ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় আসা কে এই তনিমা?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৬:২০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০

প্রথম বাংলাদেশী নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী তনিমা তাসনিম অনন্যা

প্রথম বাংলাদেশী নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী তনিমা তাসনিম অনন্যা

সায়েন্স নিউজের সেরা ১০ তরুণ বিজ্ঞানীর তালিকায় নাম লিখিয়ে আলোচনায় চলে এসেছেন তনিমা তাসনিম অনন্যা। সায়েন্স নিউজ প্রতি বছর ৪০ বছরের কম বয়সী শীর্ষ বিজ্ঞানীদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। সেই তালিকায় নাম আসায় সকলের মধ্যেই কৌতুহল তৈরি হয়েছে তনিমাকে নিয়ে। কে এই তনিমা? কি তার বিস্তারিত পরিচয়?

তনিমা বর্তমানে একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমুথ কলেজে একজন পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছেন। কৃষ্ণগহ্বরের পূর্ণাঙ্গ চিত্র এঁকে তিনি পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। 

এই তনিমার শৈশব কেটেছে রাজধানী ঢাকায়। মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে 'ও' এবং 'এ' লেভেল পাস করেন তনিমা। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে 'ও' লেভেলে ফিজিক্স, কম্পিউটার স্ট্যাডিজ এবং ছয়টি সাবজেক্টের মার্কস যোগ করে সর্বোচ্চ মার্কস পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন তনিমা। এছাড়াও ‘এ’ লেভেলে পেয়েছিলেন ছয়টি এ।

সায়েন্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তনিমা জানান- তার মধ্যে মহাকাশবিদ্যা নিয়ে গবেষণার বীজ রোপন করেন তার মা। ছোটবেলায় মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মা-ই তাকে গল্প শোনান কিভাবে পাথফাইন্ডার মঙ্গলে যাত্রা করেছে। মঙ্গলের মাটি নিয়ে গবেষণা করেছে। আর এসবই তার মধ্যে মহাকাশ নিয়ে কাজ করতে অন্যরকম শিহরণ জাগিয়ে দেয়।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে মহাকাশ নিয়ে গবেষণার সুযোগ নেই, তাই তিনি এ লেভেল শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় ব্রেন মাউর কলেজে ফিজিক্স ও অ্যাস্ট্রোনমি পড়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। সেখানে দুই বছর পড়ার পর নাসার স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইন্সটিটিউটে একটি অত্যন্ত কম্পিটেটিভ ইন্টার্নশিপের জন্য সিলেক্ট হন। সেখানে তিনি অরিয়ন নেবুলাতে স্টার ফরমেশন নিয়ে রিসার্চ করেন।

নাসায় ইন্টার্নশিপ শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজে যোগ দেন তনিমা। এক বছরের মধ্যেই ব্যাচেলর ডিগ্রীর ফাইনাল ইয়ারের কোর্সগুলো নেয়ার জন্য। ক্যামব্রিজ শেষ করে তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে ইউরোপের নিউক্লিয়ার গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু সিইআরএন-এ একজন সামার স্টুডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। 

এরপর ডি. এলান ব্রুমলি গ্রাজুয়েট ফেলোশিপ নিয়ে ২০১৭ সালে ভীর্ত হন আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৯ সালে তিনি সেখান থেকে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। গবেষণার মাধ্যমে তিনি অন্ধকারে থাকা ব্লাকহোলকে আলোয় নিয়ে আসেন। তিনিই প্রথম ব্লাকহোলের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র আঁকেন। তাতে তিনি দেখিয়েছেন- কীভাবে কৃষ্ণগহ্বরগুলো বেড়ে ওঠে এবং পরিবেশে এটা কী প্রভাব রাখে। যা তিনি সম্পন্ন করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। 

তনিমা সায়েন্স নিউজকে জানান- বাঙালি মেয়ে হিসেবে পড়াশোনার জন্য সূদূর আমেরিকায় পাড়ি জমানো তার ক্ষেত্রে মোটেই সহজ ছিল না। তার ওপর দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতিগত বিস্তর ফারাক ছিল। এসব সমস্যা দূর করতে তনিমা ভর্তি হন ব্রেন মাউর কলেজে, যেখানে শুধু মেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হয়। এই কলেজটি অ্যালকোহলের সীমিত ব্যবহারের জন্য পরিচিত। 

তনিমা এই কলেজটি বেছে নেন তার বাবা-মাকে শুধু এটা বুঝানোর জন্য যে- তার মেয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছে মদের আড্ডায় যোগ দেওয়ার জন্য নয়! 

সত্যিকার অর্থেই তনিমা শুধু জোতির্বিজ্ঞান পড়াশোনার দিকেই তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন। তবে তিনি ওই কলেজের অন্য মেয়েদের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন প্রভূত সহযোগিতা। যা তাকে অবাক করেছে। পড়াশোনার পরবর্তীতে তিনি যদিও কিছু পার্টিতে অংশ নেন, তবে মদ তিনি ছুয়েও দেখেন নি।

সামাজিক সচেতনতায় তনিমা
মনে হতে পারে যে, এতো গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে একটা মেয়ে জনকল্যাণে আবার কাজ করবে কখন? আসলে ব্যাপারটি তা নয়। ইচ্ছে থাকলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও অপরের সহযোগিতায় কাজ করা যায়। 

গবেষণার পাশাপাশি তিনি উইজটেম (Wi-STEM) নামে বিজ্ঞানমনষ্ক তরুণীদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। যেখানে তিনি নারীদের বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহ ও গাইড প্রদান করে থাকেন। এছাড়া তিনিসহ আরও চার জন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করা বাংলাদেশী বিজ্ঞানী মিলে ২০ জন হাইস্কুলে পড়া ছাত্রীকে সহযোগিতা ও পথপ্রদর্শন করেছেন বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যাপারে।

নিজের লক্ষ্যপানে অবিচল থাকা তনিমা তাসনিম অনন্যার জন্ম নরসিংদী জেলায়। তার বাবা এম এ কাইয়ুম বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাবেক কমিশনার। মা শামিম আরা বেগম গৃহিণী। বিজ্ঞানমনস্ক এই নারীই আজকের তনিমাকে গড়ে তোলার মূল কারিগর।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি