ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রাম বন্দরের কোকেন মামলা স্থগিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫৩, ৮ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ২০:১১, ৯ অক্টোবর ২০১৭

চট্টগ্রাম বন্দরের চাঞ্চল্যকর তরল কোকেন জব্দের মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সূর্যমুখী তেলের চালানে কোকেন আমদানির অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান সংক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারার মামলাটি চলছিল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. শাহে নূরের আদালতে।

মামলার প্রধান আসামি খানজাহান আলী গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রোববার রুল জারিসহ এ স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি মো. মিফতাহউদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রুলে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।

মনিরুজ্জামান বলেন, কোকেন উদ্ধারের ঘটনায় একটি মামলা হলেও পরে আদালতের আদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন ও চোরাচালানের ধারায় দুটি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষ নারাজি দেওয়ায় দুই মামলাতেই অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।

এর মধ্যে মাদক আইনের মামলায় র‌্যাব তদন্ত প্রতিবেদন দেয় গত এপ্রিলে। আর গত সেপ্টেম্বরে চোরাচালান মামলাতেও অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ পাওয়ার আগেই র‌্যাব মাদক আইনের মামলার তদন্ত করেছে অভিযোগ করে নূর মোহাম্মদ মামলাটি খারিজ করার আবেদন  করেছিলেন হাই কোর্ট। তার যুক্তি শুনে রোববার হাই কোর্ট রুল জারির পাশাপাশি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেন বলে মনিরুজ্জামান কবির জানান।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পরে পরীক্ষা করে এতে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

এরপর ২৮ জুন বন্দর থানায় নূর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান মাদক আইনের মামলায় আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন।

কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম বাদ দেওয়ায় আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পুলিশের বদলে র‌্যাবকে দিয়ে তদন্ত করায়।

অধিকতর তদন্ত করে চলতি বছর ৩ এপ্রিল নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে মাদক মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন র‌্যাব-৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

সেখানে বলা হয়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নূর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই ভোজ্যতেলের মাধ্যমে তরল কোকেন আনা হয়েছিল।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা কামরুজ্জামানই এ ঘটনায় চোরাচালান মামলার তদন্ত করেন। গত ১৪ মে তিনি যে অভিযোগপত্র দেন, সেখানে মাদক মামলার মতই নূর মোহাম্মদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ তাতে নারাজি জানালে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ গত ৭ সেপ্টেম্বর এ মামলাতেও অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। র‌্যাবে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করাতে বলা হয়।

আদালতের আদেশ পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেয়। কিন্তু প্রথম দফায় সরকারের আদেশ পাওয়ার আগেই র‌্যাব মামলার তদন্ত চালায় অভিযোগ করে খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক গত ৪ অক্টোবর হাই কোর্টে আবেদন করেন।

পরদিন শুনানি করে আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশের অনুলিপি দাখিলের নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ সেসব নথি রোববার উপস্থাপন করলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ কে এম মনিরুজ্জামান কবির জানান। 

নূর মোহাম্মদের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “আইন অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া র‌্যাব কোনো মামলার তদন্ত করতে পারে না। সেই যুক্তিতে আমরা হাই কোর্টে আবেদন করেছিলাম। আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে।”

গত বছরের ১৫ জানুয়ারি নূর মোহাম্মদকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। চলতি বছর ১১ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।

ছাড়া পাওয়ার পর নূর মোহাম্মদ গত ৬ আগস্ট শত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে একটি মামলা করেন। তার দাবি, নিয়ম অনুসরণ না করে তার অজ্ঞাতে ভোজ্যতেলের ওই চালান আনা হয়েছিল।

নিজের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাসহ তিন ব্যক্তি এবং শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস ও চালান পাঠানো বিদেশি কোম্পানি মিলিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ওই মামলায় বিবাদী করেছেন খান জাহান আলীর মালিক।

আরকে/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি