ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

আ.ন.ম বজলুর রশীদের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১২:০৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

আ.ন.ম বজলুর রশীদ শিক্ষা, সাহিত্য এবং নাটকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। তার মধ্যে তমঘা-ই-ইমতিয়াজ এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অন্যতম। এই বিখ্যাত ব্যক্তির ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৮৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আ.ন.ম বজলুর রশীদের পুরো নাম আবু নয়ীম মুহম্মদ বজলুর রশীদ। ১৯১১ সালের ৮ মে ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম হারুনুর রশীদ আর মায়ের নাম নছিমুননেসা। তাঁর বাবা নদীয়া জেলায় তৃতীয় মুসলিম গ্র্যাজুয়েট এবং পেশায় ছিলেন আইনজীবী। 

বজলুর রশীদ ফরিদপুর জি.টি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তারপর তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২৮), রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ (১৯৩১) ও বিএ (১৯৩৩) এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি (১৯৩৮) পাস করেন। দীর্ঘকাল পর প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ (১৯৫৪) ডিগ্রি লাভ করেন।

বজলুর রশীদ ১৯৩৪ সালে ঢাকা সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিভিন্ন সরকারি স্কুলে চাকরি করার পর ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং এখান থেকেই ১৯৭২ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৩-৭৫) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯৭৫-৮০) ইংরেজি বিভাগে খন্ডকালীন অধ্যাপকও ছিলেন।

আ.ন.ম বজলুর রশীদ ছিলেন কবি জসীমউদ্‌দীন প্রভাবিত। জন্মসূত্রে তিনি জসীমউদ্‌দীনের প্রতিবেশী। তাঁর চার ক্লাস উপরে পড়তেন কবি জসীমউদ্‌দীন। তিনি সে সময়ে বজলুর রশীদের কবিতা সংশোধন করে দিতেন। সেই বিচারে বলা যায় জসীমউদ্‌দীন তাঁর কাব্যগুরু।

বিভিন্ন আঙ্গিকে সাহিত্যচর্চা করতেন বজলুর রশীদ। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: কাব্য পান্থবীণা (১৯৪৭), মরুসূর্য (১৯৬০), শীতে বসন্তে (১৯৬৭), রং ও রেখা (১৯৬৯), এক ঝাঁক পাখি (১৯৬৯), মৌসুমী মন (১৯৭০), মেঘ বেহাগ (১৯৭১); নাটক ঝড়ের পাখি (১৯৫৯), উত্তরফাল্গুনী (১৯৬৪), শিলা ও শৈলী (১৯৬৭), ধানকমল (১৯৬৯), রূপান্তর (১৯৭০); ভ্রমণকাহিনী পথ বেঁধে দিল (১৯৬০), দুই সাগরের দেশে (১৯৬৭), পথ ও পৃথিবী (১৯৬৭), ওগো বিদেশিনী; উপন্যাস মনে-মনান্তরে (১৯৬২), নীল দিগন্ত (১৯৬৭); প্রবন্ধ আমাদের নবী (১৯৪৬), জীবন বিচিত্রা (১৯৬২), জীবনবাদী রবীন্দ্রনাথ (১৯৭২) প্রভৃতি। বাংলাদেশের সমাজ ও প্রকৃতি তাঁর রচনার প্রধান বিষয় ছিল।

আ.ন.ম বজলুর রশীদ দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে প্রবন্ধ লিখে ‘ভগবতীচরণ স্মৃতিপদক’ লাভ করেন। এটিই তার সাহিত্যের প্রথম স্বীকৃতি। তখন থেকেই কবিতা লেখার প্রতি আকৃষ্ট হন। কী কবিতা, কী নাটক, কী উপন্যাস, কী গীতরচনা, কী প্রবন্ধ, কী অনুবাদ- সকল ক্ষেত্রেই তিনি সৃজন-মননের ছাপ রেখেছেন। 

বাংলাদেশের সাহিত্যের সূচনালগ্নে অসামান্য অবদান রেখেছেন আ.ন.ম বজলুর রশীদ। নাট্যকার হিসেবে তাঁর স্বীকৃতি বেশি জুটলেও তিনি কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষত ষাটের দশকে লেখা তাঁর নাটকগুলো যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিল তখন। কারণ পাকিস্তান শাসনামলে নাটকের ওপর যে ধরনের বাধা-নিষেধ ছিল, সেসব উপেক্ষা করেই আ.ন.ম বজলুর রশীদ নাট্যচর্চা করেছেন। শিক্ষাবিদ হিসেবেও তিনি দেশের শিক্ষাবিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। কেবল শিক্ষকতা নয়, শিার্থীদের পাঠচাহিদা পূরণে তিনি পাঠ্যপুস্তক রচনায়ও আত্মনিয়োগ করেছেন।

আ.ন.ম বজলুর রশীদ তাঁর সাহিত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ভগবতীচরণ স্মৃতিপদক ছাড়াও পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ১৯৬৯ সালে ‘তমঘায়ে ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেন। এছাড়া ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ঢাকা বেতারের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কারও লাভ করেন তিনি।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি