ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

কিসিঞ্জারের কথিত তলাবিহীন ঝুঁড়িটি এখন মার্কিন ডলারে টইটুম্বুর (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪২, ৬ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৪:৪৩, ৬ আগস্ট ২০২১

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি রণাঙ্গণে বিজয় অর্জন করলেও পর্দার অন্তরালের যুদ্ধ তখনও চলছিল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণমানুষের যে ঐক্য তৈরি হয়, তা নস্যাতের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার অব্যাহত রাখে বাংলাদেশবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র। দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়েও অবান্তর প্রচারণা চলে। আর এর সবই হয় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির দূরভিসন্ধি থেকে। 

নতুন একটি দেশের জন্ম। যার জন্যে দিতে হয়েছে লাখো প্রাণ; ধ্বংস হয়েছে বিপুল সম্পদ। চারদিকে শুধু যুদ্ধের দগদগে ক্ষত। এমনই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় ও দেশ পুনর্গঠনে বন্ধু দেশগুলোর সহায়তা পেতে যখন জোর তৎপরতা চলছে; ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলে আখ্যায়িত করেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার। মূলত বঙ্গবন্ধু, তাঁর সরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার গৌরবকে অনুজ্জ্বল করার লক্ষ্যেই এ ধরণের অপপ্রচার চালানো হয়। প্রচ্ছন্ন বার্তা থাকে বাংলাদেশকে সহায়তা না করারও। 

কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ বাংলাদেশের পক্ষে থাকায় এসব অপপ্রচার বাংলাদেশ ও তাঁর স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জয়যাত্রা রুখতে পারেনি। যদিও তৎকালীন পাকিস্তান-সমর্থক কয়েকটি দেশের অন্যায্য তৎপরতায় জাতিসংঘের সদস্য পদ পেতে প্রায় দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। ’৭২ সালে আবেদন করে ’৭৪-এর ১৭ সেপ্টেম্বর মেলে সদস্য পদ। এর সপ্তাহখানেক পর ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাঙলায় ভাষণ দেন জাতির পিতা। তুলে ধরেন বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর নানা স্বপ্ন। 
 
বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দর্শন নিয়েও মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষকরা অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা বিষয়টিকে ইসলামবিরোধী বলে প্রচারণা করে। যদিও ইসলামী শিক্ষা, প্রকাশনা ও গবেষণায় ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর হাতেই গড়ে ওঠে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আর সব মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার সমুন্নত রাখতে রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখার ক্ষেত্রে কখনো আপোষ করেননি বঙ্গবন্ধু। 

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র মাওলানা ফখরুল আশেকী বলেন, একজন মানুষ যদি ধর্ম পরায়ণ বা প্রাকটিসেবল মুসলিম না হতেন, তিনি কি ধর্মের এতোগুলো কাজ করতেন? আজকে যারাই এই কথাগুলো বলছে, নেহায়েত অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সহযোগিতা ছিল সর্বাত্বক। এটি নিয়েও কম অপপ্রচার হয়নি। বাংলাদেশ কী ভারতপ্রভাবিত কোনো রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে? ’৭২ সালে দেশে ফিরে দায়িত্বগ্রহণের পরপর এমন অপপ্রচারের মুখোমুখী হন বঙ্গবন্ধু। জবাবটাও ছিল ষ্পষ্ট। ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে জোট নিরপেক্ষ।’

শুধু তাই নয়, তৎকালীন সরকারের দক্ষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় খুব কম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এতে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়।
 
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর শাসনামল নিয়ে বিকৃত প্রচারণা চলেছে ’৭৫ পরবর্তী সব সরকারের আমলে। প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতার মৃত্যুর পর বাংলাদেশে একটি বিভক্ত, সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানী মতাদর্শের একটি জঙ্গী রাষ্ট্র কায়েমের অপচেষ্টা চলে। উপেক্ষিত থাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতির মূলধারা।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশীদ বলেন, যারা স্বাধীনতা বিরোধীচক্র তারা বাংলাদেশের জন্মকে মানতে পারেনি, ফলে তারা এই দেশটার পেছনে লেগে থাকে সবসময়, সেই শুরু থেকেই, সেই ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে তারা নানা ধরণের চক্রান্ত চালাচ্ছে, যাতে এ দেশটি দাঁড়াতে না পারে।    

১৯৭২ থেকে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর এই শাসনামল নিয়ে অপপ্রচার হতো অশুভ উদ্দেশ্যে, গণমানুষের ঐক্য নষ্টের অপতৎপরতার অংশ হিসেবে। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশীদ বলেন, তারা মনে করছে যে, বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্যে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, হানাহানি বা এই ধরণের একটা পরিবেশ তৈরি করে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে থামানো যাবে।

বঙ্গবন্ধু এখন সশরীরে নেই। তবে তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। উন্নয়নের রোল মডেল। সেই হেনরী কিসিঞ্জারের কথিত তলাবিহীন ঝুঁড়িটি এখন মার্কিন ডলারে টইটুম্বুর।

ভিডিওতে দেখুন- 

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি