ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

গর্ভেই সন্তানের ব্যক্তিত্ব নির্ধারিত হয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কোনো নারী যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন, তবে ওই সন্তান ৩০ বছর বয়সে পৌঁছুনোর আগেই সে 'পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার' বা ব্যক্তিত্ব বৈকল্যে আক্রান্ত হতে পারে। অথবা এই ঝুঁকি স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ গুণ বেশিও হতে পারে। এমনটাই বলছে নতুন একটি গবেষণা।

এমনকি গর্ভাবস্থায় মাঝারি মাত্রার মানসিক চাপ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাহলেও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রি'তে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

ফিনল্যান্ডে ৩,৬০০ গর্ভবতী নারী ও তাদের সন্তানদের ওপর এই গবেষণাটি চালানো হয়। এতে গর্ভাবস্থায় ওই নারীদের মানসিক চাপ নিরূপণ করা হয়। পরে তাদের সন্তান জন্ম নেওয়ার পর, ওই সন্তানদের মানসিক বিকাশের ওপর নজর রাখা হয়।

এবার জানা দরকার 'পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার' বা ব্যক্তিত্ব বৈকল্য কী?

'পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার' এমন একটি মানসিক অবস্থা যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের জীবন তো বটেই, অন্যের জীবনেও বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি করে। এরা অনর্থক এবং অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন হতে পারে, আবেগের ওঠানামার পেছনে কোনো যুক্তি থাকে না, অতিমাত্রায় সন্দেহ-প্রবণ হয়ে পড়ে। এমনকী অনেক সময় সমাজ-বিরোধী কাজেও লিপ্ত হতে পারে।

এবার জেনে নেই কী ভাবে করা হয়েছিল এই গবেষণাটি-

গবেষণায় ৩,৬০০ গর্ভবতী নারীকে প্রত্যেক মাসে কিছু প্রশ্ন করে তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা হয়। বিশেষ করে মানসিক চাপের মাত্রা নিরূপণের চেষ্টা করা হয়।

এই নারীরা ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬ সালে সন্তানের জন্ম দেন। তারপর থেকেই এদের ওপর দৃষ্টি রাখে গবেষকরা। ওই সন্তানদের বয়স তিরিশে পৌঁছুনোর পর দেখা যায় তাদের ৪০ জনের মধ্যে মারাত্মক ব্যক্তিত্বের সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

গবেষণায় ফলাফল

সম্পর্কের সংকট, সামাজিক বা মনস্তাত্ত্বিক কারণে যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় দীর্ঘদিন বড় রকম মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন, প্রধানত তাদের সন্তানরাই মানসিক সংকটে পড়েছে। যেসব মায়েদের গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কম ছিল, তাদের সন্তানদের চেয়ে চাপে থাকা মায়েদের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব বৈকল্য হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি- এরকমই ফলাফল পেয়েছেন গবেষকরা।

এ অবস্থায় কী করা যেতে পারে?

ব্রিটেনের রয়াল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের অধ্যাপক ড. ট্রুডি সিনিভারত্নে বলছেন, গর্ভধারণ করলে অনেক নারী মানসিক চাপে পড়েন। যদি এই মানসিক চাপ ঠিকমতো নিরসন না করা হয়, এর পরিণতি তাদের এবং সন্তানদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এক্ষেত্রে সাহায্য খুবই জরুরি।

ড. সিনিভারত্নে বলছেন, গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই বাড়িতে এবং কাজের জায়গায় সাহায্য করতে হবে। তাদেরকে জানতে হবে কীভাবে বিশ্রাম নিতে হয়, মানসিক চাপে পড়লে অন্যের কাছ থেকে কীভাবে সাহায্য চাইতে হয়।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ এবং যথেষ্ট ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। 

কী ভাবে সন্তান বড় হয়, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা কী, শিশু বয়সে সে কোনো সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়েছিল কিনা - এগুলোও ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই ছোট থাকতেই এগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

সূত্র: বিবিসি

এএইচ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি