ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

ক্যান্সারের ছোবল: দায়ী তামাক ও বিষযুক্ত খাবার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১০, ৬ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২২:৫২, ৬ এপ্রিল ২০১৮

দেশে ১০ বছর আগেও যেখানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা, সেখানে বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। আর প্রতিবছর নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ৩ লাখ লোক। তাদের অর্ধেকই যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায়, অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরেজমিন ঘুরে ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোয়াররফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন এই হাসপাতালে অন্তত ১ হাজার ২০০ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আসেন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। এ ছাড়া ৩০০ আসনবিশিষ্ট হাসপাতালাটি সব সময় রোগী দ্বারা পূর্ণ থাকে বলেও যোগ করেন তিনি।

ডা. মোয়ারফ আরও বলেন, ২০১২ সালে বহির্বিভাগে ৫০-৬০ হাজারের মতো রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও, মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে সেখানে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪ গুনেরও বেশি। বর্তমানে বছরে ওই হাসপাতাল থেকে দুই লাখেরও বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে রোগী ও তার স্বজনদের প্রচণ্ড ভিড় লেগে আছে। তাঁদের কেউ এসেছেন বরিশাল থেকে, কেউ পঞ্চগড় থেকে আবার কেউ কুমিল্লা থেকে। রোগী ও হাসপতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই রোগীরা এ হাসপাতালে প্রতিদিন ভিড় করছেন। এদিকে রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যার অপ্রতুলতার কারণে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আরও বেশি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আগত রানী দাস নামের ক্যান্সার আক্রান্ত এক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি গলায় সমস্যায় ভোগছেন। অনেক চিকিৎসক দেখানোর পরও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায়, অবশেষে পাড়ি দেন ঢাকায়। প্রথমে একটি প্রাইভেট মেডিকেলের চিকিৎসককে দেখানোর পর, তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাঠানো হয় রাজধানীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে পরীক্ষাবাবদ তাকে প্রাথমিকভাবে গুণতে হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর আরও একটি পরীক্ষা করানো হয়, যেখানে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। বারবার বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করতে করতে ক্লান্ত এ নারী জানান, শুরুর দিকে বুঝতে পারলে হয়তো, এমন সমস্যায় পড়তে হতো না।

এ বিষয়ে ডা. মোয়াররফ হোসেন বলেন, প্রতি বছরই এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বাড়ছে না সচেতনতা। বিশেষ করে নারীরা এ রোগে আক্রান্ত হলেও তারা লোকলজ্জার ভয়ে অনেক সময় তা চাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে জরায়ু ক্যান্সারসহ থাইরয়েড ও স্তন ক্যান্সারের আক্রান্তের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এদিকে হঠাৎ করে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তামাক জাতীয় পণ্য, ফরমালিন যুক্ত খাবার, খাদ্যে কীটনাশক, দূষিত বায়ু ও পানির কারণেই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবছরই লক্ষাধিক মানুষ ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হন। এর পেছনে অন্যতম কারণ বিভিন্ন অদৃশ্য তেজষ্ক্রিয়তা বা রেডিয়েশন, রেডিও টেলিভিশন টাওয়ারের অস্বাভাবিক পরিমাণ মাইক্রোওয়েভ জন্য ক্যান্সার হতে পারে। ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানুষের খাদ্যাভ্যাস। তামাকজাত পণ্য সেবনের কারণেই বিশ্বজুড়ে ফুসফুস ক্যান্সার ও থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ফলমূল, শাক-সবজিতে ফরমালিন, অতিমাত্রায় রাসায়নিক উপাদানের প্রয়োগের কারণে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

এমজে/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি