ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪

মহাপুরুষ শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১২:০৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। বাঙালি ধর্ম সংস্কারক তিনি। যিনি অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ নামক সংগঠনের প্রবর্তক। এ মহাপুরুষ ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুরে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত। তিনি ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে দেহত্যাগ করেন।

অনুকূলচন্দ্রের পিতা শিবচন্দ্র ছিলেন নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মণ। তার জননী মনোমোহিনী দেবী ছিলেন একজন স্বতীসাধ্বী রমনী। তিনি উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহণ করেন।

ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র হিন্দুধর্ম তথা হিন্দু সমাজের একজন মহাপুরুষ, বিশ্ব মানবতাবাদী এবং পরম কৃষ্ণ ভক্ত। তার প্রায় ১০০টির মত গ্রন্থ রয়েছে। যে গুলো ৮০ ভাগই নীতিশিক্ষা বিষয়ক। কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে, সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে বইগুলোতে।

পৃথিবীতে বহু মানবতাবাদী রয়েছে, তবে তার মত শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই, তিনি সকল মানুষকে নিয়েই ভাবতেন, সকল মানুষেরই পাশে দাঁড়াতেন।

অনুকূলচন্দ্র একাধারে কবি, লেখক, ডাক্তার, বিবাহ বিষয়ে মাষ্টার্সপ্রাপ্ত, বৈজ্ঞানিক, ইষ্টের ধারকবাহক, ত্রিকালদর্শী, ধর্মের ষাড়, পরমপিতার একমাত্র সন্তান।

অনুকূল চন্দ্রের আদর্শ ও কিছু উপদেশ :
ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সব সময় চাইতেন, তার অনুসারিরা সব সময় কৃষ্ণ ভক্তির পথে থাকুক। কারণ ভগবানের উপাসনা ছাড়া মুক্তি লাভের কোন উপায় নেই।
- কৃষ্ণ ভিন্ন উপাই নাই আর সংসারে ( পুন্যপুথি, ১০/৮৫)
- ভগবান ব্যতিরেকে উপাস্য নাই। ঋষিগণ তাহারই বার্ত্তিক। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৬)
- তোদের লক্ষ্য ভগবান। (পুন্যপুথি, ১১/৩২)

মনকে স্থির রাখার উপায় কি?  কি ভাবে ভগবানের পথে একাগ্রতা আসবে, এ বিষয়ে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন,-
- বাসুদেবই (কৃষ্ণ)  সব হলে একাগ্রতা সহজ হয়। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ২১)
- সমস্ত গীতার মধ্যে ঘুরে ফিরে ঐ ইষ্ট প্রাণ হওয়ার কথা, ঐ কৃষ্ণ প্রাণ হওয়ার কথা, সমস্ত মহাপুরুষদের কথাই ঐ, শিক্ষাই ঐ, কাজই ঐ। ঐ টুকুর অভাবেই তো জন্ম জন্মান্তরে কত কষ্ট। ভগবানকে যে বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ায় তার আবার পরোয়া কি? (আলোচনা প্রসঙ্গে/৬/পৃ.২০৭)
- ভগবানকে জানা মানেই সমস্তটাকে বুঝা বা জানা। (আলোচনা প্রসঙ্গে)
- বসুদেবের ছেলে শ্রীকৃষ্ণ,রক্ত মাংস সঙ্কুল এই প্রতীকই যা কিছু সব,এই বোধই চরম বোধ। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ২য় খন্ড, ২০/১২/৪১)
অনুকূল চন্দ্র মায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেই নবউদ্যম নিয়ে উৎফুল্ল মনে উঠেপড়ে লেগে যান মানুষের চরিত্র গঠনের কাজে। তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে কলূষমুক্ত করার জন্য এতো অপমান, এতো গঞ্জনা সহ্য করে চলেছিলেন তাঁর আপন গতিপথে। যেথায়ই দেখেছেন অসৎ প্রকৃতির লোকেরা শাসন পীড়নের মাধ্যমে সঠিক পথে আনা যাচ্ছে না, তখনই তিনি দেবদূত হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর প্রেম ভালবাসা নিয়ে।

অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ :
পাবনা শহরের সন্নিকটে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ (আশ্রম-মন্দির) অবস্থিত। সৎসঙ্গ আশ্রমটি আদিতে সাদামাঠা বৈশিষ্টে নির্মিত হয়েছিল; এতে কোন উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়নি। তবে বর্গাকৃতির ভবনটির শীর্ষদেশ চারটি ত্রিভূজ আকৃতির ক্রমহ্রাসমান ছাদে আচ্ছাদিত ছিল। এ মন্দিরের শিখর ক্ষুদ্রাকৃতির কলস ফিনিয়ালে আকর্ষনীয় বৈশিষ্টমন্ডিত ছিল। মন্দিরের পাশেই শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের পূজার ঘর অবস্থিত। এ ক্ষুদ্র ভবনটি গম্বুজবিশিষ্ট এবং ধনুক বক্র কার্নিশ ও গম্বুজের চারকোণে চারটি দৃষ্টিনন্দন শিখর ধারণ করে এক বৈচিত্রময় বৈশিষ্টের অবতারনা করেছে।

শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের পিতা-মাতার স্মৃতিরক্ষার্থে এই মন্দির নির্মিত। মন্দিরের সম্মুখ প্রাসাদে ‘স্মৃতি মন্দির’ কথাটি পাথরের উপরে উৎকীর্ণ করা আছে। অনুকূলচন্দ্র ‘সৎসঙ্গ’ নামে একটি জনহিতকর সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। প্রকৃত অর্থে অনুকূল ঠাকুর মানবকল্যাণে তাঁর জায়গা-জমি যথাসর্বস্ব উৎসর্গ করে গেছেন। স্মৃতিমন্দিরটি অন্যান্য ইমারতের তুলনায় এখনো সুসংরক্ষিত অবস্থায় আছে। সম্প্রতি নব নির্মিত সৎসঙ্গ-আশ্রম-মন্দির সমন্বয়ে গঠিত স্থাপত্য নিদর্শনটি সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে। এখানে শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঐ সময় এখানে প্রচুর লোক/অতিথির সমাগম হয়।

যে কোন স্থান হতে বাস অথবা নিজস্ব পরিবহন মারফত পাবনা বাস টার্মিনালে আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ (আশ্রম-মন্দির) যেতে হয়। দূরত্ব ৭ (সাত) কি:মি:। এ পথে বাস টার্মিনাল হতে রিক্সা/অটোরিক্সা/সিএনজি যোগে যাওয়া যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো আছে।
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি