ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছরপূর্তি আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১২, ১৭ আগস্ট ২০২১

দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছরপূর্তি আজ। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়। মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় ৫০০ পয়েন্টে বোমা হামলায় দু’জন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হন। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ঘটনা।

পুলিশ কর্মকর্তা, র‌্যাব, বিশ্লেষক ও জঙ্গিবাদ পর্যবেক্ষণের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০০৫ সালের আগে থেকেই জঙ্গিরা নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল। কিন্তু বিষয়টি ততোটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়নি সেসময় এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধেও কঠোর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও ছিল গা-ছাড়া ভাব। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই মূলত সারাদেশে একযোগে হামলার পরিকল্পনা করেছিল জেএমবি বা জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর এবং মৌলবাদী রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট এ সারা দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালায়। মুন্সিগঞ্জ জেলা ব্যতিত সর্বমোট ৬৩টি জেলায় একযোগে ঐ বোমা হামলা চালানো হয়। এ বোমা হামলার মাধ্যমে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) একটি উগ্রবাদী জঙ্গি দল হিসাবে অত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের মতো একটি প্রগতিশীল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে একটি অকার্যকর মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ বোমা হামলা চালানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর ও র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পরপরই সারাদেশে ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে ৮টি, আরএমপিতে ৪টি, কেএমপিতে ৩টি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৭টি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭টি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে ৮টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি। যারমধ্যে ১৪২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বাকি ১৭টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ১৩০ জন। এবং গ্রেপ্তার করা হয় ৯৬১ জনকে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রেপ্তার হওয়ার জঙ্গিদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। মূলত জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খ আবদুর রহমান গ্রেপ্তারের পর তখন তার জবানবন্দিতে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

তারা বাংলাদেশকে ৬ টি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। পরে তারা দাওয়াত ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের প্রচার প্রচারণা শুরু করে। এভাবেই সারা দেশে তারা কর্মী সংগ্রহ শুরু করে সংগঠনটি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় তাদের কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ওই বোমা হামলার ঘটনায় ৬৩টি জেলায় ১৬১টি মামলা হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে জঙ্গিদের বোমা হামলায় দুইজন বিচারক নিহত হওয়ার মামলায় পরবর্তীতে জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই মামলাতেই ২০০৬ সালের ৬ মার্চ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর এদের একজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। এছাড়া জেএমবির আমীর শায়খ আব্দুর রহমান, দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা মো. সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই এবং খালেদ সাইফুল্লাহ ও আতাউর রহমান সানীর মতো শুরা সদস্যদের ফাঁসির আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।
এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি