ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বমঞ্চে পতাকা উড়াতে চায় ৫ খুদে বিজ্ঞানী, বাধ সেধেছে টাকা 

মাহতাব মিনহাজ

প্রকাশিত : ১৩:৫০, ২৭ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ১৪:২৮, ২৭ মার্চ ২০২৪

মাহাদী বিন ফেরদাউস, নূর আহমেদ, ত্বসীন ইলাহি, নাদিম শাহরিয়ার ও সঞ্জীব হোসেন বিশ্বমঞ্চে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন দেশের এই পাঁচ কিশোর বিজ্ঞানী। 

যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ’-এ ‘স্মার্ট রোড সেইফটি বিস্ট’ প্রজেক্ট নিয়ে ৫ জনের এই দল জয়ী হয় প্রথম তিন ধাপে। ৫০ দেশকে হারিয়ে শীর্ষ দশে জায়গা করে তারা।

তিন ধাপ জয়ের পর ছোটদের এই বড় বিজয়ের চূড়ায় উঠেছে তাদের সংগঠন ‘নট এ বোরিং টিম’। এবার অপেক্ষা লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর।

২২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টন স্পেস সেন্টারে হবে চূড়ান্ত লড়াই। তবে এমন আনন্দসংবাদের সাথে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এই কিশোরদের কপালে। আর্থিক সংগতি নেই সবার। তাই ৫ জনের দলের পরিবর্তে দুজন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। 

আমন্ত্রণপত্রে বলা আছে সামিটের দুই দিন আগে সেখানে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু বেশি দিন বাকি না থাকলেও সেখানে যাওয়ার জন্য যে টাকার প্রয়োজন সেটা নেই তাদের। এছাড়াও রয়েছে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা।

বিষয়টি নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের কথা হয় 'নট এ বোরিং টিম' সংগঠনের সদস্য ত্বসীন ইলাহি'র সঙ্গে।

সে জানায়, আর্থিক সংকটের কারণে এরইমধ্যে তাদের তিন জন সদস্য পিছিয়ে পড়েছে। এখন সামিটে যাবে ত্বসীন ইলাহি, মাহদী বিন ফেরদাউস এবং মেন্টর মো. আবু ওবায়দা। এই মুহূর্তে তাদের প্রয়োজন মাথা পিছু ৪ লাখ টাকা। যদি রাষ্ট্র তাদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাদের বিশ্ব জয়ের যে স্বপ্ন সেটা পূরণ হবে।  

পৃষ্ঠপোষকতা পেতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসক সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও সেটা আশ্বাসই রয়ে গেছে।

পরিবারের সদস্যরাও চিন্তিত। সন্তানদের এই বিশ্ব জয়যাত্রায় কিভাবে সহায়তা করবেন তারা?

ত্বসীন আরও জানায়, এরই মধ্যে তারা আইসিটি মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করেছে।

উল্লেখ্য, ত্বসীনের নেতৃত্বেই মাহদী, নাদিম, সুনজিম, নূর সম্মিলিতভাবে শুরু করে নাসা জয়ের পরিকল্পনা। চলতি বছরের জানুয়ারির ১৩ তারিখে প্রকল্প সাবমিশন করে তারা। প্রকল্প পরিকল্পনা গৃহীত হলে শুরু হয় পরিবেশের মানবিক বিপর্যয় এবং শক্তি সংরক্ষণ মিশন- ‘স্মার্ট রোড সেফটি বিস্ট’ ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশন প্রস্তুতের কাজ। সঙ্গে চলে ব্যবসায় মডেল তৈরি। এসময় তারা সহযোগিতা নেয় ডুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর। ডিভাইসের প্রটোটাইপ দেখিয়ে তৃতীয় ধাপও উত্তীর্ণ হয় তারা। তবে পথটা এতোটা মসৃন ছিলো না। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তাদের প্রস্তুতি শুরু হয়।  সবাই নাম, ডিটেইলস দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে। তারপর লীন কেনভাস রাউন্ড। এই রাউন্ড এ জিতাটা অবিশ্বাস্য ছিল। এর মাধ্যমেই গ্লোবাল ফাইনালিস্ট হবার স্বপ্ন বুনে সবার মনে।

বিভিন্ন সময়ে দেশে অনুষ্ঠিত অলিম্পিয়াড ও রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতো এই কিশোরেরা। সেসব প্রতিযোগিতায় পরিচয়ের সূত্র ধরে গেলো বছরে সেপ্টেম্বরে মেসেঞ্জারে দল গঠন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ ত্ব-সীন ইলাহী। এরপর সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে নভেম্বরে ‘নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ’- এ আবেদন করে ‘নট এ বোরিং টিম’।

মাত্র ১২ লাখ টাকার অভাবে কি থেমে যাবে খুদে এই বিজ্ঞানীদের স্বপ্নযাত্রা? যেখানে ওদের এখন প্রতিযোগিতা নিয়ে পরিকল্পনা করার সময় সেখানে ওরা ছুটছে টাকা যোগাড়ের সন্ধানে। সমাজে কি এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নেই, যারা বিশ্বমঞ্চে লাল সবুজের পতাকা ওড়াতে পাশে থাকতে পারে এই কিশোরদের? 

জীবন ও শক্তি বাঁচাতে স্মার্ট রোড সেইফটি বিস্ট

সাতটি কমপোন্টেন্ট এর সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘স্মার্ট রোড সেইফটি বিস্ট’। গাড়ির বিভিন্ন অংশে স্থাপন করা হবে বিশেষ নকশার মাদারবোর্ড, ভাইব্রেটর, রিডার সেন্সর, টেকোমিটার, ক্যামেরা এবং অ্যাকসিডেন্ট ডিটেক্টর। আর চালকের মুখোমুখি থাকবে প্রতিটি কম্পোনেন্টের সংযুক্ত ডিসপ্লে। মাদারবোর্ড ও ডিসপ্লেটি ১০ ইঞ্চির মতো বর্গাকার ও কিছুটা পুরু। বাকি ডিভাইসগুলো ৭-৮ সেমি লম্বা ও ৫-৬ সেন্টিমিটার পুরু। ক্যামেরাটি কাজ করে ওয়েব ক্যামেরার মতো। আর গাড়ির ড্যাশ বোর্ডে লাগানো ডিসপ্লেতে সংযুক্ত আছে ভয়েস সেন্সর যা প্রয়োজনে চালককে সময়ে সময়ে সতর্ক করবে। পাশাপাশি এআই রোবট হিসেবেও আবির্ভূত হবে। অর্থাৎ নিজে চালালেও ড্রাইভারলেস কারের সুবিধা মিলবে স্মার্ট রোড সেইফটি বিস্ট গ্যাজেট গিয়ারে। আবার মোবাইলে এর অ্যাপ ডাউনলোড করে নিলে গাড়ির মালিকও যে কোনো স্থান থেকে গাড়ি ও গাড়ির চালককে মনিটর করতে পারবেন। চালকের অসতর্কতা মূলক আচরণ বিশ্লেষণ করে ভুল ধরিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এর এআই বট। পুরো গিয়ারটি শুরুতে ৩০-৩৫ হাজার টাকার মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন খুদে উদ্ভাবকেরা। তাদের ভাষ্য, এই খরচেই অটোনোমাস গাড়ির সুবিধা মিলবে বিদ্যমান গাড়িতে। রোধ করা যাবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা। 

এমএম//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি