ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

একটি না বলা কথা

সেলিম জাহান

প্রকাশিত : ১৯:৫০, ২৮ জুলাই ২০২০

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, Freedom for Choice প্রভৃতি।

তেতাল্লিশ বছরের কর্মজীবনে আমার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত ছিল দেশে-বিদেশে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতিসংঘে, বিশ্বের নানান আন্তর্জাতিক সংস্হার স্বল্পকালীন উপদেষ্টা থেকে স্হায়ী পেশাজীবি পদে। এই বর্ণাঢ্য বিবিধ কাজের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ বছরের শিক্ষকতার জীবনকে আমি সবচেয়ে গৌরবের এবং সুখকর বলে মনে করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সে শিক্ষকতা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন আমার শিক্ষার্থীরা, যাঁরা আজ বিশ্বের নানান জায়গায় ছড়িয়ে আছে। কোথায় নেই তাঁরা - বিশ্ববিদ্যালয়ে, গবেষণাগারে, সরকারে, আন্তর্জাতিক সংস্হায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, ব্যবসা-বাণিজ্যে। তাঁদের এতো সব বিশাল অধিষ্ঠানে আমি চরম গর্বিত। কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গা হচ্ছে- তাঁদের স্মৃতিতে, মননে, হৃদয়ে একটি মায়াময় স্হান, যা তারা আমার জন্যে রেখে দিয়েছে।

আমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষকতূল্য অধ্যাপকদের সন্তানেরা। এই যেমন- প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কন্যা রুচি। বেনুকে তুমি বললেও আমি তাঁর কন্যার শিক্ষক বিধায় তিনি আমাকে ‘আপনি’ বলতেন দু’বছর আগেও। অধ্যাপক শমসের আলীর পুত্র সুষমকেও আমি পেয়েছি অর্থনীতি বিভাগে। এই মাত্র সেদিন জানলাম যে, আমার এক শিক্ষার্থী কাবেরী মোস্তফা আমার খুব প্রিয় একজন শিক্ষকতূল্য মানুষ প্রয়াত অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামালের কন্যা। ‘কেন আগে বলনি?’ - আমার এ অনুযোগের জবাবে সে বলেছে, ‘এগুলো না বলতেই তো আমাদের শেখানো হয়েছে, স্যার’। ইসলামিক ইতিহাসের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের পুত্রকেও আমি শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছি বিভাগে। খুব বিব্রত হয়ে বলি, ওর নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছি না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যাদেরকে শিক্ষার্থী হিসেবে পাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে, তাদের মধ্যে আমার হৃদয়ে একটি বিশেষ স্হান আছে ১৯৭১-এর শহীদ বুদ্ধিজীবিদের সন্তানদের জন্যে। আশির দশকে এদের অনেককেই আমার শ্রেণীকক্ষে পেয়েছি। এ আমার পরম প্রাপ্তি। শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর পুত্রদ্বয় তানভীর হায়দার চৌধুরী (শোভন) ও প্রয়াত সুমন হায়দার চৌধুরী (সুমন), শহীদ চিকিৎসক মোহাম্মদ মর্তুজার কন্যা দ্যুতি অরণি (মিতি), শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের পুত্র তৌহীদ রেজা নূরকে (তৌহীদ)। এদেরকে আমি শিক্ষার্থী হিসেবে পাইনি, কিন্তু অনুজসম হিসেবে পেয়েছিলাম ও পেয়েছি শহীদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান প্রয়াত আশফাক মুনীর (মিশুক) ও আসিফ মুনীরকে (তন্ময়)। স্বল্পকালের জন্যে মিশুক আমার সহকর্মীও ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে গত পরশু শামীম আর আমি যখন ১৯৭১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক ও শহীদ চিকিৎসক ডা: মোহাম্মদ মর্তুজার স্মৃতিচারণ করছিলাম, তখন শোভন, মিতি ও তৌহীদের চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ওরা হয়তো জানেও না, আশির দশকে শ্রেণীকক্ষে ঢুকে ওদের দিকে তাকালে আমার মনটা হু হু করে উঠতো। বহুবার এমন হয়েছে যে, আমি ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারিনি। কোনদিন হয়তো বলা হয়নি, আজ ওদের এই কথাটুকুই শুধু বলে যাই - আর কিছু নয়।

ছবিতে- বাঁদিক থেকে মিতি, শোভন ও তৌহীদ

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি