ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর হাতে প্রযুক্তিপণ্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ দেশে দেশে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৩, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

ছবি : প্রতীকী

ছবি : প্রতীকী

প্রযুক্তিপণ্য শিশুদের হাতে দিলে ভালোর চেয়ে খারাপ হচ্ছে বেশি বলেই জানা গেছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট। তাই উন্নত বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের বিদ্যালয়েই ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইতোমধ্যে। আর এতে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। আমেরিকায় একের পর এক বিদ্যালয়ে ফোন নিষিদ্ধের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। শুধু আমেরিকায় নয়, ইংল্যান্ডের বোর্ডিং-স্কুলে ফোন নিষিদ্ধকে স্বাগতম জানিয়েছেন সেই দেশের মানুষ।ফ্রান্সের স্কুলের ভর্তি নির্দেশনায় ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট। দেশে দেশে এই ধরনের প্রযুক্তিপণ্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে ফ্রান্সজুড়ে স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধের একটি নির্দেশনা জারি হতে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী জ্যঁ মিশেল ব্লাংকোয়েরের দেওয়া এক বক্তব্য থেকে ফ্রান্স সরকারের এ পরিকল্পনার কথা জানা যায়। ব্ল্যাংকোয়ের বলেন, আমরা দেখছি, টিফিন বিরতির সময়ও শিশুরা এখন খেলতে চায় না। বরং নিজের স্মার্টফোনটা নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওটার দিকে। বিষয়টা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন তাই প্রস্তাব করেছেন, সেকেন্ডারি স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ বয়স ১৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত ফ্রান্সের সব স্কুল শিক্ষার্থীর জন্যে স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসাকে নিষিদ্ধ করতে চান তিনি। ক্লাসে ফোন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর আগে থেকেই যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, নতুন এই নিয়মের ফলে তা আরো কঠোর হবে।

লকারে ফোন রেখে ক্লাসে ঢুকছে অস্ট্রেলিয়ার স্কুলশিক্ষার্থীরা
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের স্কুলশিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে ঢুকছে স্কুলের লকারে তাদের ফোন রেখে। বের করছে আবার বিকেলে বাড়ি যাওয়ার সময়। এমনকি মধ্যাহ্ন বিরতিতেও ফোন বের করার অনুমতি নেই তাদের। আর তার ফল হলো, বিরতির সময় খুব প্রাণবন্ত কাটছে তাদের সময়। সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প, খেলাধূলা, খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে আবারো চাঙ্গা হয়ে নিতে পারছে ওরা। ক্লাসের পড়ায় মনোযোগের অবস্থাও এখন খুব ভালো। আগে যেখানে প্রতি ১০ বা ১৫ মিনিটে একবার করে শিক্ষককে এটা নিয়ে কথা বলতে হতো, এখন তার কিছুই করতে হচ্ছে না। একটানা ক্লাস নিয়ে শিক্ষক ক্লাস থেকে বেরুচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্টও ভালো হচ্ছে আগের থেকে। আর শিক্ষাথীদের ইতিবাচক এ পরিবর্তন দেখে ভিক্টোরিয়ার রাজ্যপ্রধান ড্যানিয়েল এন্ড্রুজ বলেন, ভিক্টোরিয়া রাজ্যের অন্যান্য স্কুলগুলোও চাইলে তাদের শিক্ষার্থীদের ওপর এ নিয়ম আরোপ করতে পারে।

ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে ফোন নিষিদ্ধকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা
মোবাইল ফোনের কারণে ইংল্যান্ডের সারে-র ক্রানলি বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো সমস্যা নজরে এল স্কুল কর্তৃপক্ষের। এর মধ্যে আছে আসক্তি, অনিদ্রা, ‘লাইক’ পাওয়াজানিত মানসিক জটিলতা, বিচ্ছিন্নতা এবং পর্নো-আসক্তি। ফলে জুনিয়র ছাত্রছাত্রীদের জন্যে ফোনকে তারা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। যদিও প্রথমদিকে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দানা বাঁধে, কিন্তু অচিরেই তারা বুঝতে পারল, কর্তৃপক্ষ আসলে পদক্ষেপটি নিয়েছেন তাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই। ফলে তারা নিজেরা শুধু এটা ব্যবহার থেকে বিরত হয়েছে তা নয়, সারে-র অন্যান্য স্কুলছাত্রছাত্রীদেরও তারা বোঝাচ্ছে এর ক্ষতি সম্পর্কে, উদ্বুদ্ধ করতে চাইছে, যাতে তাদের স্কুলেও এরকম উদ্যোগকে সমর্থন জানায় তারা।

আমেরিকার একের পর এক রাজ্যের স্কুল থেকে আসছে ফোন নিষিদ্ধের নোটিশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস, ইলিনয়েস এবং মেইন রাজ্যের নামকরা সব স্কুলগুলোতে সম্প্রতি মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। ওল্ড রচেস্টার রিজিওনাল স্কুল ডিসট্রিক্টের মেটাপয়সেট ক্যাম্পাসের প্রিন্সিপাল মাইকেল ডিভল নিজেই একসময় শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ওপর এর মারাত্মক ক্ষতিকর সব প্রভাব দেখে তিনি এতটাই সিরিয়াস যে, যে নিষেধাজ্ঞা তিনি তার ছাত্রছাত্রীদের দিয়েছেন, তা আগে নিজেই প্রতিপালন করছেন কঠোরভাবে। ক্লাসে তিনি কখনো ফোন নিয়ে যান না। এমনকি দিনভর ক্যাম্পাসের এ জায়গা-সে জায়গা করে বেড়ালেও ফোনটা থাকে তার সেই অফিসেই, সকালবেলা যেখানে তিনি রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

ইলিনয়েসের কলিনসভিল মিডল স্কুল। ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে এ স্কুলে সকাল ৮:২৫ থেকে বিকেল ৩:৩০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবরকম মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ- এ মর্মে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল কিম্বারলি জ্যাকসন।

নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের সর্ব উত্তরের রাজ্য মেইন। এ রাজ্যের অক্সফোর্ড হিলস মিডল স্কুল কর্তৃপক্ষও সম্প্রতি স্কুল আওয়ারে শিক্ষার্থীদের কাছে মোবাইল ফোন থাকার ব্যাপারে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা ঘোষণা করেছে। তারা বলেন, সোশাল মিডিয়া বুলিংয়ের কারণে সাম্প্রতিক কয়েকটি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তাদেরকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে বাধ্য করছে। গুটিকয় অভিভাবক ছাড়া অধিকাংশ মা-বাবাই এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ
চীনে টেনসেন্ট নামে বড় ইন্টারনেট কোম্পানি বাচ্চারা কত ঘণ্টা ইন্টারনেটে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলো খেলবে, তার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। জাপানে যারা খেলে তারা প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি খেললে তাদের সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার একটা নতুন আইন করেছে যাতে ১৬ বছরের কমবয়সীদের মধ্যরাত থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত অনলাইন গেমস খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি