ক্রীড়ানুরাগী শেখ কামাল
প্রকাশিত : ০৮:৩৭, ৫ আগস্ট ২০২১
![](https://www.ekushey-tv.com/media/imgAll/2020June/op-3-2008050433-2108050237.jpeg)
বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের পথিকৃৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। তার প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্র যা এখন আবাহনী লিমিটেড নামে দেশ-বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট শেখ কামাল জন্মগ্রহণ করেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শহীদ শেখ কামাল ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই শেখ কামাল ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন। শাহীন স্কুলে পড়ার সময় থেকেই নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল খেলতেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে শেখ কামাল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নয়, ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। বন্ধুদের নিয়ে ধানমন্ডির সাতমসজিদ এলাকায় গড়ে তোলেন ‘আবাহনী ক্রীড়াচক্র’। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় উৎসাহ ছিল তার।
১৯৭২ সালে ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাব নাম পরিবর্তন করে উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা করেন শেখ কামাল।
ক্লাব ভবন থেকে শুরু করে সব কিছুতেই আধুনিকতার নিদর্শন নিয়ে এসেছিলেন শেখ কামাল। বিশেষ করে ফুটবল খেলায় তিনি গোটা উপমহাদেশেই পশ্চিমা স্টাইলে বিপ্লব এনেছিলেন।
উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশি কোচ ছিল না। ঠিক তখন ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশি কোচ বিল হার্টকে এনে ফুটবলপ্রেমীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শেখ কামাল!
১৯৭৪ সালে আবাহনী যখন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ‘আইএফএ’ শিল্ড টুর্নামেন্ট খেলতে যায়, তখন আবাহনীর বিদেশি কোচ আর পশ্চিমা বেশভুষা দেখে সেখানকার কর্মকর্তা আর সমর্থকদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল।
এখন উপমহাদেশে জাতীয় দল থেকে শুরু করে ক্লাব পর্যায়ে বিদেশি কোচের ছড়াছড়ি। অথচ শেখ কামাল তা করেছিলেন সেই ১৯৭৩ সালে।
আমাদের দেশের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মান উন্নয়নে শেখ কামাল অক্লান্ত শ্রম দিয়েছিলেন। ক্রীড়া জগতে তিনি রেখেছেন অপরিসীম অবদান। পাশাপাশি নতুন খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলেছিলেন।
বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের প্রতীক শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী, আদর্শবাদী কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শেখ কামাল স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নেন। পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি একেবারেই প্রথম সারির সংগঠক ও উদ্যোক্তা ছিলেন।
শেখ কামাল ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
শেখ কামাল অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে একটি নাটক পশ্চিম বাংলার কলকাতায় মঞ্চস্থ হয়েছে। এদিকে নাট্য অভিনয় ছাড়া তিনি ভালো সেতারবাদক ছিলেন। ছায়ানটে সেতারবাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বলিষ্ঠ সংগঠক শেখ কামাল বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। যুদ্ধকালে তিনি লে. পদে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে এসে শেখ কামাল পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
এসএ/
আরও পড়ুন