ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

এ লড়াইয়ে পাশে থাকুন, পাশে রাখুন...

রাশেদ আহমেদ

প্রকাশিত : ১২:২৮, ৩১ মার্চ ২০২০

অদৃশ্য শক্তির সাথে লড়াই করা কঠিন। আমরা এমনই এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে আছি এখন। মানুষ, জাতি, রাষ্ট্র সবাইকে লড়াই করতে হচ্ছে অদৃশ্য শত্রুর সাথে। এই শত্রুকে মারার কোন অস্ত্র আবিষ্কার হয়নি। সে শুধু পারে নিজে নিজে মরে যেতে।

করোনা জীবন্ত কোন প্রাণী নয় এটি প্রোটিনের অণু। যাকে বলা যায় ডিএনএ। যা আবার চর্বি দিয়ে মোড়ানো। কোনভাবে শ্বাসনালী দিয়ে শরীরে ঢুকে পড়লে নিজের জেনেটিক কোড বদলে শক্তিশালী ও আক্রমনাত্মক হয়ে যায় এই ভাইরাস। ফুসফুসের চারদিকে আবরণ তৈরি করে মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এই ভাইরাস জীবন্ত কোন প্রাণী না হওয়ায় কোন প্রতিষেধক দিয়ে মেরে ফেলা যায় না। তবে নিজে ধ্বংস হয়ে যায় নির্দিষ্ট সময়ে, কিংবা পরিস্থিতিতে। কতক্ষণে ধ্বংস হবে না নির্ভর করে স্থান ও আর্দ্রতার ওপর। ক্ষারযুক্ত সাবান এর ওপর পড়লে চর্বির আবরণটি গলে যায়। এতে করে ভাইরাসটি ধ্বংস হয় বটে। অথবা তীব্র তাপে নষ্ট হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে এই শত্রুর মোকাবেলা করতে হচ্ছে মানুষকে। এখনও কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। এটাই বাচাঁর একমাত্র কৌশল আপাতত।

বিশ্বে যখন এই ভাইরাসের আক্রমণে ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সব ঘরে ঢুকে গেছে। তখন কিন্তু তিন পেশার মানুষের ঘরে থাকার উপায় নেই। চিকিৎসক, আইনশৃংখলা বাহিনী ও সাংবাদিক। চিকিৎসকদের সেবা দিতে হচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীকে বাইরে থাকতে হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। আর সাংবাদিকদের মাঠে, ঘাটে, হাসপাতালে ঝুঁকি নিয়েই ছুটতে হচ্ছে খবর পৌঁছে দেয়ার জন্য। মানুষ বাঁচাতে রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রের এই তিন পেশার কর্মীদের বেশি দরকার। অন্য দুই পেশার জনবল প্রশাসনের অংশ। তারা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলবে। গণমাধ্যম সব সময় রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করে নিজস্ব প্রেরণা ও তাড়না থেকে। তাই প্রশাসন যন্ত্রকে তাদের স্বার্থেই এই শক্তিশালী মাধ্যমটিকে তাদের কাছাকাছি রাখা জরুরি।
 
জাতির যেকোন দুর্যোগই এই গণমাধ্যম এগিয়ে এসেছে। নিজের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেনি। সেই বন্যা বলুন, সাইক্লোন বলুন, আগুন বলুন কিংবা রাজনৈতিক সংকট বলুন। সত্তুর সাল কিংবা একানব্বই সালে উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ে সাংবাদিকরাই ছুটে গিয়ে খবর পৌঁছে দিয়েছিল সবার আগে। তখন প্রশাসন ছুটে যায় দুর্গতদের বাচাঁতে। রাজনৈতিক কথা বলি উনসত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলানোর চেষ্টা হলো। সামরিক আদালতের সমস্ত প্রসেডিংস সাংবাদিকরা পত্রিকায় ছাপতে শুরু করলো। জাতি জেগে উঠলো। গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল। মুক্তি মিললো বঙ্গবন্ধুর। একইভাবে নব্বই সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জাতিকে এক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল সাংবাদিক সমাজ। আজকে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে পুরো জাতি। এ সময় গণমাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে সরকারকে। সবাইকে সচেতন করে তোলার জন্য। বিপদ থেকে বাঁচার পথ এই একটাই। মানুষ এখন নিজের হাত দুটোকেই বিশ্বাস করতে আস্থায় নিতে পারছেনা এই দুঃসময়ে সরকার যতোই কথা বলুক, ততোক্ষণ পর্যন্ত জনগণ তা আস্থায় নেবে না যতক্ষন না মূলধারার গণমাধ্যম তা নিজের করে প্রচার না করবে। সাংবাদিকরা বলছেন, তারা ঝুঁকি নিচ্ছেন আরও নেবেন। সরকারের উচিত হবে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।
 
সব লকডাউন হয়ে আছে। অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব পড়বে। গার্মেন্টস শিল্পের সংকট মোকাবেলায় সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বেসরকারি টেলিভিশন মালিকরা প্রণোদনা চেয়েছেন এরই মধ্যে। আমরা মনে করি এই প্রণোদনা হওয়া দরকার সংবাদকর্মীদের। সংবাদকর্মীরা তাদের কাজের তাগিদেই করোনার খোঁজ-খবর নিতে যান সে জন্য সুরক্ষা উপকরণ তাদেরও দরকার। গণমাধ্যমের বেশির ভাগ মালিক সময়মতো বেতনই দিতে চান না উপকরণ দেবেন কি করে? সরকার এই ব্যবস্থটি করতে পারে। পাশাপাশি অন্য পেশার মানুষ ঝুঁকি ভাতা পেলে সংবাদকর্মীরা পাবেনা কেনো? এই সংকট কালে রাষ্ট্রের এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা জরুরি। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি এরই মধ্যে সম্প্রচার সংবাদকর্মীদের জন্য এই দাবি জানিয়েছে।

লেখক-সাংবাদিক


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি