জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড গণতন্ত্রকামী জনগণ: তারেক রহমান
প্রকাশিত : ১০:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেছেন তারেক রহমান।
আজ সোমবার (০৬ অক্টোবর) বিবিসি বাংলার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত স্বৈরাচারী সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতিমতো একটি আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমকে কিছু বলতে চাইতাম, হয়ত গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল তা ছাপানোর, কিন্তু তারা তা করতে পারত না।
তারেক রহমান বলেন, আমি একবার প্রেস ক্লাবে কথা বলেছিলাম। পরদিন দেখলাম, তখনকার প্রেস ক্লাবের যারা সদস্য ছিলেন বা কমিটি ছিল, তারা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিল যে, আইনের দৃষ্টিতে আমাকে ফেরারি হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল, তাই সেরকম ব্যক্তিকে প্রেসক্লাবে কথা বলতে দেওয়া হবে না। এভাবেই তারা চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে।
তিনি বলেন, আমি কথা বলেছি। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পন্থায়; আমি মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি এবং ইনশাল্লাহ পৌঁছিয়েছিও। কাজেই গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি তা নয়, আমি কথা বলেছি। হয়ত আপনারা তা নিতে পারেননি বা শুনতে পারেননি, ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে বা প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছি এবং আমি থেমে থাকিনি।
দেশে ফেরার প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে উঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো। রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকবো? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড গণতন্ত্রকামী জনগণ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, না, আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে পাঁচই অগাস্ট যেই আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত এই আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটি প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, জুলাই-অগাস্ট মাসে এসে জনগণ সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাথে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়। আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা তারা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিনীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি কৃষক, শ্রমিক, সিএনজি চালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টস কর্মী - তারা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে।
তারেক রহমান বলেন, এমন অনেক সাংবাদিক যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারো ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই, না খাটো করে দেখতে চাই না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ়ভাবে সমাজের দল মত নির্বিশেষে শ্রেণীবিন্যাস নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
এএইচ
আরও পড়ুন