ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মহাদেব সাহার ত্রয়ী ভলোবাসা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৫০, ২৪ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:৫৩, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

১. ভালোবাসা

ভালোবাসা তুমি এমনি সুদূর

স্বপ্নের চে’ও দূরে,

সুনীল সাগরে তোমাকে পাবে না

আকাশে ক্লান্ত উড়ে!

ভালোবাসা তুমি এমনি উধাও

এমনি কি অগোচর

তোমার ঠিকানা মানচিত্রের

উড়ন্ত ডাকঘর

সেও কি জানে না? এমনি নিখোঁজ

এমনি নিরুদ্দেশ

পাবে না তোমাকে মেধা ও মনন

কিংবা অভিনিবেশ?

তুমি কি তাহলে অদৃশ্য এতো

এতোই লোকোত্তর,

সব প্রশ্নের সম্মুখে তুমি

স্থবির এবং জড়?

ভালোবাসা তবে এমনি সুদূর

এমনি অলীক তুমি

এমনি স্বপ্ন? ছোওনি কি কভু

বাস্তবতার ভূমি?

তাই বা কীভাবে ভালোবাসা আমি

দেখেছি পরস্পর

ধুলো ও মাটিতে বেঁধেছো তোমার

নশ্বরতার ঘর!

ভালোবাসা, বলো, দেখিনি তোমাকে

সলজ্জ চঞ্চল,

মুগ্ধ মেঘের মতোই কখনো

কারো তৃষ্ণার জল।

 

২. ভালোবাসা মরে গেছে গত গ্রীষ্মকালে

ভালোবাসা মরে গেছে গত গ্রীষ্মকালে

উদ্যত বাহুর চাপে, ধুলোমাটি কাদা লেগে গায়ে

শীতেতাপে ঝরে গেছে তার বর্ণ, মেধা

স্পর্শ করে আশি এই প্রেমহীন নারীর শরীর

মৃত চুল, উত্তাপবিহীন কিছু বয়সের ধুলো,

নীলাঞ্জনশোভিত নারীর মুখ

ফিকে থির পলকবিহীন

দুই চোখ খেয়ে গেছে পৌষের দুই বুড়ো কাক

তাহাকেই ধরে আছি, বেঁধে আছি

অসহায় স্তব্ধ আলিঙ্গনে;

বহু বছরের এই রোদবৃষ্টিজলে, ঝড়ে, কুয়াশায়

নষ্ট হয়ে গেছে প্রেম, মুখের গড়ন তার, দেহের বাঁধন

অজন্তা মূর্তি লাস্য, শিল্পের মতন

সেই গূঢ় সম্ভাষণ

তার কতোখানি বাকি আছে? অবশিষ্ট আছে?

তাহারা কি থাকে কেউ অনাদরে উপেক্ষায়

সারাদিনে একবেলা জলঢালা মৌন কেয়ারিতে

অজ্ঞাত নফর, তাহারা কি থাকে?

স্পর্শহীন, পরিচর্যহীন একাকী নিঃসঙ্গ আর কতোকাল

দগ্ধ হবে প্রেম।

 

৩. ভালোবাসা, আমি তোমার জন্য

ভালোবাসা আমি তোমাকে নিয়েই

সবচেয়ে বেশি বিব্রত আজ

তেমাকে নিয়েই এমন আহত

এতো অপরাধী, এতো অসহায়!

তোমাকে নিয়েই পালিয়ে বেড়াই

তোমাকে নিয়েই ব্যাকুল ফেরারী।

ভালোবাসা তুমি ফুল হলে তার

ফুলদানি পেতে অভাব ছিলো না,

মেঘ হলে তুমি সুদূর নীলিমা

তোমাকে দিতাম উড়ে বেড়াবার;

জল হলে তুমি সমুদ্র ছিলো

তোমারই জন্য অসীম পাত্র-

প্রসাধনী হলে তোমাকে রাখার

ছিলো উজ্জ্বল অশেষ শো-কেস,

এমনকি তুমি শিশির হলেও

বক্ষে রাখার তৃণ ছিলো, আর

সবুজ পাতাও তোমার জন্য

হয়তোবা হতো স্মৃতির রুমাল।

ভালোবাসা তুমি পাখি হতে যদি

তোমাকে রাখার ভাবনা কি ছিলো

এই নীলকাশ তোমারই জন্য

অনায়াসে হতো অনুপম খাঁচা!

কিন্তু তুমি তো ফুল নও কোনো

মেঘ নও কোনো দূর আকাশের,

ভালোবাসা তুমি টিপ নও কোনো

তোমাকে কারো বা কপালে পরাবো;

ঘর সাজাবার মেহগনি হলে

ভালোবাসা তুমি কথা তো ছিলো না

তুমি তো জানোই ভালোবাসা তুমি

চেয়েছো মাত্র উষ্ণ হৃদয়!

খোঁপায় তোমাকে পরালেই যদি

ভালোবাসা তুমি ফুটতে বকুল,

কারো চোখে যদি রাখলেই তুমি

হতে ভালোবাসা স্নিগ্ধ গোধূলি-

তাহলে আমার তোমাকে নিয়ে কি

বলো ভালোবাসা এমন দৈন্য,

আমি তো জানিই তোমার জন্য

পাইনি যা সে তো একটি হৃদয়

সামান্যতম সিক্ত কোমল,

স্পর্শকাতর অনুভূতিশীল!

 

[মহাদেব সাহা ১৯৪৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধানঘড়া গ্রামে পৈতৃক বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গদাধর সাহা এবং মাতা বিরাজমোহিনী। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৯৩ টি। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার কারণে তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন।]

 

/ডিডি/টিকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি