ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

এক রাতেই কেড়ে নেয় ১ হাজার ৭৪৬ জীবন

নস : ভুতুড়ে এক হ্রদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৯, ১৪ মে ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩২, ২০ মে ২০১৮

ক্যামেরুনের রাজধানীর ৩১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি হ্রদ। নাম নস। এটি লম্বায় দুই কিলোমিটার, প্রশস্ত মাত্র ১ দশমিক ২ কিলোমিটার। আর গভীরতা দুইশ’ ৮ মিটার। হৃদটির রয়েছে একটি কালো অধ্যায়, যে কারণে লোকজন এটিকে ভুতুড়ে হৃদ হিসেবেই জানে।

১৯৮৪ সালের কথা। তখন হৃদটিতে হঠাৎ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উদগীরিত হয়। যা বাড়তে থাকে। ১৯৮৬ সালের ২১ আগস্টে নস হ্রদ থেকে উদগীরিত গ্যাসের কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এক রাতেই মারা যান ১ হাজার ৭৪৬ জন। সঙ্গে ৩ হাজার ২০০ গবাদিপশুরও সমাধি হয়।

স্থানীয়ভাবে হ্রদটি অশুভ হিসেবে পরিচিত। অনেক আগে থেকেই এটিকে নিয়ে বহু লোমহর্ষক লোককথা প্রচলিত আছে। স্থানীয়দের ধারণা, এই হ্রদে এক অশুভ আত্মা বাস করে, যে প্রায়ই হ্রদের আশপাশে বসবাসকারী মানুষজনকে মেরে ফেলে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, এই হ্রদটি ৪০০ বছর আগে এক আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের ওপর সৃষ্টি হয়েছিল। এ ধরনের হ্রদে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। নস হ্রদের পানি অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে স্থির। এখানে বায়ু চলাচলের ফলে পানিতে ঢেউ ওঠে না বললেই চলে। যে কারণে হ্রদে জমে থাকা গ্যাস পানি থেকে বের হতে পারে না। ফলে পুরো হ্রদটি এক বিরাট গ্যাস চেম্বার বা প্রকোষ্ঠের মতো কাজ করে, যার ভেতর গ্যাসের চাপ অনেক বেশি।

হ্রদের যতই গভীরে যাওয়া যায় ততই গ্যাসের চাপ বাড়তে থাকে। প্রতি গ্যালন হ্রদের পানিতে পাঁচ গ্যালন কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশে আছে। পদার্থবিজ্ঞানের মতে, পুরো হ্রদটি কাজ করে বিশাল এক টাইম বোমার মতো।

১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট হ্রদে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছিল। হঠাৎ হ্রদের পানি ঝর্ণা আকারে ৩০০ ফুট ওপরে উঠে গেল। খুব সম্ভবত হ্রদের তলদেশে ভূমিধস বা অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। আর এটার ফলাফল ছিল ভয়াবহ। আক্ষরিক অর্থেই যেন হ্রদে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে যা থেকে শুরু হয় সুনামি। কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কের ছিল পানির সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের উদগীরণ।

টানা ২০ সেকেন্ড ধরে ১.২ ঘন কিমি এলাকাজুড়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্যাসের কারণে হ্রদের আশপাশে বসবাসকারী কারোই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল না। নস লেকের কাছে বসবাসকারী ৮০০ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন বেঁচে যান। তাও তারা মোটরগাড়িতে করে দ্রুত সে এলাকা ত্যাগ করার কারণে।

পুরো এলাকাজুড়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। সে যেন এক মহাপ্রলয়। ধোঁয়ার মেঘ হ্রদ থেকে ২৫ কিমি দূরে ছড়িয়ে যায়। যারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ঘরের বারান্দায় বা দরজা খুলে বের হয়ে আসে, তারা সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে মারা যান। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হ্রদের আশপাশের গ্রামগুলোতে বসবাসকারী ১ হাজার ৭৪৬ জন মানুষ আর ৩ হাজার ২০০ গবাদিপশু মারা যায়।

হ্রদের পানি মুহূর্তে পরিষ্কার নীল রং থেকে গাঢ় লাল রং ধারণ করে। কারণ হ্রদের তলদেশ থেকে আয়রন বা লোহা ভেসে উঠছিল। ভয়াবহ এ ঘটনার পর হ্রদটিকে গ্যাসমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু তা খুব অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞরা ১৯৮৬ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে কোনো সময় আবারও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

সূত্র : উইকিপিডিয়া।

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি