ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মি. বিন কে ছিলেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৮, ৭ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৩:১৮, ৭ জানুয়ারি ২০২০

দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষকে হাসানো একটি নাম মি. বিন। তার পুরো নাম রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন। ১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে জন্মগ্রহণ করেন এই ইংলিশ অভিনেতা। গতকাল ছিল এই কমেডিয়ানের জন্মদিন। 

মি. বিনের ডাক নাম রো। তার বাবার নাম এরিক অ্যাটকিনসন এবং মায়ের নাম এলা মে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মি. বিন।

যেসব শিল্পীরা নির্বাক ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে সবাইকে অবাক করে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে রোয়ান অ্যাটকিনসন অন্যতম । তিনি ‘মি. বিন’ ছাড়া আরও অনেক মুভি ও অনুষ্ঠানে অভিনয় করেছেন । কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছেন এই ‘মি. বিন’ অনুষ্ঠানটির মাধ্যমেই। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমেই তার নাম ‘রোয়ান অ্যাটকিনসন’ এর বদলে হয়ে যায় ‘মি. বিন’। 

গরিব পরিবারে জন্ম। বাবা ছিলেন একজন কৃষক। প্রচণ্ড পরিশ্রমী আর মেধাবী ছিলেন তিনি। মি. বিন ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুল, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সবশেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই প্রথম অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়। তারপর একটি কমেডি গ্রুপে যোগ দেন তিনি। কিন্তু সেখানে তার কথার তোতলামির কারণে ভাল করতে পারেননি।

এবার সে ভাগ্যের চাকাকে শুধুমাত্র অভিনয়ের দিকেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে এসেও তিনি সেই একই সমস্যার মুখোমুখি হন, তোতলামির জন্য অনেকগুলো টিভি শো তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে ফিরিয়ে দেয়। হতাশায় চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে তাকে। কিন্তু এতো হতাশার পরও, সে নিজের উপর বিশ্বাস হারাননি। এরই মধ্যে একসময় তিনি একটি মজার ব্যাপার আবিষ্কার করলেন। 

মি. বিন বলেন, ‘আমি দেখলাম, যখন আমি আমার মতো করে কথা বলি কেবল তখনই আমার তোতলামো আসে, কিন্তু আমি ছাড়া অন্য কারো ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে গেলে আমি অনর্গল কথা বলে যেতে পারি।’ তিনি তার সমস্যাটিকে জয় করলেন। কিন্তু তারপরও তাকে সবাই ফিরিয়ে দিতে থাকে।

এবার দ্বিতীয় কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তার চেহারা সুন্দর না এবং নায়কের মতো শরীরও নেই। ভেতরে ভেতরে তার এই অপমানকে তিনি শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টায় নামেন। যারা তাকে অবহেলা করছে, ওদেরকে তিনি ভুল প্রমাণ করেই ছাড়বেন- নিজের সাথে এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তিনি। আর এক পর্যায়ে তিনি সেটা করিয়েও দেখিয়েছেন।

 ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত জেমস বন্ড সিরিজের ছবি ‘নেভার সে নেভার এগিন’ মুভিটি। মুভিটিতে রোয়ান অ্যাটকিনসন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিই রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত ১ম মুভি। এরপরের বছর রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনয় করেন ‘ডেড অন টাইম’মুভিটিতে। এটিতে রোয়ান লিডিং চরিত্রে অভিনয় করেন।  


মি. বিনের ঐতিহাসিক লুক

১৯৯০ সালে ‘মি. বিন’ নিয়ে টেলিভিশন পর্দায় হাজির হন রোয়ান অ্যাটকিনসন। মি. বিন মূলত ১৪ পর্বের একটি হাস্যরসাত্মক ব্রিটিশ টিভি ধারাবাহিক। আইটিভি নামক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এর প্রথম পর্বটি প্রচারিত হয় ১৯৯০ সালের প্রথম দিনটিতে। শেষ পর্বটির নাম ‘হেয়ার বাই মি. বিন অব লন্ডন’। প্রথমে শুধু টিভি সিরিয়াল থাকলেও মি. বিন নিয়ে অসংখ্য সিনেমা এমনকি কার্টুনও নির্মিত হয়েছে। মি. বিন প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। টানা বিশ বছর রোয়ান এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

২০১২ সালের নভেম্বরে রোয়ান অ্যাটকিনসন ডেইলি টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিন চরিত্রে আর হাজির না হওয়ার ঘোষণা দেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন এই চরিত্রটি দিনে দিনে তাকে শিশুতে রূপান্তর করে দিচ্ছে। এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য যে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় সেটিও আজকাল আর তিনি পাচ্ছেন না। এছাড়া তার মতে, ‘একজন পঞ্চাশ ঊর্ধ্বের ব্যাক্তিকে শিশুসুলভ অভিনয় করাটা একেবারেই বেমানান। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আমি সিরিয়াসধর্মী চরিত্রগুলোতেই শুধু অভিনয় করব।’সুতরাং এই চরিত্রে তাকে আর দেখা যাবে না কখনোই।

১৯৯০ সালে রোয়ান অ্যাটকিনসন মেকআপ আর্টিস্ট সুনেত্রা শাস্ত্রির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বেনজামিন এবং লিলি নামে তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে রোয়ান খুবই চুপচাপ স্বভাবের। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলতে ওর মোটেও ভাল লাগে না। আর কথা কম বলতে পছন্দ করেন বলেই হয়ত মি. বিন চরিত্রেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। রোয়ান অ্যাটকিনসন এর শখ হলো স্পোর্টস কার সংগ্রহ করা। মজা পান নিজের টেনিস কোটের চারপাশে তার ছোট্ট রেসিং কারটি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। ব্রিটিশ কার ম্যাগাজিনেও নিয়মিত লেখেন তিনি। বর্তমানে রোয়ান অ্যাটকিনসন হচ্ছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা সেলিব্রেটিদের একজন।  


কমেডিয়ান চরিত্রে মি. বিন

২০০৫ সালের রম্য দর্শকদের ভোটে ব্রিটিশ কমেডি ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ৫০ কমেডিয়ানের তালিকায় নাম ওঠে রোয়ানের। ইংল্যান্ডের রাজনীতি এবং রাজপরিবারে রোয়ানের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। রাজ পরিবারের বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুলে রোয়ানের সঙ্গী ছিলেন টনি ব্লেয়ার (যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী)। টনি গম্ভীর আর রোয়ান আমুদে আর রসিক হলেও দু’জনের মধ্যে ছিল খুব ভাল বন্ধুত্ব।

ছোটবেলা থেকেই রোয়ান অ্যাটকিনসন ছিলেন বেশ হাসিখুশি একজন মানুষ। কিন্তু কথা খুব কম বলতেন। যেটা তার অভিনয়ে এখন দেখা যায়। রোয়ান অ্যাটকিনসন ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুলে পড়তেন। সেখানে একটি ফিল্ম সোসাইটি ছিল। সেই ফিল্ম সোসাইটির প্রধান বিষয় ছিল হাসির ও শিশুতোষ বিষয়ক বিভিন্ন সিনেমা দেখানো। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের চোখে টেলিভিশন দেখা হয়ে ওঠেনি রোয়ান অ্যাটকিনসনের। স্কুলে যখন চার্লি চ্যাপলিনসহ আরও যারা কমেডি অভিনেতাদের মুভিগুলো দেখতেন এবং নিজের অজান্তেই তাদের নকল করা শুরু করেন। এরপর এক সময় মঞ্চের বেকস্টেজে কাজ করা শুরু করেন। বেকস্টেজ থেকে চলে আসেন মূল মঞ্চে। মঞ্চে রোয়ান অ্যাটকিনসন এর অভিনয় দেখে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে অভিনয়কে সিরিয়াসভাবে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। 


স্ত্রীর সঙ্গে মি. বিন

কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে রোয়ান অ্যাটকিনসন ছিলেন সিরিয়াস। কেননা পড়াশোনায় তিনি খুব ভালো ছিলেন। তাই পড়াশুনাটাকেই সবসময় প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে অভিনয় করা কিংবা কমেডিয়ান হওয়া কোনোটিই তার লক্ষ্য ছিল না। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে রিচার্ড কার্টিসের সাথে পরিচয় হয় মি. বিনের। রিচার্ড কার্টিস ছিলেন একজন নাট্যকার ও গীতিনাট্য অভিনেতা। রিচার্ড সাধারণত কমেডি চরিত্রে অভিনয় করতেন।

রিচার্ড কার্টিস ও রোয়ান অ্যাটকিনসন দুজনে মিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন ‘অক্সফোর্ড নাট্যশালা’। রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে নাটক লেখাও শুরু করেন। সেইসঙ্গে কমেডি নাটকে অভিনয়। রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে একসাথে রোয়ান অ্যাটকিনসন বিবিসি রেডিও থ্রিতে দ্য অ্যাটকিনসন পিপল নামের একটি স্যাটারিক্যাল ইন্টারভিউধর্মী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতেন। 

মি. বিন অভিনীত যত ছবি-

১. নেভার সে নেভার এগেইন। ২. দ্য টল গাই। ৩. দ্য উইচেজ। ৪. হট শটজ।  ৫. ফোর উইডিংজ এন্ড আফিউনারেল। ৬. বিন: দ্য আলটিমেট ডিজাস্টার মুভি। ৭. মেবি বেবী। ৮. র্যাট রেস। ৯. স্কুবি ডু। ১০. জনি ইংলিশ।
১১. লভ একচুয়েলি। ১২. কিপিং মম। ১৩. মি বিনস হলিডে। ১৪. জনি ইংলিশ রি-বর্ন।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি