ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

করোনা চিকিৎসায় একটি গাছ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্য!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত, সেই সময়ই সারা পৃথিবীর সংবাদ মাধ্যমে সাড়া ফেলেছিল আফ্রিকা মহাদেশের দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কার থেকে আসা একটি খবর। তা হলো- এ বছর এপ্রিল মাসে দেশটিতে একটি স্থানীয় উদ্ভিদ থেকে তৈরি পানীয় ব্যবহার করা হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য। মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড্রি রাজোইলিনা স্বয়ং আর্টেমিসিয়া নামের ওই গাছের ‘আশ্চর্য গুণের কথা’ প্রচার করেছিলেন।

জানা গেছে, আর্টেমিসিয়া নামে সেই গাছের নির্যাস ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর। কিন্তু তা কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে পারে এমন কোন প্রমাণ নেই বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কিন্তু এই আর্টেমিসিয়া চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। আর্টেমিসিয়া থেকে তৈরি ওষুধ সাধারণত সেখানে ম্যালেরিয়া বা জ্বর সারাতে এবং বেদনা-উপশমকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চীনা ভেষজশাস্ত্রে একে বলা হয় কিংহাও।

এ বছর এপ্রিল মাসে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট রাজোইলিনা বলেছিলেন, আর্টেমিসিয়া থেকে তৈরি কোভিড-অর্গানিক্স নামের একটি পানীয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে এবং তা এই রোগের চিকিৎসায় কার্যকর বলে দেখা গেছে। কিন্তু এর পক্ষে কোন প্রমাণ প্রকাশ্যে দেখানো হয়নি। ঠিক কি কি উপাদান দিয়ে এই পানয়িটি তৈরি হয়েছে তা জানা যায়নি।

তবে দেশটির সরকার বলেছে যে, এর ৬০ শতাংশই এসেছে আর্টেমিসিয়া গাছ থেকে। মাদাগাস্কারে এটির ক্যাপসুল ও ইনজেকশনও তৈরি হয়েছে এবং তা মানবদেহের ওপর পরীক্ষা অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।

এই খবরের পর ইতিমধ্যে জার্মান এবং ড্যানিশ বিজ্ঞানীরা এখন আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া গাছের নির্যাস পরীক্ষা করেছেন। তারা বলছেন, ল্যাবরেটরিতে চালানো পরীক্ষায় তারা নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এর কিছুটা কার্যকারিতা দেখতে পেয়েছেন।

এ গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই নির্যাসকে যখন বিশুদ্ধ ইথানল বা পাতিত পানির সাথে ব্যবহার করা হয়, তখন তা এ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে বলে দেখা গেছে। তবে তাদের এই গবেষণা অন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা স্বাধীনভাবে যাচাই করানো হয়নি।

এই গবেষকরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করছেন এবং কোন এক পর্যায়ে এটা মানবদেহের ওপর পরীক্ষা করা হবে।

চীনও নিজেদের উদ্যোগে সেদেশে আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া উদ্ভিদ ব্যবহার করে যেসব ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরি হয়, তা পরীক্ষা করে দেখছে।

আর্টেমিসিয়া উদ্ভিদের একাধিক প্রজাতি আছে। এর মধ্যে আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া এবং আর্টেমিসিয়া আফ্রা নামের দুটি প্রজাতি কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে কাজ করে কিনা তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। কিন্তু এর এখনও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তারা এখনও মাদাগাস্কারের পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায়নি। সংস্থাটির আফ্রিকান অঞ্চলের কর্মকর্তা জঁ-ব্যাপটিস্ট নিকিয়েমা বিবিসিকে বলেছেন, প্রথম ট্রায়ালগুলোর ফলাফল দেখার পর তারা হয়তো পরবর্তী পর্বের ট্রয়ালগুলোতে জড়িত হতে পারেন।

তবে এখন পর্যন্ত ডব্লিউএইচও বলছে, আর্টেমিসিয়া থেকে তৈরি কোন পণ্য কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে কাজ করে এমন কোন প্রমাণ নেই। তারা আরও বলেছে যে, ওষুধ তৈরি হয় এমন সকল উদ্ভিদেরই কার্যকারিতা এবং ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

সূত্র: বিবিসি

এএইচ/এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি