ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মদিন আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৮, ৮ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ১১:০৯, ৮ অক্টোবর ২০২০

আজ ৮ অক্টোবর, সঙ্গীত জগতের অমর শিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মদিন। ১৮৬২ সালের আজকের এইদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক সঙ্গীত পরিবারে জন্ম তার। পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। তার মাতার নাম সুন্দরী বেগম। 

আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গীতগুরু ছিলেন আগরতলা রাজদরবারের সভাসঙ্গীতজ্ঞ তানসেনের কন্যাবংশীয় রবাবী ওস্তাদ কাশিম আলী খাঁ। শিবপুরে এখনো রয়েছে তার মা-বাবার কবর। তার নামে গড়ে উঠেছে শিবপুর ওস্তাদ আলাউদ্দি খাঁ কলেজ। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ ও ওস্তাদ নায়েব আলী খাঁ তার ছোট ভাই।

আলাউদ্দিনের ডাক নাম ছিল ‘আলম’। শৈশবে প্রকৃতির সান্নিধ্য খুব ভালো লাগত তার। প্রকৃতির মাঝেই তিনি খুঁজে বেড়াতেন সুর। সঙ্গীতের সেই অন্বেষণ থেকেই একটা সময় হয়ে উঠেছিলেন সুরসম্রাট। তিনি প্রচুর গান রচনা করেছেন। তার রচিত গানে তিনি ‘আলম’ ভনিতা ব্যবহার করেছেন। বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি। 

সুরের সন্ধানে তিনি দশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। ওই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিত হন। 

অতঃপর কলকাতা গিয়ে তিনি প্রখ্যাত সঙ্গীত সাধক গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তবে গোপাল কৃষ্ণ একটি শর্তারোপ করলেন আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণের সময় যে, কমপক্ষে ১২ বছর একনাগাড়ে সঙ্গীত সাধনা করতে হবে সেখানে থেকে। আলাউদ্দিন খাঁ রাজি হয়ে গেলেন আরোপিত শর্তে। কিন্তু সাত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন সঙ্গীত সাধক গোপাল কৃষ্ণ।

সেই শোকে স্তব্ধ হয়ে আলাউদ্দিন খাঁ হঠাৎ করেই কণ্ঠসঙ্গীত সাধনা ছেড়ে দেন এবং যন্ত্রসঙ্গীত সাধনায় নিজেকে নিমগ্ন করেন। স্টার থিয়েটারের সঙ্গীত পরিচালক অমৃত লাল দত্ত ওরফে হাবু দত্তের নিকট তিনি বাঁশি, পিকলু, সেতার, ম্যাডোলিন, ব্যাঞ্জু ইত্যাদি দেশী-বিদেশী বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন। সেই সঙ্গে তিনি লবো সাহেব নামে এক গোয়ানিজ ব্যান্ড মাস্টারের নিকট পাশ্চাত্য রীতিতে এবং বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ অমর দাসের নিকট দেশীয় পদ্ধতিতে বেহালা শেখেন। এছাড়া হাজারী ওস্তাদের নিটক মৃদঙ্গ ও তবলা শেখেন। এভাবে তিনি সর্ববাদ্য বিশারদ হয়ে ওঠেন।

বহুমাত্রিক এই সুরের জাদুকর আলাউদ্দিন খাঁ কিছুদিন ছদ্মনামে মিনার্ভা থিয়েটারে তবলা বাদকের চাকরি করেন। অতঃপর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার জগৎ কিশোর আচার্যের আমন্ত্রণে তার দরবারে সঙ্গীত পরিবেশন করতে যান। সেখানে ভারতের বিখ্যাত সরোদিয়া ওস্তাদ আহমেদ আলী খাঁর সরোদ বাদন শুনে তিনি সরোদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তার নিকট পাঁচ বছর সরোদে তালিম নেন। 

এরপর ভারতখ্যাত তানসেন বংশীয় সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর নিকট সরোদ শেখার জন্য তিনি রামপুর যান। ওস্তাদ ওয়াজির খাঁ রামপুরের নবাব হামেদ আলী খাঁর সঙ্গীত গুরু ও দরবার সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। আলাউদ্দিন খাঁ তার নিকট দীর্ঘ ত্রিশ বছর সেনী ঘরানায় সঙ্গীতের অত্যন্ত দুরূহ ও সূক্ষ্ম কলাকৌশল আয়ত্ত করেন।

বহুমাত্রিক সঙ্গীতযন্ত্রে পারদর্শী আলাউদ্দিন খাঁ সরোদে বিশেষভাবে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। সহজাত প্রতিভাগুণে তিনি সরোদবাদনে ‘দিরি দিরি’ সুরক্ষেপণের পরিবর্তে ‘দারা দারা’ সুরক্ষেপণ-পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। সেতারে সরোদের বাদনপ্রণালী প্রয়োগ করে সেতারবাদনেও তিনি আমূল পরিবর্তন আনেন। এভাবে তিনি সঙ্গীতজগতে এক নতুন ঘরানার প্রবর্তন করেন, যা ‘আলাউদ্দিন ঘরানা’ বা ‘মাইহার ঘরানা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। যোগ্য শিষ্য তৈরি তার এক বিশাল কীর্তি। 

১৯৫২ সালে ভারত সরকার তাকে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি সম্মান’ ১৯৫৮ সালে ‘পদ্মভূষণ’, ১৯৭১ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’, ১৯৬১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ‘দেশিকোত্তম’ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডক্টর অব ল’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৪ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক প্রথম সঙ্গীত নাটক আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হল তাকে আজীবন সদস্যপদ দান করে। 

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তালিমের গুণে তার পুত্র সরোদশিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খান বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং তাঁর জামাতা সেতারশিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্কর বিশ্বখ্যাত হয়েছেন এবং ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ, ও ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মধ্য প্রদেশের মাইহারেরই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জীবনাবসান ঘটে।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি