ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

তাকাশি হায়াকাওয়া বাংলাদেশের পরম বন্ধু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৫০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের মানুষের পরম বন্ধু তাকাশি হায়াকাওয়ার জন্ম ১৯১৬ সালের ২১ আগস্ট জাপানের ওয়াকাইয়ামা শহরে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করে ১৯৪১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি শুরু করলেও, কিছুদিন পর নৌবাহিনীতে তিনি যোগদান করেন হিসাব বিভাগের একজন কর্মকর্তা হিসেবে। ১৯৪৩ সালে মোতোয়ে হাতানাকার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাকাশি।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে হায়াকাওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরে আসেন। পরের বছর এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত যুদ্ধোত্তর জাপানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে হায়াকাওয়া ওয়াকাইয়ামা থেকে নিম্নপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তার বয়স ছিল ২৯ বছর। তিনি ছিলেন সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। 

১৯৬৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হাইয়াতো ইকোদা মন্ত্রীসভা গঠন করলে প্রথমবারের মতো তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ১৯৬৬ সালে শ্রমমন্ত্রী এবং ১৯৭৬ সালে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ১৯৭৭ সাল থেকে টোকিওতে অবস্থিত এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শিক্ষাঙ্গনেও তিনি অবদান রেখেছেন। নিম্নপরিষদের সদস্য থাকা অবস্থায় ১৯৮২ সালের ৭ ডিসেম্বর ৬৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি। 

বাংলাদেশের প্রতি তাকাশি হায়াকাওয়ার ভালবাসা ছিল অপরিমেয়। তিনি বাংলাদেশকে সবসময় নিজের দেশ বলে মনে করতেন। এ সম্পর্কে তার স্ত্রী মোতোয়ে হায়াকাওয়া বলেন, জাপানি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী তাকাশি হায়াকাওয়া ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য টোকিওর রাস্তায় দাঁড়িয়ে চাঁদা তোলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেন ও কাজ করেন স্বাধীন বাংলাদেশকে জাপানের স্বীকৃতির ব্যাপারে।

                                                                         তাকাশি হায়াকাওয়া

তাকাশি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত চারবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করতেন। জাপানে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ভোটারদের সামনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এত বেশি বাংলাদেশের কথা বলতেন যে তার সঙ্গীরা ভোট জোগাড় করার জন্য বাংলাদেশের প্রসঙ্গ ভাষণে কম তুলে ধরার অনুরোধ করতে বাধ্য হতেন। কিন্তু তিনি বলতেন, “বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় দেশ, আমি আমার নিজের দেশের কথা বলব না কেন?”

বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছেন, হায়াকাওয়াকে বঙ্গবন্ধুও উল্লেখ করেছেন বন্ধু বলে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের শাহাদাতের কথা শুনে খুবই মর্মাহত হন তিনি। নিষ্ঠুর বিরাজমান পরিস্থিতিতেও নিন্দা জানাতে পিছু হঠেননি তিনি। 

তাকাশির স্ত্রী মোতোয়ে বলেন, বাংলাদেশকে তিনি ভালবেসেছেন নিজের দেশের মতো। তাইতো বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “বাংলাদেশে গেলে সবাই বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে যায় কেন?” তাকাশির আবক্ষ আজও বাংলাদেশের সোনারগাঁ হোটেলে শোভা পায়। 

বাংলাদেশের প্রতি তার ভালবাসার গভীরতা কখনো মাপার মতো ছিলনা। যা মুত্যুরক্ষণেও তার বহিঃপ্রকাশ পায়। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যুর আগে তিনি বলে যান, মৃত্যুর পর যেন আমার অর্ধেকটা দেহভস্ম বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাকাশির শেষ ইচ্ছানুযায়ী ঢাকার রামপুরা বৌদ্ধ মন্দিরে তার শেষকৃতের অনুষ্ঠান হয়। দেহভস্ম রাখা হয় কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দিরে, যা আজও আছে। 

আই/এসি
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি