ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাবা তোমায় মনে পড়ে

এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ

প্রকাশিত : ২১:১৮, ২১ মার্চ ২০২১ | আপডেট: ২১:২৮, ২১ মার্চ ২০২১

তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। স্কুলে ক্যারাম খেলতে গিয়ে রাগারাগি করে এক বন্ধুর মাথা ফাটায়া ফেলি, ফলাফল ভিক্টোরিয়া মিশন স্কুল থেকে অব্যাহতি। পরের বছর গন্তব্য জাদরেল স্কুল মুকুল নিকেতন। রতনদার নাম শুনলে তখন বাঘে-হরিণে একঘাটে পানি খায়। সেই স্কুলে ১৫০০ ছাত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে ১০ম হয়েছিলাম।

প্রথম ক্লাসের দিন বাবা রিক্সা ভাড়া দিলেন আর আমি সেই টাকায় বুট বাদাম কিনে খেতে খেতে স্কুলে গিয়ে দেখি ছুটি হয়ে গেছে। স্কুলের ড্রেস বানাতে বাবা টেইলার্স দোকানে নিয়ে গেলেন, মাপ ঝোক এর পর বাবা রিক্সা ভাড়া দিলেন আমি চলে আসলাম। বাবা বসে স্থানীয় পত্রিকা পড়ছেন আর তখনই বাবার চিৎকার মাস্টার কাচি থামান, কি ছিলো পেপারে?? 

ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে নতুন একটি শিফট চালু হচ্ছে; বাবা আমাকে জিলা স্কুলে ভর্তি করাবেন। আবার ভর্তি ফরম; আবার পরীক্ষা। কয়েক জেলা থেকে অভিবাবক এসেছে ফরম নিতে, সাজসাজ রব, জিলা স্কুল মানে বিশাল কিছু। আমাদের চতুর্থ শ্রেনির জন্য ফরম ছিল ১৫০টি কিন্তু ভর্তি করবে মাত্র ৪০ জন। পরীক্ষা দিলাম, বাবা রেজাল্ট আনতে গেল স্কুলে। বোর্ডে রেজাল্ট টানানো- বাবা ৪০ নাম্বার থেকে উপরের দিকে দেখছেন ৩০ এ দেখেন আমার কাজিনের নাম। আবার ৩০ থেকে ২০ কিন্তু আমার নাম নেই, বাবা ঘামছেন একবুক সাহস সঞ্চয় করে বাবা ১ থেকে দেখা শুরু করলেন। ৫ এ এসে চোখ আটকে গেল বাবার। ঘরে ফেরার সময় মিষ্টির সাথে একটা গিফট এর প্যাকেট। এলবা ব্র্যান্ড এর একটা ডিজিটাল ঘড়ি, ক্যাসিওর পাশাপাশি এলবাও তখন তুমুল জনপ্রিয় ঘড়ি, আমার খুশি আর দেখে কে !!! 

যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি তখন আমাদের বেতন ছিল ৬ টাকা আর টিফিন ১২ টাকা। আমি পুরো একবছর স্কুলের বেতন দেই নাই। সব মেরে দিছি। ফাইনাল পরীক্ষার পরেই আমি দাদা বাড়ি চলে গেলাম মাইর খাওয়া থেকে বাঁচতে। বাবা গেলেন রেজাল্ট আনতে, আমি তালিকায় প্রথম দিকেই ছিলাম কিন্তু রেজাল্ট কার্ড দিচ্ছে না বকেয়া থাকার জন্য। বাবা বকেয়া পরিশোধ করে রেজাল্ট নিয়ে দাদা বাড়ি আসলেন। আমি ভয়ে দাদার পেছনে, দাদার ভয়ে বাবা আর এগুলেন না। 

এমন অনেক টুকরো টুকরো গল্পকথা ছিল বাবার সাথে কিন্তু বেশিদিন সেই গল্প এগুলো না। বিধাতার চিত্রনাট্য অন্যরকম ছিল। যে সময়টায় বাবাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিল সেই সময়ে বাবাকে জীবন চিত্রনাট্য থেকে বিধাতা তার কাছে নিয়ে গেলেন। 

১৯৯২ সনের এই দিনে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। সেলুলয়েড এর ফিতায় বাবার কোন ছবি নেই কিন্তু আমার চোখে এখনো ভাসে সাদা পাঞ্জাবি পরা কালো স্ট্রাইপ এর প্যান্ট পরা আমার বাবার সেই ছবি। আমি আর আমার ছোট বোন বাবাকে কিছুটা কাছে পেয়েছি। বাকী তিন ভাই বাবা কী বোঝার আগেই; বাবার আদর পাওয়ার আগেই বাবা হারা হয়েছে। আজ বাবা নেই আটাশ বছর পূর্ণ হলো।

এসি

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি