ঢাকা, সোমবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৫

নিজেকে ভালোবাসি

শাকেরা আরজু শিমু

প্রকাশিত : ১৫:৪১, ৩ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ২১:১৩, ৩ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

কথা বলছি নিজের বিষয়ে, ৪ বছরের কন্যা সন্তানের মা আমি, জব করি। নিজেকে নিয়ে কখনো ভাবি না, কোথাও গেলে পোশাক পড়তে বাছাই করতে ভালো লাগে না, চুল সাজাতে ভালো লাগে না, বেড়াতে ইচ্ছে করে না, শপিং ভালো লাগে না, নিজের শখের ফটোগ্রাফি করি না, গান শুনতে ইচ্ছে করে না, মুভি দেখতে ইচ্ছে করে না, মজার কিছু দেখলেও শুনলেও হাসি পায় না, ঠিক যেন পানি না পেয়ে নেতিয়ে পড়া একটি ফুল গাছ। নিঃশ্বাস নিচ্ছি কিন্তু বেচেঁ নেই মনে হতো। সমাজ সংসার আমাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতে লাগলো। সবার অপ্রিয় হতে থাকলাম।

বোন ডাক্তার, তাকে সব বললাম, বললো Anhedonia হয়েছে। মানে ডিপ্রেশনে ভুগছি। কি করবো ব্যস্ত এই জীবনে, নিজের জন্য সময় নেই যেন একেবারেই!

কিছুদিন ভাবলাম, একবার দেখিই না চেষ্টা করে এর থেকে বের হওয়া যায় কিনা। অনিচ্ছা সত্বেও ভালো না লাগার কাজ গুলি করতে লাগলাম। তবে একটু একটু করে। খুঁজতে থাকলাম কোথাও একটু ভালোলাগা আছে কিনা। ফটোগ্রাফিতে ভালোলাগা ফিরিয়ে আনলাম, দিনে সময় পেলে গান শুনতে লাগলাম। বাসায় মেয়ের সাথে সময় কাটানো, ওর পছন্দের কাজ করা, অফিসে বাইরে সবার সাথে হেসে কথা বলার চেষ্টাও করলাম। দেখি আশপাশটাও বদলে যাচ্ছে আমার সাথে সাথে। 

যদিও প্রশ্ন এসেছে কেন এত ছবি তোল, আগে তো তুলিনি, রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছ, আরো নানা কিছু। তবে যে যাই বলুক, ভেতরে ভেতরে টের পাচ্ছিলাম বাচঁতে শুরু করেছি আবার।

এখন কেউ নেগেটিভ কথা বললে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। অনেক কটু কথা, খোঁচা, বিষণ্ণ, বিপন্ন, বিষ্ময়কর  পরিস্থিতিতেও নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করি। নিজে পাহাড়ে উঠতে না পারলেও কেউ উঠলে তাকে স্বাগত জানাই।

ভালো লাগে এমন কাজ করতে লাগলো। যেমন কাউকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা, কোথাও আর্থিক সাহায্য না পারলে গায়ে খেটে দেয়া। অসামঞ্জস্য থাকবেই, এটা মেনে নিয়ে সামঞ্জস্যতা আনার চেষ্টা করতে লাগলাম।

আমাকে আমার কথা সবার ভালো লাগতেই হবে এমনটা ভাবা বাদ দিলাম। সবার ভালো দিকগুলোতে দৃষ্টি দিতে থাকলাম। খারাপ দিকগুলো একপাশে রেখে চলতে শুরু করলাম। চলতে চাই এমনভাবে, রাখো না সবাই।  

সমাজ, সংস্কার, শারীরিক বা মানসিক নানা কারণে অনেক সময় মেয়েদের নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পরিবার, অফিসের কলিগ, বন্ধু, এই পুরো সমাজই পারে আবার তাকে বাচঁতে শেখাতে। শুধু নিঃশ্বাস নেয়া নয়, স্বপ্ন নিয়ে বাচঁতে শেখাতে। একটু পজেটিভ কথা ইতিবাচক পরিবেশ একজন মানুষকে নিয়ে আসতে বিষন্নতার রাজ্য থেকে । জীবন তো সরলরেখা নয়, তারপরও ‘সবাই একসাথে’ ভাবি না সবার জন্য।

 নিজেকে অবহেলা, লুকিয়ে রাখা নয় এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই, পরিবার ও সমাজের এগিয়ে চলা।

এমবি//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি