ঢাকা, সোমবার   ১৩ মে ২০২৪

সন্তান হারা বাবার আহাজারি

প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে আবেদন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৫, ২৫ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৫৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

‘আমার সন্তান দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার কাছে সব ধরণের তথ্য উপাত্ত রয়েছে, যা আমি ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু দিনেরপর দিন ঘুরেও এর সুষ্ঠু বিচার আমি পাচ্ছি না। এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই।’

অশ্রুসিক্ত চোখে সন্তান হত্যার বিচার চাইলেন বাবা দিল মোহাম্মদ খান। তার দাবি একমাত্র সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হত্যারপর এটি ভিন্নখাতে ঘুরাতে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে হত্যাকারিরা।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা বাবা দিল মোহাম্মদ খান জানান, চলতি বছরের ৬ জুলাই; রাত ১০টা ৪০ মিনিট। তার স্ত্রী গৃহিণী শিউলী বেগমকে মোবাইল ফোনে কল করা হয় অচেনা এক নম্বর থেকে। ফোনের ওপাশ থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে জানানো হয়, তার ছেলে ইরফান খান রাকিব (১৭) মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর মডার্ন হারবাল সেন্টারের উল্টো পাশে ‘দুর্ঘটনার’ শিকার হয়েছেন। এখন সে তেজগাঁও বিজি প্রেসের সামনে আছেন।

খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্বজনরা। ততক্ষণে রাকিবকে পাঠানো হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে রাকিব ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ মারা গেছে, এটা বিশ্বাস করছে না তার পরিবার। কারণ এমন কিছু ক্লু ও তথ্য পাওয়া গেছে, যেসব থেকে তারা মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেই দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।

এ বিষয়ে দিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘ঘটনার সপ্তাহ খানেক আগেই রাকিবকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল বখাটে তরুণ শাহরিয়ার জয়। ‘বড় ভাই’ না বলায় তাকে এ হুমকি দেওয়া হয়। এলাকার ‘বড় ভাই’ মমিনকে দিয়ে রাকিবকে হত্যা করা হবে বলে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে রাকিবকে জানিয়েছিল জয়।’

তিনি জানান, দুর্ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে রাকিবের ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত একই এলাকার বাসিন্দা জামিল হায়দার চৌধুরী একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রাকিব চলে গেল না ফেরার দেশে’।

আবার ঘটনার ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ রাকিবের সিনিয়র বন্ধু সাদি দুর্ঘটনাস্থল হিসেবে যে স্পটের কথা বলছে, সেখানে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার সময় রাকিবের প্রাইভেটকারে ছিল সাদি। রাকিবের দুটি মোবাইল নম্বরের বিভিন্ন তথ্যও রহস্যজনকভাবে কেউ মুছে দিয়েছে।

এরপর রাকিবের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা দীল মোহাম্মদ খান বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছিলেন। কিন্তু বাদীর দাবি, সেই মামলার এজাহারের তথ্য পাল্টে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাদ দেওয়া হয়েছে সন্দেহভাজনদের নাম।

তিনি জানান, ভুল তথ্যের এই এজাহার তৈরির পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অনাথ মিত্রও রহস্যজনক আচরণ করছেন তার সঙ্গে। বাদী পক্ষ থেকে যেসব ক্লু দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ে কোনো উদ্যোগ নেননি তিনি।

এ অবস্থায় পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে আবেদন করে মামলাটি থানা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে স্থানান্তর করেছে বাদী পক্ষ। কিন্তু এখনও কোন সঠিক সমাধান পাচ্ছেন না তারা।

দীল মোহাম্মদ খানের বক্তব্য- ‘আমার ছেলে যদি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় তবে আমার কোন দুঃখ থাকবে না। কিন্তু যেখানে এ ঘটনা ঘটেছে বলা হচ্ছে সেখানে অনেকগুলো সিসিটিভির ক্যামেরা রয়েছে তার একটাতে হলেও সেই সময়ের ভিডিও আমাকে দেখানো হোক। আমার কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করলেই স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে যে এটি পরিকল্পীত হত্যা। আমি মাননিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার দাবি করছি। প্রশাসন যাতে এর সঠিক বিচার করে।’

দেখুন নিহত ইরফান খান রাকিবের বাবার বক্তব্য :

উল্লেখ্য, সিদ্ধেশ্বরীরের খন্দকার রোডের বাসিন্দা দীল মোহাম্মদ খানের ছেলে ইফরান খান রাকিব মগবাজার ন্যাশনাল ব্যাংক পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ৬ জুলাই সন্ধ্যার পর রাকিব তার বোনের স্বামীর প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-৪২-২৭৪৯) নিয়ে বন্ধু রাফিদসহ বেড়াতে যায়। প্রাইভেটকার চালাচ্ছিল রাফিদ। ভিকারুন্ননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে গাড়িতে ওঠে রাকিবের বন্ধু সাদি। তিন বন্ধু প্রাইভেটকার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ায়।

সাদির ভাষ্যমতে, মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর পার্কিং করে রাখা একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে পেছন থেকে গিয়ে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায় প্রাইভেটকার। এ সময় রাকিব গুরুতর আহত হয়। গাড়ির চালকের আসনে থাকা রাফিদ তখন পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় সাদি কোনো রকমে ভাঙাচোরা প্রাইভেটকারটি চালিয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকার সিটি ফিলিং স্টেশনে আসে। এ সময় প্রাইভেটকারের সামনে একটি পুলিশের গাড়ি পড়ে। পুলিশের গাড়ি দেখে ভয়ে সাদি পালানোর চেষ্টা করে। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ সাদিকে আটক করে। প্রাইভেটকারের ভেতর থাকা রাকিবকে আহতাবস্থায় রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি