বিয়ের সময়, ঈদের সময় এমন ফরেনার হয়ে যাস? এ যদি হয় হিন্দি সিরিয়াল দেখার জন্য তাহলে আইন করে আমাদের তিন বারো ছত্রিশটা টিভিতে ‘চরিত্রের’ কারণ ছাড়া বিদেশি সাজ পোশাক একদম বন্ধ করে দেবার সুপারিশ জানাই।

আমার জীবনের খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় বিচিত্রার শাহাদত চৌধুরির প্রণোদনায় পাগলের মত দিন রাত মহানন্দে এই দেশী ফ্যশানের অন্বেষনে ও ভাব নির্মাণে ব্যয় করেছি। ১৯৯০ এ আমি পরিযায়ী হবার আগে তাঁতী, নির্মাতা, ভোক্তা, ডিজাইনার সবার মধ্যে কি এক জোয়ার রেখে এসেছি দেশে! ফ্যাশন জগতের মৌল ধাতুই 'দেশী' হয়ে গেছিল! হায়রে।

আর এখন মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের শিল্প বাঁচাতে, দেশী রুচি ও লাইফ স্টাইল গড়তে দেশী ফ্যাশন দেশী ফ্যাশন বলে যে প্রাণপাত করেছিলাম তা জলে গেছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আগ্রাসনের সময় আমরা খদ্দরের বিছানা চাদর, বালিশ কভার, জামা, শাড়ি, ওড়না কি না পরেছি- আদমজী, বাওয়ানী কেঁদে গেছে। আর আমাদের অর্থের ও স্বাশ্রয় হয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা দেশী বানিজ্যে আহার জুটেছে আমাদের তাঁতীদের, বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হয়েছেন লাভবান।

কিন্তু মানুষ মারার মত সংস্কৃতি মারা অত সহজ কাজ না। আবারো বলি দায়িত্বটা প্রাথমিক ভাবে পরিবারের। তারপর প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার। আর এ ব্যাপারে সব অনুষ্ঠান ও মঞ্চে ম্যাজিক আনতে পারেন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আইডলরা। কিন্তু আমাদের চিত্র নায়িকারা ছবির মহরতে পরেন দশ মন ওজনের লাহেঙ্গা। বলুন কোথায় যাই?

তবে দু:খের কথা কি আর বলব, এসব নিয়ে আমার লেখালেখির বহু দশক হয়ে গেলেও, সহস্র ফ্যাশন শো হয়ে গেলেও আজও আমাদের জাতীয় পোশাক নিশ্চিত হল না!

ভাইরে, নিজের গরমে ঘামুন। নিজের শ্রমে সাজুন। নিজের কর্মে কৌশলী হোন। আপনাকে অপরূপ লাগবে, শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসবে, ভালবেসে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করবে। সব চেয়ে বড় কথা নিজের দেশের টাকা দেশেই থাকবে।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

এসি

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি