ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ আগস্ট ২০২৫

হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ সেই সুখরঞ্জন বালির

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:১৯, ২১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩৯, ২১ আগস্ট ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সেই সুখরঞ্জন বালি শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ দাখিল করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন।

শেখ হাসিনার ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে সুখরঞ্জন বালি অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইন মন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, ট্রাইব্যুনালের সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল, সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত ও তৎকালীন তদন্ত সংস্থার প্রধান মো. সানাউল হক।

সুখরঞ্জন বালী তার অভিযোগে বলেন, ‘আমার ভাই বিশাবালীকে (বিশেশ্বর বালী) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে তৎকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাকে পিরোজপুরের পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলে ডেকে ৭১-এ আমার ভাই বিশাবালীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চায়। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। কিন্তু হেলাল উদ্দিন আমাকে আমার ভাইয়ের হত্যাকারী হিসাবে প্রকৃত হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামও বলতে বলে এবং তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলে।’

‘আমি হেলাল সাহেবকে তখনই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিই যে, সাঈদী হুজুর আমার ভাই বিশাবালী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল সাহেব আমাকে জোরপূর্বক রাজি করাতে সেখানেই আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। এরপর হেলাল উদ্দিন আমাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি করাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এমপি এ. কে. এম. আব্দুল আউয়াল ও পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেককে ডেকে আনে। আমি সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে, আউয়াল ও মালেক সাহেব আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।’

‘এ অবস্থাতেই তারা আমাকে অজানা একটি স্থানে নিয়ে যায়। এটি ছিল একটি জানালাবিহীন অন্ধকার ঘর, যেখানে প্রায় দুই মাস আমাকে বন্দি রাখা হয় এবং খাদ্য ও আলো থেকে বঞ্চিত করে প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।পরবর্তীতে আমাকে আরেকটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ক্যামেরা ও আলো ছিল। সেখানে সাঈদী হুজুরের- বিরুদ্ধে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে চাওয়া হয়। আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিই যে, আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে সাঈদী হুজুরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আমি প্রকৃত হত্যাকারীদের চিনি এবং তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত আছি।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এলে সাদা পোশাকধারী পুলিশ মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে গুম করে রাখা হয় ২ মাস ১৭ দিন। পরে সীমান্ত পারাপার করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে। এরপর ভারতে ৫ বছর জেলে ছিলেন তিনি।’

এদিকে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধে জাড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৩ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও পরে আপিলে সেই রায় পরিবর্তন হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। 

তবে এই মামলাকে কেন্দ্র করে সাক্ষী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ২০২১ সালে ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। দুইবার এমপিও হয়েছিলেন। এমপি থাকাকালে আমরা মায়ের কোলে ঘুমিয়েছি। তাকে আমি ভাঙ্গা পুল পার করে আমার সেন্টারে নিয়ে এসেছিলোম। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, এমপি হতে পারি আর না পারি এই রাস্তারপুল আমি করে দেব। তিনি পরে সেটা করেছেন। সেজন্যে তার ওপর এতো মায়া ছিল আমার।’

সুখরঞ্জন বালি আরও বলেন, ‘তিনি সৎ ও ভালো মানুষ ছিলেন। এজন্য আমি তার জানাযায় গিয়েছি। ছয়-সাত লাখ মানুষ হয়েছিল সেখানে কিন্তু আমি একা বক্তব্য দিয়েছি। এরপর আমি বাড়িতে থাকতে পারিনি ওই সময়ের সরকারের চাপে। আমি বাগানে থেকেছি।’

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি