ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বে দ্বিতীয়বারের মতো এইডস রোগী সুস্থ হলেন যেভাবে?

প্রকাশিত : ১০:২৬, ৬ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১০:৩৯, ৬ মার্চ ২০১৯

পৃথিবীতে এইডসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো একজন এইচআইভি আক্রান্ত রোগীকে এইডস ভাইরাসমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এটিকে প্রাণঘাতী এইডস ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই রোগীর নাম, পরিচয়, বয়স বা জাতীয়তা, সবই গোপন রাখা হয়েছে। তবে যেহেতু যুক্তরাজ্যে তাকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সেকারণে তাকে শুধু ‘লন্ডন রোগী’ নামে ডাকা হচ্ছে। এরসাথে এটুকুই বলা হয়েছে এই রোগী পুরুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এইচআইভি সংক্রমণের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু এর ধারাবাহিকতায় একদিন এই ভাইরাস থেকে পুরোপুরি নিরাময়ের জন্য বাস্তবসম্মত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

কিভাবে এইডস ভাইরাসমুক্ত করা সম্ভব হলো?

‘লন্ডন রোগী’ নামে ডাকা ব্যক্তির দেহ এইডস ভাইরাসমুক্ত করা হয়েছে স্টেম সেল বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে। আর এই অস্থিমজ্জা আরেকজন ব্যক্তির দেহ থেকে নেওয়া হয়েছে।

যিনি তার দেহ থেকে অস্থিমজ্জা দান করেছেন, তিনি ছিলেন এইচআইভি প্রতিরোধী একজন সুস্থ ব্যক্তি। যাতে এই সুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে নেওয়া অস্থিমজ্জা এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা জিনগত রুপান্তরের মাধ্যমে লন্ডন রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করেছিলেন তিন বছর আগে। শেষপর্যন্ত চিকিৎসকরা তাকে ভাইরাসমুক্ত করতে পেরেছেন সফলভাবে। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে তার দেহেএই ভাইরাস আর দেখা যায়নি।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, ইমপেরিয়াল কলেজ, ক্যামব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই চিকিৎসা ও গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন।

‘লন্ডন রোগী’ কি পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে?

চিকিৎসকরা বলেছেন, এই রোগী এখন এইচআইভি`র পুরোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন না। তার রোগ উপশম হয়েছে। তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন, তা বলার সময় ওখনও আসেনি।

এই রোগীর দেহে এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০০৩ সালে। ২০১২ সালে তার এক ধরণের ব্লাড ক্যান্সার শণাক্ত হয়। এরপর চার বছর ধরে স্বাভাবিক চিকিৎসা চালিয়ে ঐ রোগী ক্যান্সারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা হিসেবে চিকিৎসকরা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা নেন। সে অনুযায়ী অস্থিমজ্জার দাতা খোঁজা হয় এবং শেষ পর্যন্ত দাতা পাওয়া গেলে প্রতিস্থাপন করা হয় তিন বছর আগে।

এই রোগীর আগে প্রথম একজন রোগীকে এইডস ভাইরাসমুক্ত করা হয় ২০০৭ সালে জার্মানির বার্লিনে। তার দেহেও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে একইভাবে ভাইরাসমুক্ত করা হয়েছে।

প্রথম এইডস ভাইরাসমুক্ত করা রোগীকে ‘বার্লিন রোগী’ নামে ডাকা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সেই বার্লিন রোগী এখনও ভাইরাসমুক্ত আছেন। প্রথম সেই রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে ভাইরাসমুক্ত করা হলো।

কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগ সংক্রমণ বিভাগের ড. অ্যানড্রু ফ্রিডম্যান বলেছেন, ‘এই পদ্ধতিকে একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলা যায়। তবে বিশ্বে লক্ষ লক্ষ এইচআইভি আক্রান্ত বা এইডস রোগীর জন্য এই চিকিৎসা সুবিধাজনক হবে না। কারণ এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল, জটিল এবং ঝঁকিপূর্ণ। এটি একেবারে টেকসই ব্যবস্থা নয়।’

তবে তিনি এতে আশার আলো দেখছেন। তিনি মনে করছেন, এখন এইডস এর বিরুদ্ধে সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি বের করতে সুবিধা হবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি