ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪

ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন অপরাধ না করে সেজন্য সর্বোচ্চ সাজা: আদালত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৩০, ২৯ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৩৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৪ আসামির সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাসের জেল দিয়েছেন আদালত। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন অপরাধ না করে সেজন্য এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে বলে আদালত পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন।   

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালত আজ সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে এ রায় দেন।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল গণমাধ্যমকে জানান, এ মামলায় ১৫ টি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছেন আদালত। ১৫ টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। আধা ঘন্টায় এ রায় দেওয়া হয়েছে।

মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ক্ষমতার ‍উচ্চ পর্যায়ে থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধ টাকা সংগ্রহ করেছেন। অন্য আসামিদের যোগসাজসে সেগুলো আত্মসাত করেছেন, এটি আদালতে কাম্য নয়। ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন অপরাধ না করেন সেজন্য এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলো।

পর‌্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেছেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর পরিচয় গোপন করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই তহবিলে ব্যাক্তিগত কোনো টাকা দেন নি। অন্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। এমনকি দলীয় ফান্ডের টাকাও সেখানে নেন। সেই টাকা মেট্রোমেকার দিয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু মেট্রো মেকার সেই টাকা দেয় নি বলে সংস্থাটি পরে জানায়।

আদালত বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে আদায় করা টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মসাত করেন খালেদা জিয়া।

মোশাররফ হোসেন কাজ বলেন, ৩৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত ১৫ টি ফাইন্ডিংসের আলোকে রায় দেন।   

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্রের পর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায়ও দণ্ডিত হওয়ায় দুটি সাজা আলাদাভাবে কার‌্যকর হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আরো ৩ আসামির ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তারা হলেন-খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান। তাদের প্রত্যেকের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ৪২ কাটা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সকাল খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচারকাজ শুরু করেন আদালত। বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬ মামলার মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয় মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। রায় ঘোষণা কেন্দ্র করে কারাগার থেকে আসামি মনিরুল ইসলাম খান ও জিয়াউল ইসলাম মুন্নাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আদালতে আসেননি। অপর আসামি হারিছ চৌধুরী পলাতক।

গত ১৬ অক্টোবর রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় পুরনো বিশেষ জজ আদালতে প্রবেশ করার সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আসামি পক্ষের আবেদন খারিজ হওয়ায় রায় হতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

তিনি আরও বলেন, কারাগারে থাকাবস্থায় চ্যারিটেবল মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ৯ মাসে তিনি একবার আদালতে এসেছেন। তিনি মামলার শুনানিতে আসবেন না বলে একাধিকবার বলেছেন যা জেল কাস্টডিতে লেখা আছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের সময় দেওয়ার পরেও যুক্তিতর্কে উপস্থিত হননি। এজন্য বিচারক এ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

এদিকে বেলা ১১টায় আদালতে এসেছেন অস্থায়ী ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দেখা গেলেও আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবীকে দেখা যায়নি।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরি পলাতক। খালেদা জিয়াসহ তিনজন গ্রেফতার রয়েছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। একই মামলায় খালেদার ছেলে তারেক রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়। ওই মামলায় গত ৮ এপ্রিল থেকে কারাবন্দী খালেদা জিয়া।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি