ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনায় বসছেন শেখ হাসিনা-বব রে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০৯, ১১ জুন ২০১৮

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসছেন মিয়ানমারে নিয়োজিত কানাডার বিশেষ দূত বব রে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েকদিনের মাথায় এ বৈঠক হতে যাচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন রে।

দেশে ফিরে গিয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের কানাডায় আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। নিধনযজ্ঞে জড়িতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন রে। ক’দিন আগে কানাডার পার্লামেন্টকে তিনি জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কানাডা-বাংলাদেশ সম্মিলিত উদ্যোগের ব্যাপারে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে কুইবেকে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বের আরও ১২ জন নেতাকে আউটরিচ অধিবেশনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনের পাশাপাশি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও অন্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। কানাডার সংবাদমাধ্যম সিটিভি নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সোমবার মিয়ানমারে নিয়োজিত কানাডার বিশেষ দূত বব রে-এর সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি। গত ৬ জুন সিনেটের মানবাধিকার কমিটির সামনে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা বর্ণনা করার সময়ই বব রে জানিয়েছিলেন তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সিনেটের মানবাধিকার কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ এ ইস্যুটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল এমন কোনও জায়গা নয় যে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা এখানে অপেক্ষা করছে; এটি এমন একটি দেশ যেটি এতো বেশি সংখ্যক শরণার্থীর আগমনের কারণে মারাত্মকভাবে ভুগছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে কী নিয়ে আলাপ করবেন তাও জানিয়েছিলেন বব রে। তিনি বলেছিলেন, ‘বর্ষাকালীন সংকট মোকাবিলা এবং শোচনীয় অবস্থায় থাকা ক্যাম্পের উন্নয়ন নিয়ে আমরা কিভাবে পরস্পরকে সহায়তা করতে পারি তা নিয়ে আলাপ করতে চাই আমি। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি তা নিয়েও আলোচনা করব।` ৬ জুন সিনেটে সাক্ষ্য দেওয়ার পর সিটিভি নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন বব রে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানে মিয়ানমার সরকারের অনীহা নিয়ে ক্ষোভ জানান তিনি। বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার স্পষ্ট করে বলছে নাগরিকত্ব পরের ইস্যু।’

রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত মানবিক সংকট মোকাবিলায় আগামী তিন বছরে ৩০ কোটি ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করেছে কানাডা। সিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি সহায়তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বাবদ এ অর্থ খরচ করার কথা রয়েছে। বেশিরভাগ অর্থই বাংলাদেশে খরচ করার কথা। তবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বব রে’র সুপারিশ অনুযায়ী এ সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ হতে হবে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বাঙালি মুসলিম আখ্যা দিয়ে নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আসছে। তবে এবারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ার একপর্যায়ে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। তবে সেই চুক্তির পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ধোঁয়াশা কাটছে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার-বাংলাদেশ চুক্তির আওতায় এখনও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। এরমধ্যেই গত ৬ জুন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘ। তবে নাগরিকত্ব প্রশ্নটি অমীমাংসিত থাকায় এরইমধ্যে ওই চুক্তি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা। 

গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসে ক্যামেরা আর সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি ছাড়াই বব রে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ জন রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে দেখা করেন। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো তাণ্ডবের বিবরণ শোনেন তিনি। যৌন নিপীড়ন, বিমান হামলা, শিরশ্ছেদ এবং শিশুদের ওপর চাপাতি নিয়ে হামলাসহ বিভিন্ন ভয়াবহ সহিংসতা প্রত্যক্ষ করার বর্ণনা দেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে বব রে বলেন, ‘যা ঘটেছে তাতে লোকজন অনেক বেশি আতঙ্কগ্রস্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পড়েছে। আমি বলতে পারি এগুলো অকল্পনীয় ঘটনা, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো আমরা যে বিশ্বে বাস করছি সেখানে এগুলো এখন স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।’ দেশে ফিরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর কাছে দাখিল করা প্রতিবেদনে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর শরণার্থীদের কানাডায় আশ্রয় দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি চলমান মানবিক সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশ করেছেন। ৩ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি এসব সুপারিশ করেন।

টিআর/ এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি