ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

দেশের বর্জ্যপানিতে মিলছে করোনার জিন (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা ভাইরাসের দাপটে গোটা বিশ্ব জেবরার। এর জন্য দায়ী সার্স কোভ-২ ভাইরাস। এ ভাইরাসের জিনগত উপাদান দেশের বর্জ্যপানিতে পাওয়া যাচ্ছে এমন তথ্যের প্রমাণ পেয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এবং নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

এ বছরের জুলাই ২০ থেকে ২৯ আগস্ট দেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত কোভিড আইসোলেশন কেন্দ্রের আশপাশের ড্রেন, নর্দমা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও শৌচাগারের সঞ্চালন লাইন থেকে বর্জ্যপানির নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা।

সেই সংগৃহীত নমুনায় ‘ওআরএফ১ এবি’ এবং ‘এন প্রোটিন’ জিনসহ করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।

গবেষক দলের সদস্য আমিনুল ইসলাম জানান, বর্জ্যপানি একটি যন্ত্রচালিত ছাঁকনি মেশিনের সাহায্যে আগে ছেঁকে নেয়া হয়, তখন ময়লা নিচে চলে যায়। ওপরের পানি আলাদা করা হয়। ওই প্রক্রিয়ায় পানি আবার ছাঁকলে ভাইরাসগুলো সব নিচে চলে যায়। আরটিপিসিআর পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই তলানি থেকে করোনা শনাক্ত করা হয়। 

দেশে নর্দমা ও ড্রেনের পানিতে কোভ-২ আরএনএ সনাক্তকরণের এটাই প্রথম সফল প্রচেষ্টা বলে দাবি গবেষকদের। গবেষণাটির নতুন দিক হলো এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক কোভিড রোগীর ‘জেনেটিক লোডকে’ তুলে ধরা হয়েছে। এ গবেষণার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো শহরে কি পরিমাণ কোভিড রোগী রয়েছে তা অনুমান সম্ভব।

নোবিপ্রবি গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, বাংলাদেশে এই প্রথম আমরা ওয়েস্ট ওয়াটারে করোনার উপস্থিতি নিয়ে কাজ করছি। 

এটি শুধু আইসোলেশন সেন্টারের আশপাশে করা হয়েছে। কিন্তু আইসোলেশন সেন্টারে ১০% রোগী থাকে বাকি ৯০% রোগী বাসায় থাকে। আসলে বাসায় যে কোভিড রোগী রয়ে গেছে তাদের বর্জ্যগুলো কোথায় যাচ্ছে, সেখানে করোনার উপস্থিতি কেমন আছে সেটা আমাদেরকে খুঁজে দেখতে হবে। এই প্রজেক্টটা বড় করে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

একটি এলাকায় করোনা আছে কিনা, তা জানতে ওই এলাকার ড্রেনের পানি পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে, গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রাথমিক সাফল্য এখানেই।

নোবিপ্রবি মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও গবেষক দলের প্রধান ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, বর্জ্যপানিতে করোনা গবেষণার গুরুত্ব অনেক। বর্জ্যপানির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে সেই বর্জ্যপানি আবার কোনও রোগীকে বা কোনও কমিউনিটিকে ইনভেক্ট করছে কি না। যদি আমি একটি বড় কমিউনিটিকে দেখতে চাই যে, সেখানে করোনার উপস্থিতি কেমন আছে তাহলে কয়েক লাখ মানুষকে পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমি যদি সেখানকার বর্জ্যপানি পরীক্ষা করতে পারি তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এটাকে ইন্ডিকেটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো। নির্ণায়ক হিসেবে এই কমিউনিটিতে করোনা কতগুলো আছে বা করোনাভাইরাস আছে কি নাই।

তিনি আরও বলেন, এই বিষয়টি চিন্তা করলে আমাদের গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোট একটি অঞ্চলে আমরা গবেষণাটি করেছি, এতো ছোট গবেষণা দিয়ে বোঝা যাবে না আমাদের কি হয়েছে। এই পরীক্ষা, আমাদের স্টাডি এর ব্যাপ্তি কিন্তু অনেক হতে পারে। ফান্ডিং পেলে আমরা এটিকে বড় করার চেষ্টা করবো। 

সংক্রমণের উঠা নামা সঠিকভাবে মূল্যায়নে বর্জ্যপানি নিরীক্ষণ একটি ফলপ্রসু পদ্ধতি। নর্দমার বর্জ্যপানি পরীক্ষা করে কোনো এলাকায় করোনা আছে কিনা, তা জানা যেতে পারে।

নোবিপ্রবি মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফয়সাল হোসেন বলেন, আমরা এতো দিন ধরে জেনে আসছি, কোভিড-১৯ হচ্ছে ডিরেক্ট, কন্ট্রাক্ট, বিভিন্ন সার্ভেসের কন্ট্রাক্টে আসলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এরকম গবেষণা আসে নাই যে, ওয়েস্ট ওয়াটারের মাধ্যমে এটা ছড়াচ্ছে কিনা বা এটা দেখা হয়নি। আশা করি এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো যে, এর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা এবং যদি ছড়িয়ে থাকে তাহলে ওয়েস্ট ওয়াটারের প্রপার ট্রিটমেন্টা ইমপর্টেন্ট হয়ে দাঁড়াবে। আর এটার ট্রিটমেন্ট করতে পারলে সংক্রমণ ছড়ানোর হার কমে আসবে।


এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি