ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাসাবাড়িতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাসা বাড়িতে সাধারণত যেসব কারণে আগুন লাগে কিংবা দুর্ঘটনা ঘটে তার প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়ার সময় এসেছে। কেননা নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার পর এসি ব্যবহার, গ্যাসের লাইনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করতে দেখা গেছে ব্যবহারকারীদের। 

বাংলাদেশে গ্যাসের লাইনে লিক থাকা, এসি বিস্ফোরণ, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের মত ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে বাসা বাড়িতে। তাই বাসা বাড়িতে সাধারণত যেসব কারণে আগুন লাগে এবং সেসব দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব বিষয়ের দিকে নজর রাখা প্রয়োজন তা এবার জেনে নিন-

বৈদ্যুতিক গোলযোগ
বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তার সিংহভাগের উৎস বৈদ্যুতিক গোলযোগ। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে হওয়া মোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ৩৯ ভাগই ছিল বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, বিদ্যুতের লোড অনুযায়ী কেবল ব্যবহার না করা, মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার না করা, ভবনের নকশায় দুর্বলতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ইত্যাদি নানা কারণে একটি ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি হতে পারে।

পুরনো ওয়ারিং সিস্টেমের একটি ভবনে যদি এসি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, স্মার্ট টিভির মত যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ঐ ওয়ারিং সিস্টেম লোড নিতে পারবে না এবং শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি তৈরি হবে। ছোট ছোট বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, যেমন মাল্টিপ্লাগ বা সকেট কেনার ক্ষেত্রে আমরা টাকা বাঁচাতে কম দামীগুলো কিনে থাকি এবং মাল্টিপ্লাগে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিনের মত ভারী যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করি। এই কমদামী মানহীন মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করা বা একটি প্লাগে একাধিক বৈদ্যুতিক যন্ত্র সংযুক্ত করে চালানো শর্ট সার্কিটের একটি বড় কারণ।

বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। দীর্ঘসময় এসি চালিয়ে রাখার ফলে ভবনের বৈদ্যুতিক সক্ষমতার ওপর চাপ পড়তে পারে, যেখান থেকে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আবার দীর্ঘ সময় লাইট বা ফ্যান অন করে রাখা, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের পাওয়ার সোর্স বন্ধ না করার ফলেও শর্ট সার্কিটের সূত্রপাত হতে পারে।

বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে গ্যারান্টি বা ওয়ারান্টিসহ প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে হবে। এসি কেনার ক্ষেত্রে টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনেকে ব্র্যান্ডের এসি না নিয়ে নন ব্র্যান্ডের সস্তাগুলো নিয়ে থাকেন। কিন্তু এরকম যন্ত্র কেনার সময় দাম বেশি হলেও ভালো ব্র্যান্ডের পণ্য কেনা উচিত।

গ্যাস লাইনে ত্রুটি
গ্যাসের লাইনে ত্রুটি থাকার কারণে গ্যাস লিক করে বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের মত ঘটনা বাংলাদেশে প্রায়ই শোনা যায়। দীর্ঘসময় যাবত গ্যাস লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ না করা, অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ নেয়া, অপরিকল্পিত বিভিন্ন কারণে গ্যাস বিস্ফোরণের মত ঘটনা ঘটে থাকে।

ব্যবহারকারীদের অসতর্কতা ও অসচেতনতার কারণে ২০১৯ সালে দেশের মোট অগ্নিকাণ্ডের অন্তত ১৮ ভাগের উৎস ছিল চুলার আগুন থেকে। তবে গ্যাসের লাইনে সমস্যা থাকার কারণেও রান্নাঘর থেকে বাড়িতে আগুন লাগতে পারে। শহরের বস্তি এলাকাগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় চুরি করে অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ নেয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে হয়তো গ্যাসের সংযোগ ত্রুটিপূর্ণ থাকে। এরকম সংযোগ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। নিয়মিতভাবে বাসার গ্যাসের সংযোগ মেকানিকের মাধ্যমে পরীক্ষা করার পাশাপাশি লাইনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অতিসত্বর যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা উচিত।

গ্যাস সিলিন্ডার
বাংলাদেশে গত কয়েকবছরে রান্না করার জন্য গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের মত দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মত রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও কমদামী এবং মানহীন সিলিন্ডার কেনার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাংলাদেশে যেসব গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যায়, সেগুলোর অনেকগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে তৈরি করা হলেও অনেক সিলিন্ডারই নকল হয়ে থাকে। এই নকল সিলিন্ডারগুলোর ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি হয়। আবার অনেক সময়ই মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সিলিন্ডারগুলোর সাধারণত ১০ বা ১৫ বছরের মেয়াদ থাকে। ওই মেয়াদের পরে সেগুলো ব্যবহার করা হলে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক সময় সিলিন্ডার পরিবহণও যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী না করায় সেগুলোতে ত্রুটি দেখা যেতে পারে। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় গ্যাস সিলিন্ডার রান্নাঘরে চুলার নিচে বদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। বদ্ধ পরিবেশে না রেখে খোলামেলা জায়গায় সিলিন্ডার রাখলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে। একটু লম্বা পাইপ ব্যবহার করে বারান্দায় সিলিন্ডার রাখার চেষ্টা করা উচিত ব্যবহারকারীদের।এছাড়া সিলিন্ডার কাত করা বা সোজা করে না রাখার ফলেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অনেক সময়ই দেখা যায় গ্যাস শেষ হয়ে গেলে সিলিন্ডারের পুরো গ্যাস ব্যবহার করার জন্য মানুষ সিলিন্ডার কাত করে, ঝাঁকিয়ে আবার সেটি ব্যবহার করে। কাত করলে তরল গ্যাস সিলিন্ডারের মুখে চলে আসতে পারে, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করছে কি না, তা বোঝার জন্য পাইপের কাছে নাক নিয়ে গন্ধ নেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। 

সূত্র: বিবিসি

এএইচ/এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি