ঢাকা, সোমবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের জরিপ

দেশে ব্রেস্টফিডিংয়ের হার ৫৫ শতাংশ

আলী আদনান

প্রকাশিত : ২০:০৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:০৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

মায়ের দুধ নিয়ে সমাজে এখনো কিছু ভুল ধারনা প্রচলিত আছে। যেমন শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরে কেউ কেউ শিশুর মুখে মধু, মিছরির পানি দেন। বলা হয় তিনদিন না গেলে মায়ের স্তনে দুধ আসে না। চিকিৎসকরা বলছেন, এটা সম্পূর্ন ভুল কথা।

শিশু পৃথিবীতে আসার এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে মায়ের দুধ খেতে দেওয়া উচিত। শিশু মায়ের স্তন যতো চুষবে ততো দুধ আসবে। তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোনো দরকার নেই।

আবার শিশু কান্না করলেই ধরে নেওয়া হয় তার খিদে পেয়েছে। এটাও ঠিক নয়। কারণ, আরো অন্য অনেক কারণে শিশু কাঁদতে পারে। পৃথিবীর নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে তার সময় লাগে। অতি গরম বা অতি ঠান্ডা পরিবেশ সে সহ্য করতে পারে না। সে সময় মায়ের কোলের মতো আরামদায়ক জায়গা খোঁজে। এগুলোর হেরফের হলেই শিশু কাঁদতে পারে।

এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির জড়িপ বলছে, শিশুর পুষ্টির মূল উৎস মায়ের বুকের দুধ হলেও দেশে ব্রেস্টফিডিংয়ের হারও খুবই কম। মাত্র ৫৫ শতাংশ। অথচ জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দিলে ৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু রোধ, ১৩ শতাংশ শিশুমৃত্যু এবং ৬ মাস বয়সের পর মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে ৬ শতাংশ শিশুমৃত্যু কমানো সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. এসকে রায়।

তিনি শিশুদের পুষ্টিহীনতা, খর্বকায়- কৃষকায় হওয়া নানা বিষয়ের জন্য তিনি সঠিকভাবে মাতৃদুগ্ধ পান না করানোকে দায়ী করেন।

শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। এই শিশুদের পুষ্টির মূল উৎস মায়ের দুধ এবং ঘরে তৈরি খাবার। ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, দেশে ঘরে তৈরি সঠিক খাবার দেওয়া হয় মাত্র ২৩ শতাংশ শিশুকে। জরিপে দেখা যায় পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের এক তৃতীয়াংশ শিশু খর্বকায়, ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন কম, ১৪ ভাগ শিশু কৃষকায় (লম্বার তুলনায় ওজন খুবই কম)।

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ না খাওয়ানো এবং ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়ানোর জন্য অসচেতনা ও মায়েদের ব্যস্ততাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, পেশাজীবী মায়েদের কর্মপরিবেশ শিশুদের লালন পালন উপযোগী না হওয়াও এর কারণ। এখনও বহু প্রতিষ্ঠানে শিশুদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।

১৯৮৯ সালে তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এদেশে ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে। সেগুলো হলো জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো, প্রথম ছয়মাস মায়ের দুধ পান করানোর সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ানো।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এস কে রায় বলেন, এই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব না হলে শিশুর পুষ্টি চাহিদা কখনো পূরণ হবে না। ডা. এসকে রায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের প্রচারের ফলে বর্তমানে প্রায় ৬শ’টি হাসপাতালকে শিশুবান্ধব করা এবং শিশুর খাবার ও মায়ের পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি (Infant and Young Child Feeding Practice) চলছে।

সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আর বর্তমান সময়ে প্রতিটি জেলায় কিশোরী পুষ্টি বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মসূচিও চলছে। তবে পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে অ্যাডভোকেসি অংশে বিবিএফ অনেক পিছিয়ে আছে। এর মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় অফিস চালুর কাজ অব্যাহত রয়েছে।

ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. এস কে রায় বলেন, মাতৃদুগ্ধের প্রচার-প্রসার ও সমর্থনে আমরা কাজ করছি। অনেক আগে থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে দাবিটি জোরালো হলেও আমাদের দেশে ১৯৮৯ সালের আগে এ আওয়াজ উঠেনি। আমরাই প্রথম এ দেশে মাতদুগ্ধের বিষয় নিয়ে আওয়াজ তুলি। জানা যায়, ৭০- দশকের শেষ ও আশি দশকের শুরুর দিকে মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে অনেক কোম্পানি আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে গুঁড়োদুধ বাজারজাত করা শুরু করে। ফলে শিশু মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।

এই প্রেক্ষিতে তখন ১৫৯টি দেশের প্রতিনিধিরা রেগুলেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল কোড অব মার্কেটিং অব ব্রেস্টমিল্ক সাবস্টিটিউট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ডা. এসকে রায়ের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল, সবাই মিলে সন্তানকে মায়ের দুধ পান করানোর বিষয়টি প্রচার ও সমর্থনে কাজ করা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ মায়েদের বিভিন্ন অধিকার আদায় নিয়ে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)। ডা. এস কে রায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এখনো কোনো অর্থ সহায়তা না পেলেও তারা মায়েদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

১৯৮৪ সালে দেশে মাতৃদুগ্ধপানে বাধ্যবাধকতা নিয়ে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশটি ৩০ বছর চালু থাকার পর ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহে পুষ্টি, মেডিক্যাল, গাইনিসহ সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরি করেন।

একই বছর রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দেন। বর্তমানে আইন মন্ত্রনালয়ে এর বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে। শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো ক্ষেত্রে উৎসাহ সৃষ্টি করার এই আন্দোলনে যাত্রাপথে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এস কে রায় বলেন, আমরা এ কাজে ইউনিসেফকে সঙ্গে পেয়েছি। পুষ্টির বিষয় হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তেমন আগ্রহ নেই। জেনেভাতে ব্রেস্টফিডিং ও নিউট্রেশন বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বড় এজেন্ডা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তারা কোনো কাজ করছে না।

কেন করছে না তার কোনো সদুত্তরও তারা দিতে পারেননি। ডা. এস কে রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না বা পর্যাপ্ত চাপ দিতে পারছি না। তবে এটা খুব বড় কোনও বাধা নয়। কারণ বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে যেসব কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে সরকারের ভূমিকাই বেশি। আবার এটাও সত্য সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় মানসিক সমর্থন দিলেও অর্থায়নের ক্ষেত্রে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

অা অা// এআর


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি