ঢাকা, বুধবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৫

আবারও প্রাঞ্জলিত হোক গোটা বিশ্ব

সামিন ইয়াসার আজহা

প্রকাশিত : ১৭:৪৭, ৬ মে ২০২০ | আপডেট: ১৮:০৩, ৬ মে ২০২০

Ekushey Television Ltd.

চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হওয়া পৃথিবীব্যাপী এ শতকের এক ভায়াবহ মহাপ্রলয়ের নাম করোনা ভাইরাস। যার লক্ষণ বড় কোন অঙ্গহানি বা মারাত্মক রক্তখরণ নয়। সাধারণ জর, সর্দি, গলা ব্যাথা এমনটাই এর বাহক। কিন্তু অস্ত্র বাণিজ্যের এ মহাযজ্ঞে এসব নিয়েওবা এত মাথা ব্যাথার কিবা আছে! এমনটাই হয়তো ভেবেছেন জাগতিক এ সময়ের বিশ্বনেতা থেকে শুরু করে আমজনতা পর্যন্ত। তবে আজ মহাপ্রলয় আর সময়ের মহা দুর্যোগ সৃষ্টি করা ক্ষুদ্র এই ভাইরাসটি আমাদের স্বরণ করিয়ে দিয়েছে আমরা কতটা অসহায়। 

শহর-নগর, পথে-প্রান্তরে আজ লাশের সারি। সাধারণরা তাকিয়ে আমলার দিকে, আমলা তাকিয়ে রাষ্ট্রনায়কের দিকে। দেশে দেশে রাষ্ট্রনায়করা অসহায় হয়ে দীর্ঘশ্বাসে আজ চেয়ে আছে আকাশের দিকে। জাত, ধর্ম, বর্ণ, উঁচু, নিচুর ভেদাভেদ ভুলে আজ সবার একই প্রশ্ন, এ যাত্রা কি শুধুই লাশের! সকলের চোখেমুখে উত্তর খোঁজে এর শেষ কোথায়! দেশে দেশে করোনার কাছে পরাজয় স্বীকার করছে রাজা মহারাজারাও।

সামিন ইয়াসার আজহা

বিশেষজ্ঞদের দাবী উহানের সি ফুড মার্কেট থেকে কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, সাপ, বাদুড়সহ বিভিন্ন ধরনের জীবন্ত প্রাণী হতে ভাইরাসটির উদ্ভব। মূলত ভাইরাসটি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। তবে মানুষের মাঝে ভাইরাসটির প্রথম আগমন ঘটে গেল বছরের নভেম্বরে। প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির বিষয়ে ধারণা করা হয়েছিল এটি সাধারণ কোনো রোগ। ফলে সামাজিক কিংবা পারিবারিকভাবে তার অসুস্থতা নিয়ে তেমন কোন সচেতনতা ছিল না। সংক্রমিত ভাইরাস ধীরে ধীরে উহানের মানুষদের ঘীরে ধরে। হঠাৎ নেমে আসে অজানা এক মহা প্রলয়। শুরু হয় মৃত্যুর মিছিল। উহানের মানুষের ক্রমাগত মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে পুরা বিশ্বে। 

পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গবেষণা করে জানতে পারে অত্যন্ত ভয়ানক এই ভাইরাসটি। যার নামকরণ করা হয় কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস ডিসিস)। চীনে উদ্ভব হলেও বর্তমানে ভাইরাসটি ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ১০৯টি দেশ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথম বিশ্ব থেকে তৃতীয় বিশ্ব সব জায়গায় প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। সারি সারি লাশ আজ পৃথিবীর মানুষদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই বর্তমানে সংক্রমণের শিকার প্রায় ১০ লাখ মানুষ। সর্বমোট মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার মানুষের। ইউরোপ জুড়ে প্রায় প্রতিটি দেশের একই চিত্র ভেসে আসছে গণমাধ্যমে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ একটি ভাইরাসের কবলে আজ অসহায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, 'আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু গণনা করতে যাচ্ছি।' এর থেকেই বোঝা যায় কতটা ভয়াবহ বিপদে আজ জনমানব। এখন পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে করোনায় মুত্যু হয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষের। আক্রান্ত প্রায় ৩০ লাখের মত। কদিন আগে দুই শতাংশের মৃৃত্যুহার এখন এক লাফে ২০ শতাংশ হয়ছে। প্রতি মিনিটে গড়ে ৪৫ জনের প্রাণহানি এবং আক্রান্ত হচ্ছে ৫৯ জন। অনেক দেশে গণ কবরেই ঠাঁই হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদের। তবুও ভাইরাসটির যেন ক্লান্তি আসেনি। মানুষের প্রতি দয়া করা যেন এর ধর্মে নেই!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বর্তমান ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এক ভয়াবহ ক্ষণের প্রহর গুনতে হবে আমাদের। ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তবে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের বিষয়ে আরও সচেতন হলে এমন সময় দেখতে হতো না আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি মানুষের মনে। প্রতিটি মুহর্ত চেহারায় বিস্তার ঘটছে চিন্তার ছাপ। মৃত্যুর ছায়া যেন আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষের অবস্থা হয়ে পড়ছে মহা সমুদ্রে পড়া সাঁতার না
জানা ব্যক্তির ন্যায়। ডুবন্ত পানিতে যেমন হৃদয় ভেঙে কাঁদলেও চোখের জল দেখতে পাওয়া পায়না, তেমনি এর ভয়াবহতা অন্তরাল থেকেই আমাদের আঘাত করে যাচ্ছে। যদিও এতে আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে সচেতন হওয়াটাই শ্রেয়। এদিকে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসালয় ও ফার্মেসি ছাড়া সকল প্রকার শপিং মল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র, গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বড় বড় রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান। এরমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের খপ্পরে দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার। সাথে রয়েছে অনেক দ্রব্যের আমদানির ঘাটতি। 

এরমধ্যে ভরপুর মজুদ করে রেখেছেন অনেক বৃত্তবান গুণিজন। নিম্ন আয়ের মানুষের বিষয়ে তাদের ভাববার দরকার পড়েনি। ভাববেনওবা কেন তাদের যে ঘরে অবস্থান করেও খালি পেটে থাকতে হবে না। কারণ ওই গুণিজনরা যে দেশ ও দশের কথা না ভেবেই ঘর ভরিয়ে নিয়েছেন। তবে কি মহামারীর আগেই নিম্ন আয়ের মানুষ না খেয়ে মারা যাক এমনটাই তাদের মনে! নিম্ন আয়ের মানুষের খাবার কেড়ে নেওয়া তাদের প্রতি এই অভিশাপ আমরা মুছতে পারবো কি! এর লাগামওবা ধরবে কে? তবে কি বৈশ্বিক এ মোহামারি আমাদের মহা প্রলয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে! 

কোন গোলাগুলি নেই। নেই কথিত বিশ্বযুদ্ধ। মানবদেহে নেই জখমের চিহ্ন। তবুও পৃথিবী আজ যেন এক মৃত্যুপুরী। সময়ের সাথে সাথে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ পৃথিবী আজ মহা যুদ্ধের চেয়েও বড় সংকটকাল পার করছে। যেখানে শত্রু অদৃশ্য সেখানে মহাপ্রলয়ের মোকাবিলা এ তো বড় এক দুর্বিষহ। তবুও স্বপ্নময় এ জীবন আশাবাদে আলোর স্পন্দন আবারও বাজাবে বাঁশি। তবে চলে যাওয়া আপনজন আর অপূরণীয় এ ক্ষতি পোষাবে কিসে! তাই আজ শতপ্রাণ সমস্বরে বলে উঠে স্ব স্পন্দনে আবারও প্রাঞ্জলিত হোক গোটা বিশ্ব।

লেখক: শিক্ষার্থী, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি