‘বাঁচার আকুতি জোবায়েদের, বর্ষা বলে- তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না’
প্রকাশিত : ১৬:০২, ২১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:১২, ২১ অক্টোবর ২০২৫

ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদের আকুতিতে মন গলেনি ছাত্রী বর্ষার। নিজেকে বাঁচাতে বর্ষার কাছে অনুরোধ করেন জোবায়েদ, কিন্তু বর্ষা বলে- তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না। চোখের সামনে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে যায়। এই নির্মম ও হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বিবরণ দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন লালবাগ থানার ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি।
তিনি বলেন, ‘জোবায়েদ তখনো মারা যায়নি। বাঁচার জন্য দ্বিতীয় তলা থেকে উপরে ওঠে। তিন তলায় দাঁড়িয়ে ছিল বর্ষা। তখন বর্ষাকে দেখে জুবায়েদ বলে, আমাকে বাঁচাও। কিন্তু বর্ষা বলে, তুমি না মরলে আমি মাহিরের হবো না। বর্ষা তার মৃত্যু কনফার্ম করে যায়। তখন জুবায়েদ বাঁচার জন্য দরজায় নক করেও পায়নি।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম পিপিএম লিখিত বক্তব্যে বলেন, জুবায়েদ হুসেন (২৫) বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে (১৯) প্রাইভেট পড়াতো গত এক বছর যাবৎ। গত চার মাস থেকে জুবায়েদকে পছন্দ করত বর্ষা।
‘এর আগে ঘটনার প্রধান আসামি মাহির রহমান (১৯) এর সঙ্গে ৯ বছর প্রেম ছিল বর্ষার। জোবায়েদকে বর্ষা যে পছন্দ করে, তা মাহির জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়। তবে সম্প্রতি সময়ে জোবায়েদকে আর ভালো লাগতো না বর্ষার। বর্ষা এ ঘটনা তার সাবেক প্রেমিক মাহিরকে জানায়। এরপর বর্ষার জীবন থেকে জোবায়েদকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে মাহির। আর এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে বর্ষা। গত মাসের শেষের দিকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে মাহির ও বর্ষা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত পরশু জোবায়েদের সঙ্গে কথা বলে তার অবস্থান জানতে চায় বর্ষা। তার অবস্থান জানার পর সে তথ্য মাহিরকে জানায় বর্ষা। বাসার নিচে আসা মাত্রই জোবায়েদের সাঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় মাহিরের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন– মামলার তিন নম্বর আসামি মাহিরের বন্ধু ফারদিন আহম্মেদ আয়লান। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি থেকে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। তখন মাহির তার গলায় ছুরিকাঘাত করে। এসময় মাহির সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করে। ওঠার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে যায় জোবায়েদ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জোবায়েদের।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটি ত্রিভুজ প্রেম। বর্ষা মেয়েটি চালু। দুইদিকেই সম্পর্ক বজায় রাখে। মিন্নির ঘটনার প্রায় কাছাকাছি। বর্ষা মাহিরকে বলে, জোবায়েদকে না সরালে তোমার কাছে ফিরতে পারবো না। বর্ষার পরিকল্পনা অনুসারে জোবায়েরকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় মাহির ও তার বন্ধু আয়লানসহ তিনজন। ঘটনার দিন মাহির জোবায়েদকে বর্ষার থেকে সরে আসতে বলে। জোবায়েদ জানায়, আমি সরে আসবো কেন। তখন তাদের মাঝে তর্কাতর্কি হয়। এরপর এ হত্যাকাণ্ড।’
এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে আজ (মঙ্গলবার) বংশাল থানায় মামলা দায়ের করেন জুবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত। মামলার তিন আসামিরা হলেন - মাহির রহমান, বার্জিস শাবনাম বর্ষার, ফারদিন আহম্মেদ আয়লান। এছাড়া আরও অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
এএইচ
আরও পড়ুন