ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

উন্নয়ন ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫৪, ৭ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১০:৪৮, ১০ অক্টোবর ২০১৮

শুক্রবার ছুটির দিন। এ দিন সাধারণত মানুষ একটু ঘোরাঘুরি করে থাকেন। তবে, যদি কোনো মেলা বা উৎসব হয় তাহলে সেখানেই মজাটা অন্যরকম। গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার এই তিনদিন ছিল জাতীয় উন্নয়ন মেলা। এ মেলাকে ঘিরে রাজধানীতে দেখা গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটা অন্য রকমভাব। শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেলো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতার অভাব নেই বিন্দুমাত্র।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টলে গিয়ে মিললো অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা। এখানে যেতেই তরুণ চিকিৎসকরা জানতে চাচ্ছেন কি সেবা চান। তারা খুব আনন্দের সঙ্গে ওজন মাপেন ও পেসার পরীক্ষা করে দিচ্ছেন। খুব উৎসাহ নিয়ে এ সেবা দিচ্ছেন দর্শকদের। কৌতুহলী হয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলো-আপনারা কি এ সেবা আপনাদের মেডিক্যালে দেন। তাদের একজনের সহজ স্বীকারোক্তি না। এটা এ সেবা মেলায় দেওয়া হচ্ছে। আর মেডিক্যালে এ সেবা নিতে হলে টাকা দিয়ে টোকেন নিয়ে এ সেবা নিতে হবে। উল্লেখ্য, মেলায় বিনা পয়সায় খুব আন্তরিকতার সঙ্গে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্য সময় এমনটা হয় না তাদের কথা থেকেই প্রতীয়মান মনে হলো।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো- রাজধানীর এই উন্নয়ন মেলায় প্রায় সব স্টলেই খুব সহজেই মানুষকে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে তাদের উন্নয়ন কার্যক্রমের বর্ণনা সম্মেলিত লিফলেট। এতে তাদের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই বলেই মনে হলো। এ রকম হয়তো সারাদেশের উন্নয়ন মেলায় লক্ষ্য করা গেছে নিশ্চয় হয়তো এমনটা। এটা নিশ্চয়ই ভালো কাজ। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের উন্নয়ন তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। এটা মন্দ কিসের।

ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মো. ফেরদৌস জানান, এবারের উন্নয়ন মেলায় মোট ৩৩০টি স্টল ছিল। এসব স্টলের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯টি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৬টি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৬টি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০টি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৯টি স্টলে কর্মকাণ্ড প্রদর্শন করে।

সারা দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের কথা বারবার জাতিকে স্মরণ করে দিয়ে যাচ্ছেন। এটা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। দেশের উন্নয়নের কথা সরকারের মন্ত্রী-এমপিরাও প্রচার করে যাচ্ছেন। দেশের সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে তাদের মতে। আরও উন্নয়ন হয়তো হবে ভবিষ্যতে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

উন্নয়ন মেলায় সরকারের নানা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে জাতির সামনে। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। এটা সরকারের বড় সাফল্য। সরকার সাধারণ জনগণের কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে খুব সহজেই যোগাযোগ করা যায়। তাছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য কোন খাত নেই সেই খাতে সরকার উন্নয়ন করে নাই।

সরকার দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে বলে তাদের পক্ষে দাবি করা হচ্ছে। তাদের দাবির পক্ষে যথেষ্ট কারণও রয়েছে বটে। বিশেষ করে সরকার পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করছে। পদ্মা সেতু এখন জাতির কাছে দৃশ্যমান। এটা আর এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব।

এছাড়াও রাজধানী ঢাকায় যানজট কমানোর লক্ষ্যে সরকার একের পর এক উড়াল সেতু নির্মাণ করে যাচ্ছে। এতে অনেকটা যানজটও কমেছে বলে অনেকেই মনে করেন। এছাড়াও রাজধানীবাসীর যানজটের হাত থেকে রক্ষা করতে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এ প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীতে যানজট অনেকটাই কমে যাবে বলেই মনে হয়।
এক অর্থে বলা যায়, সরকার রাজধানীর উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এর ফলে রাজধানীতে মানুষ সুফল ভোগ করবে। উন্নয়ন মেলাতে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো বড় বড় উন্নয়নের বড় বড় চিত্র চোখে পড়লো। এটা মন্দ কিছু নয় মনে হয়।

প্রশ্ন হলো- উন্নয়ন মেলায় সরকারের উন্নয়নের চিত্র যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের এসব ব্যক্তি যেভাবে সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়েছে এই তিন দিন। সেভাবে কি সারা বছর তারা সেবা দিবে?

উন্নয়ন মেলায় সব চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্যাভেলিয়নে। এর কারণ ছিল মুহূর্তের মধ্যেই পাসপোর্ট নবায়ন করে দেওয়া হতো এ মেলায়। এ তিন দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল এ স্টলে। আগ্রহীরা লাইন ধরে এ সেবা নিয়েছেন। মেলায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তারা খুব সহজেই এ সেবা নিতে পেরেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এ মেলা শেষ হয়েছে। এর পর কি এ সুবিধা পাবেন। মেলায় এ ধরনের সেবা দিতে পারলে অন্য সময় কেনো নয়। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে প্রায় অভিযোগ উঠে ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যায় না। শুধু এ বিভাগ নয় সরকারি অন্যান্য বিভাগেরও একই অবস্থা এমন অভিযোগ অনেকেই করে থাকেন। তাহলে শুধু কি বছরে শুধু তিন দিনই ভালো সেবা পাওয়া যাবে আর বছরের বাকি দিনগেুলোতে নয়। সরকার দাবি করছে, সারাদেশে সব খাতে উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ কথার যৌক্তিকতা কতটুকু রয়েছে? উত্তরের জেলা, কুড়িগ্রাম বা গাইবান্ধার প্রত্যন্ত চর অঞ্চলে কি উন্নয়ন সমানভাবে হচ্ছে। এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে বিদ্যুতের আলোই ঠিক মতো এখনও যায়নি। তাদের কি ধরনের উন্নয়ন করা হচ্ছে। তারা তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারে না এমন কথা প্রায় শোনা যায়। তারা কি উন্নয়নের ভাগিদার হলো? যোগাযোগ খাতে অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। রেল যোগাযোগেও অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু সে উন্নয়ন সমানভাবে হচ্ছে। উত্তর অঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়,গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া জেলার জন্য দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু রয়েছে। একটি লালমনি এক্সপ্রেস ও আরেকটি রংপুর এক্সপ্রেস। এ দুটি ট্রেনের ওপরই ভরসা করতে হয় এসব জেলা ও আশে পাশের জেলার মানুষদের। আর এসব জেলার মানুষকে সেই নাটোর-ঈশ্বরদী হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যেতে হয়। কিন্তু বগুড়া থেকে যদি সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত একটা লাইন তৈরি করা হয়, তাহলে উত্তর অঞ্চলের সঙ্গে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার দূরত্ব কমে যাবে। কমে যাবে যাত্রাপথ। এই পথের জন্য কাজ চলছে এমনটা শোনা যায় অনেক আগে থেকেই কিন্তু এব বাস্তবায়ন চোখে পড়ার মতো কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। তাহলে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা কি সুষম উন্নয়ন। শুধু এই এলাকায় নয়, সারাদেশেই সুষম উন্নয়ন করা দরকার। শুধু ঢাকা শহর বা চট্টগ্রাম নয়। এমনি কি শুধু মহানগরগুলোর উন্নয়ন করলেই হবে না। সারা দেশের উন্নয়নের চিন্তা করা দরকার। অবশ্যই সেটা সুষম টেকসই উন্নয়ন হওয়া উচিৎ। দেশের সার্বিক খাতে টেকসই উন্নয়ন দরকার। শুধু মেলায় যেন উন্নয়ন সীমাবদ্ধ না থাকে। বছরের শুধু তিন দিন নয়, ৩৬৫ দিনেই সরকারি কর্মকর্তারা সেবা দিবেন হাসিমুখে সাধারণ মানুষ এমনটাই চায়।

পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয়। শুধু শহর নয় কিংবা জেলা শহর নয়, প্রত্যন্ত চর অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ুক উন্নয়ন। সেটা দেশের যে প্রান্তেই হোক। হোক না উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিম। সব মানুষ উন্নয়নের সমান অংশীদার হোক এটাই সাধারণ মানুষ আশা করে মনে হয়। দেশের সব মানুষের উন্নয়নের জন্য যা করণীয় সংশ্লিষ্টরা এমনটাই ভাববেন। শহরের একটা শিক্ষার্থী যে সুবিধা পান গ্রামের সেই শিক্ষার্থীও যেন সেই সুবিধা পায়, সে ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক।

এসএইচ/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি