ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

কোয়ারেন্টাইনও যেন এক আশীর্বাদ

ড. ইউসুফ খান

প্রকাশিত : ১৬:০৯, ৩০ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৮:৩২, ৩০ মার্চ ২০২০

ড. ইউসুফ খান

ড. ইউসুফ খান

মহামারী রূপ নেয়া করোনায় পুরো বিশ্ব এখন কঠিন সময় পার করছে। ভাইরাসটি আমাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন করে তুলছে। কিছু দিনের জন্য হলেও কোয়ারেন্টাইনে একা থাকতে হচ্ছে। তবে এ অবস্থাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভংগিতে গ্রহণ করলে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন থাকা জীবনটাও হতে পারে এক আশীর্বাদ।

প্রযুক্তির এ যুগে মানুষ হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক। সম্পদ, পদ-পদবী, লোভ আর ভোগের পেছনে ছুটছি সবাই। নিজেকে বা পরিবারকে একটু সময় দেয়ার সময়ও যেন নেই। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে হলেও হোম কোয়ারেন্টাইন মানুষকে কিছুটা সময় একা বা পরিবারের সাথে কাটানোর দুর্লভ সুযোগ এনে দিয়েছে। 

প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব একটা ভুবন থাকে। আবার প্রতিটা মানুষের মধ্যে আর একটি মানুষ থাকে, যাকে আমারা "আমি " বা "মন" বলি। জনবিচ্ছিন্ন হলেও আমার আমিটা সব সময়ই আমার সাথে থাকে। এ পরিস্থিতিতে আমার আমিকে আবিস্কার করে তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

এই সময়টকে অপূর্ব সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিদিন কিছুটা সময় মহান সৃষ্টি কর্তার স্মরণে কাটানোর খুবই উপযুক্ত সময়। জ্ঞানী-গুণী মনি-ঋষিদের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি তাদের জীবনের একটা অংশ ধ্যান এবং জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে জনবিচ্ছিন্ন ভাবে নিভৃতে কাটিয়েছেন। জীবন দর্শন বুঝতে হলে তাই নির্জনতা-একাকিত্ব প্রয়োজন। 

বিচ্ছিন্নতা মানুষকে ভাবনার গভীরতায় নিয়ে যায়। স্রষ্টার সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ হয়। মানুষের ভেতরের মানবীয় গুণাবলী গুলো জেগে উঠে। প্রতিটা মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকে কোন না কোন সৃজনশীলতা। সেটাকে জাগিয়ে তোলার এইতো মোক্ষম সময়। জ্ঞান আহরণের জন্যও এটি একটি উপযুক্ত পরিবেশ। 

বই হলো মানুষের পরম বন্ধু। একটি ভালো বই সঙ্গে থাকা মানে একজন ভালো বন্ধু সঙ্গে থাকা। এছাড়াও কিছুটা সময় বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সাথে মুঠো ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেও এই নির্জনতাকে আনন্দময় করে তোলা যেতে পারে।

আমাদের বাঙালী স্বত্বাটা যেন হাজার বছর ধরে একই নিয়মে চলে আসছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সবচেয়ে সুখের মুহুর্তটা যেমন গ্রামের বাড়িতে কাটাতে ভালোবাসি, একইভাবে সবচেয়ে কষ্টের মহুর্তটাও গ্রামে গিয়ে সবাই মিলে কাটাতে চাই। ঈদে মানুষ ঘরমুখো হয়। ব্যস্ত শহর ফাঁকা হয়ে যায়। 

এবার কিন্তু করোনা ভাইরাসের ভয়ে নগরবাসী গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। তবে ঈদের হাসি-খুশী নিয়ে নয়, চোখে মুখে উৎকন্ঠার ছাপ নিয়ে। ভাবছেন- গ্রামের বাড়িতে গেলে হয়তো আপনজনদের মাঝে নিরাপদ বোধ করবেন। জনকোলাহল এড়িয়ে কিছুটা হলেও নিরিবিলি থাকতে পারবেন। 

মাঝে মাঝেই দেখি, বস্তিতে আগুন লাগলে বস্তিবাসীর অনেকেই গ্রামে চলে গিয়ে নতুন করে ঠাই খোঁজেন। কারো মৃত্যু হলে সেই লাশের দাফন-কাফন হয় গ্রামে গিয়ে। এখন করোনা আতংকে মানুষ গ্রাম মুখী হচ্ছে। গ্রাম যেন আমাদের কাছে মায়ের মতন। রবি ঠাকুরের দেখা বাংলার গ্রামগুলো আজও তেমনি আছে। এক একটা বাড়ি যেন প্রকৃতির কোলে বুক ভরে নি:শ্বাস নেয়ার নিরাপদ আশ্রয় স্থল। 

উচ্চবিত্তদের ব্যাপার কিন্তু ভিন্ন। তারা বেশিরভাগ সময় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লন্ডনে কাটান। অসুস্থ হলেও ওইসব দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের সন্তানেরাও সেসব দেশে শিক্ষিত হন। তবে করোনা এবার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের এক সারিতে নিয়ে আসার পর সবাই এখন দেশ দেশ করছেন। সবাই দেশে ফিরে আসছেন। দেশের মাটিতে তৃপ্তিই অন্যরকম। দেশের মাটিতে মৃত্যু হওয়াটাও যেন এক পরম পাওয়া।

লেখক- ব্যাংকার।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি