ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোজ ডায়েটে শাক-সবজি রাখলে ১৪ উপকার মিলবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২০:১৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

রোজের ডায়েটে সবুজ শাক-সবজি এবং কমলা লেবুকে অন্তর্ভুক্ত না করলে ছেলেদের অল্প বয়সেই স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সেই সঙ্গে লেজুড় হতে পারে বুদ্ধি কমে যাওয়া, মনোযোগে বিচ্যুতি এবং ব্রেন পাওয়ার কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও। নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে এমনটা জানা যাচ্ছে।

প্রায় ২৭ হাজর ৮৪২ জনের উপর প্রায় ২০ বছর ধরে পরীক্ষা চালিয়ে একদল মার্কিন গবেষক দেখতে পয়েছেন, যারা কম পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি এবং কমলা লেবু খেয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে নানাবিধ ব্রেন ডিডিজে আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ অনেক বেশি। অন্যদিকে যাদের ডায়েটে সবজির পাশাপাশি নানাবিধ ফলও জায়গা করে নেয়, বিশেষত সাইট্রাস ফল, তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া বা ব্রেন পাওয়ার কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৪৭ শতাংশ কমে যায়। এবার নিশ্চয় বুঝেছেন, ব্রেনকে বাঁচাতে রোজের ডায়েটে সবজি এবং কমলা লেবুকে রাখার প্রয়োজন কতটা!

প্রসঙ্গত, রোজের ডায়েটে সবুজ শাকসবজি এবং কমলা লেবুকে অন্তর্ভুক্ত করলে যে কেবল স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে, তা নয়, সেই সঙ্গে আরও একাধিক শারীরিক উপকার মেলে। যেমন ধরুন-

শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে

হার্টের রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলো দায়ি থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হল শাক-সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মাত্রায় সবজি খেলে রক্তে জমতে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। প্রসঙ্গত, শরীরে উপস্থিত কোলেস্টেরলকে কাজে লাগিয়ে লিভার, বাইল অ্যাসিড তৈরি করে থাকে। এই উপাদানটি শরীরকে সচল রাখতে নানাভাবে সাহায্য করে। কিন্তু যখনই কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। তখনই কোনও ধরনের বিপদ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সুস্থভাবে বাঁচতে শরীরে যাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কোনওভাবে না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে

শীত মানেই ত্বকের আদ্রতা কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে সৌন্দর্য কমে যাওয়া যেন খুবই স্বাভাবিক অবস্থা। তাই তো এই সময় সৈন্দর্য ধরে রাখতে স্কিনের আলাদা করে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠতে পারে কমলা লেবু। কারণ নিয়মিত এই সাইট্রাস ফলটি খেলে শরীরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে য়েমন ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে, তেমনি অন্যদিকে বলিরেখা কমতে শুরু করে, কালো ছোপ দাগ মিলিয়ে যায় এবং ত্বক তুলতুলে হয়ে ওঠে। এক কথায় শীতের মৌসুমে ত্বকের পরিচর্যায় কমলা লেবুর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

স্ট্রেস লেভেল কমে

২১ শতকের মারণ সমস্যার তকমা পাওয়া স্ট্রেস বা মানসিক চাপকে কমিয়ে ফলতে বাস্তবিকই সবুজ শাক-সবজির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সব প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর ভিতরে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্ট্রেস লেভেল তলানিতে এসে ঠেকতে সময় লাগে না।

কিডনি স্টোনের মতো রোগের খপ্পরে পরার আশঙ্কা কমে

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কমলা লেবু খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যাদের প্রভাবে কিডনি ফাংশনের উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে কিডনি স্টোনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে

শীত মানেই ভুরিভোজ। শীত মানেই পিকনিক। আর শীত মানেই উত্তাল পার্টি। ফলে এই সময় ওজন বেড়ে যাওয়াটা একেবারেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এমন পরিস্থিতিতে যদি প্রতিদিন একটা করে কমলা লেবু খেতে পারেন, তাহলে ওজন বাড়ার চিন্তা থেকে কিন্তু মুক্তি মিলতে পারে! কিভাবে? কমলা লেবুর শরীরে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতিতে এবং শরীরকে বিষ মুক্ত করতে যেমন বিশেষ ভূমিকা নেয়, তেমনি শরীরে ক্যালরির প্রবেশ যাতে কম পরিমাণে হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখার মধ্যে দিয়ে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে

সবুজ শাক-সবজিতে উপস্থিত লুটেইন এবং জিয়েক্সেথিন নামক দুটি উপাদান দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, জোড়ালো আলোর কারণে যাতে চোখের কোনও ক্ষতি না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখে এই প্রকৃতিক উপাদানগুলো। তাই তো যাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই কম্পিউটার বা ডিজিটাল স্ক্রিনের সমানে কাজ করতে হয়, তারা নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি খেতে ভুলবেন না যেন!

ইনসমনিয়ার মতো রোগের খপ্পর থেকে মুক্তি মেলে

নানা কারণে রাত্রে ঠিক মতো ঘুম হয় না? সেই সঙ্গে ক্লান্তিও যেন বাঁধ ভেঙেছে? তাহলে রোজের ডায়েটে কমলা লেবু থাকা মাস্ট! কারণ এই ফলটির শরীরে থাকা ফ্লেবোনয়েড, বেশ কিছু নিউরোট্রান্সমিটারকে অ্যাকটিভ করে দেয়, যা একদিকে যেমন অনিদ্রার সমস্যা দূর করে, তেমনি স্মৃতিশক্তি এবং কগনিটিভ পাওয়ার বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দূরে পালায়

একাধিক পরীক্ষার পর এ কথা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে কমলা লেবুতে উপস্থিত সাইট্রাস লিমোনয়েডস, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ক্যানসার সেল জন্ম নেওয়ার কোনও সম্ভবনাই থাকে না। প্রসঙ্গত, জার্নাল অব দা আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত এক স্টাডি অনুসারে প্রচুর মাত্রায় শাক-সবজি খেলে শরীরের ভিতরে এমন পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ক্যানসার কোষ জন্ম নেওয়ার সুযোগই পায় না। বিশেষত, কলোন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই এই মারণ রোগটিকে যদি দূরে রাখতে হয়, তাহলে ভুলেও রোজের ডায়েট থেকে সবুজ শাক-সবজিকে বাদ দেওয়া চলবে না।

শরীরের বয়স কমে

সবজি শাকসবজি কেবল মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখে না, সেই সঙ্গে সমগ্র শরীরের উপরও বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। ফলে খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও শরীর এবং তার ভিতরে ফিট করা নানাবিধ অঙ্গের কর্মক্ষমতার উপর কোনও প্রভাবই পরে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, মার্কিন গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে আম বাঙালি সাধারণত যে যে সবজিগুলো খেয়ে থাকেন, তার মধ্যে ভিটামিনকে প্রচুর মাত্রায় থাকে। এই ভিটামিনটি হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

কমলা লেবুতে উপস্থিত ফাইবার এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান দেহের ভিতরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, কমলা লেবুতে থাকা পটাশিয়ামও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে কমলা লেবুর খাওয়ার আগে নিশ্চয় আর প্রশ্ন জাগবে না মনে যে, কেন সব বাঙালি অন্ধের মতো কমলা লেবু খেয়ে থাকে শীতকালে!

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কমলা লেবুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু খেল দেখায় যে রক্তচাপ একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই একটা কারণেও নিয়মিত কমলা লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে কমলা লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড এবং বিটা-ক্যারোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

হাড় শক্তপোক্ত হয়

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষমতা, বিশেষত জয়েন্টর ক্ষমতা কমতে শুরু করে। আর এই ঘটনাটি ঘটতে থাকে ৩০-এর পর থেকেই। তাই তো এই বয়সের পর থেকে শাক-সবজির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা মাস্ট! কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটির ভিতরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, হাড়ের শক্তি বাড়ায়, সেই সঙ্গে জয়েন্টের সচলতাও এমন বাড়িয়ে তোলে যে কোনও ধরনের হাড়ের রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ পায় না।

দেহের ভিতরে ইনফ্লেমেশনের মাত্রা কমে

শীতকালে খেয়াল করে দেখবেন জয়েন্ট পেনের কারণে ভোগান্তি খুব বেড়ে যায়। কারণ এই সময় দেহের ভিতরে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন মাত্রা ছাড়ায়, যে কারণে এমন পরিস্থিতি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও কিন্ত কমলা লেবু আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কিভাবে? এই ফলটির শরীরে এমন কিছু উপাকারি উপাদান রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এবার বুঝেছেন তো শীতকালে কমলা লেবু খাওয়ার প্রয়োজন কতটা!

সূত্র: বোল্ডস্কাই

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি