ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

চায়ের কাপে করোনাতঙ্ক

আজাদুল ইসলাম আদনান

প্রকাশিত : ১২:২৯, ১৬ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৬:৫৭, ১৬ মার্চ ২০২০

অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খেলার মাঠ পর্যন্ত সর্বত্রই আলোচনার বিষয় একটাই ‘করোনা ভাইরাস’। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবার মুখে উচ্চারিত হচ্ছে নামটি। 

করোনায় কী হবে, কী করবো, কোথায় কে আক্রান্ত হয়েছে, ঘরে-বাইরে এটাই আলোচনার অন্যতম বিষয়। আবার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ বা গণমাধ্যমে কে, কী দেখেছে বা পড়েছে তা নিয়েই চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ। 

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির প্রভাব পড়েছে রাস্তার পাশের ছোট ছোট চায়ের আড্ডাতেও। এসব আড্ডাতে এর থেকে মুক্তি লাভের পথ খোঁজার চেয়ে আতঙ্কটাই কাজ করছে বেশি। 

এ রকম এক আড্ডার কথা বলবো আজ। ঢাকা কলেজের পরিবেশ চত্বরে গত ৪১ বছর ধরে চা-বিক্রি করছেন আব্দুর রাজ্জাক। দীর্ঘ এ সময়ে ক্যাম্পাসজুড়েই তিনি এক নামে পরিচিত। 

ফলে প্রতিনিয়ত তার চায়ের দোকানে ভিড় করছেন ক্যাম্পাসে বসবাসরত হাজারো শিক্ষার্থী। সকাল থেকে রাত অবধি মুহূর্তেই জমে ওঠে চায়ের আড্ডা। মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ চত্বর। উৎসবমুখর সেই জম্পেশ আড্ডায় এবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে‘ক-রো-না’। 

অন্যান্য সংক্রমণ রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব চিহ্নিত করার সহজ মাধ্যম থাকলেও প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটির ক্ষেত্রে তা নেই। এমনকি কেউ অসুস্থ হলেও বোঝার উপায় না থাকায় মূলত এই আতঙ্কের কারণ। 

কেউ অসুস্থ হলে স্বাভাবিকভাবেই সেবায় পাশে থাকেন, মা-বাবা থেকে শুরু করে সকল কাছে মানুষগুলো। সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে কাছের মানুষগুলোর কোম স্পর্শেই অনেক সময় সুস্থ হয়ে যাই আমরা। 

কিন্তু অজানা এই ভাইরাস কাছের মানুষদের থেকে শুধু দূরেই ঠেলে দেয়। এই যেমন, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে নিজ দেশে ফিরেছেন শতশত প্রবাসী। যাদের ঘামে সচল থাকে এদেশের অর্থনীতির চাকা। কাছের মানুষগুলোকে একটু ভাল রাখার জন্য বছরের বছর পড়ে থাকেন বিদেশের মাটিতে। 

কিন্তু, দীর্ঘ সময় পর দেশে ফিরলেও মরণঘাতির এই ভাইরাসের কারণে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না, পাশেই দাঁড়ানো অথচ বুকে টেনে নিতে পারছেন না। কতটা নৃশংস হতে পারে এই ভাইরাস, তার এখান থেকে স্পষ্ট হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার মাঝে ভর করছে একধরণের চাপা আতঙ্ক। 

অন্যান্য দিনের ন্যায় রোববার (১৫ মার্চ) রাতেও আব্দুর রাজ্জাকের দোকানে বসেছে চায়ের আড্ডা। যেখানে উপস্থিত কলেজটির কয়েকজন শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সের লোকজন। 

সবাই হাসিখুশিতে কথা বলছিলেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। হঠাৎ একজনের কণ্ঠে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা উঠার সঙ্গে সঙ্গে সবার চোখেমুখে চিন্তার ভাঁজ

কেউ বলছেন, ‘যেখানে সামান্য অসুস্থ হলে হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসা পেতে বিলম্বের অন্ত নেই, সেখানে মরণব্যাধি করোনা থেকে কি করে মুক্তি পাবো?’

৬৫ বছর বয়সী চা-বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক তো করোনার কথা শুনে রীতিমত চুপসে গেলেন। তিন সন্তানের এই জনক গত কিছুদিন ছোট সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর বেঁধেছেন বুকে। নতুন করে আর কোনো প্রিয়জনকে হারাতে চান না তিনি।
 
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই জীবনে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। কতশত রোগ মোকাবেলা করেছি। শুনতেছি এ রোগের নাকি কোনো চিকিৎসা নেই! তাই দোয়া করছি, কেউ যেন স্বজনহারা না হোন।’

তার মতো ৪১ বছর ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অফিস সহকারী মোজাম্মেল হক চা-খেতে খেতে বলছিলেন, ‘জীবনে কত রোগের নাম শুনেছি, কিন্তু এই প্রথম চিকিৎসা নেই এমন রোগের মুখোমুখি হচ্ছি। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় একটু বেশি চিন্তিত। যেহতু এর প্রতিষেধক তৈরি হয়নি, তাই আল্লাহই একমাত্র ভরসা।’

সেখানেই আড্ডা দিচ্ছিলেন কলেজটির ইংরেজী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল হাকিম। 

এ শিক্ষার্থী জানান, ‘আমাদের দেশে এখনো করোনার প্রকোপ সেভাবে দেখা না দিলেও অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা। উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে যেসকল দেশে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, কেউ না কেউ তা অন্যদেশ থেকে নিয়ে এসেছে। আবার বৈশ্বিক প্রভাবেও অনেক দেশে তা প্রবেশ করেছে। তাই আমাদের সহজভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।’

আব্দুল হাকিম বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ভাইরাসটির গুরুত্ব অনুভব করে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। উন্নত দেশগুলোতে নানা পদক্ষেপ নিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের পারিপার্শিক অবস্থা সবারই জানা। এখানে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হওয়ায় ভাইরাসটি দ্রুত এখানে বিস্তার লাভ করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা এ কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বাহিরে ৭টি হল রয়েছে। যেখানে অন্তত ৪ থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকছেন। এক রুমে কমপক্ষে ১২ জন করে থাকায় করোনার সংক্রমণ এখানে সবচেয়ে বেশি ছড়াতে পারে। একবার কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে কলেজের সকল শিক্ষার্থীর মাঝে বিশেষ করে বিভিন্ন হলে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃতি লাভ করবে। তাই, কলেজ প্রশাসনের উচিত হবে সময় থাকতেই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।’

এরকম আলোচনা পাড়া মহল্লা, মাঠে ঘাটে সর্বত্র। করোনা যেনো সবার মধ্যে মৃত্যু আতঙ্ক এনে দিয়েছে। যদিও এ থেকে আমাদের সবার শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। আর সেই শিক্ষা হবে- নৈতিকতার, শিষ্টাচারের, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার।

লেখক- সাংবাদিক 

এসএ/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি