ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

বেবী মওদুদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩৯, ২৫ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১১:৩০, ২৫ জুলাই ২০২০

সাংবাদিক-লেখক, নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং সাবেক সংসদ সদস্য এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। 

বেবী মওদুদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন, কলকাতায়। তার পুরোনাম আনা মাহফুজা খাতুন। তবে বেবী মওদুদ নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত। এ নাম তাকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে সাহিত্য, সাংবাদিকতার জগতে নিরলস, সাহসী, প্রতিবাদী ইতিবাচক উদ্যোমের জন্য। ’৬৭ সাল থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। এই একই সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত হন। ’৬৯ এ আসাদ হত্যার পর রাজপথের মিছিলে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ঠিক সেই সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের তিনি ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।

’৬৭ থেকে ’৭০ পর্যন্ত তিনি রোকেয়া হলের সাহিত্য সম্পাদক এবং বাংলা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। লিফলেট তৈরী, ম্যাগাজিন প্রকাশ, রচনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে তার দারুণ উৎসাহ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় অবরুদ্ধ ঢাকায় থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক কাজ করেছেন। যুদ্ধ নির্যাতিত নারীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঔষধপত্র জোগার, ঢাকার এবং বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে তিনি জীবন বাজী রেখে কাজ করেছেন। 

মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের আগে ১৯৬৭-৬৮ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকায় কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।

শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও বেবি মওদুদের খ্যাতি দেশজুড়ে। প্রগতিশীল রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেবী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তথ্য অধিদপ্তরে গবেষণা সহকারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ নারী সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংক এবং ইউনিসেফের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে গেছেন।

এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, মানবতার আন্দোলনে হল্যান্ড এবং সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোও ভ্রমণ করেছেন।

১৯৬৭ সালে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন বেবী মওদুদ। সংবাদ, ইত্তেফাক, চিত্রালী, আজাদ, গণবাংলা, মুক্তকণ্ঠ, বিবিসি, বাসস, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক ললনা ও সাপ্তাহিক রানারে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মৃত্যুর আগে বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কমের সামাজিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। 

ছোটবেলা থেকেই দৈনিক পত্রিকায় তার ছোটদের জন্য লেখালেখির হাতেখড়ি, অনেক বইও লিখেছেন তিনি তাদের জন্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লিখে গেছেন জীবনী গ্রন্থ ‘স্মৃতিচারণ’, গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ ও অনুবাদ প্রবন্ধ। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২০। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক গ্রন্থ এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশের পেছনেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর প্রকাশনা, প্রচার ও আন্দোলন সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। মহিলা সমাচার প্রকাশ করার দায়িত্বও ছিলো এক সময়ে তাঁর। 

নব্বইয়ের দশকে বেবী মওদুদ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন জোরালো করেন। নারীর অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলনেও রাখেন অসামান্য ভূমিকা। ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি