ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪

শৈলজারঞ্জন মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩১, ১৯ জুলাই ২০২০

শৈলজারঞ্জন মজুমদার। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিশেষজ্ঞ সাধক, প্রশিক্ষক ও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহচর তিনি। অবিকৃত ও বিশুদ্ধরূপে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা এবং এর প্রচার-প্রসারে খোদ রবীন্দ্রনাথ জীবদ্দশায় যে ক’জন শিষ্যের ওপর নির্ভর করতেন তাদের মধ্যে তাঁর নামটি সর্বাগ্রগণ্য। কিংবদন্তিতুল্য এই সঙ্গীতসাধক পুরো জীবন রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং রবীন্দ্র-সান্নিধ্যে সমর্পণ করেছেন। আজ ১৯ জুলাই প্রখ্যাত এ সঙ্গীতজ্ঞের জন্মবার্ষিকী।

শৈলজারঞ্জন মজুমদার ১৯০০ সালের ১৯ জুলাই নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রমণীকিশোর দত্ত মজুমদার ছিলেন নেত্রকোনার ডাকসাইটে আইনজীবী। মাতা সরলা সুন্দরী গৃহিণী। শৈশবে ঠাকুরমা সৌদামিনী দেবীর কাছে সঙ্গীতে হাতেখড়ি গ্রহণের পর সঙ্গীত সাধনা হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের ব্রত। জামতাড়া জংবাহাদুর করোনেশন হাইস্কুলে কিছুদিন পড়াকালে ইংরেজি শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাহচর্য তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। 

তিনি ১৩১৪ বঙ্গাব্দের ১১ মাঘ শৈলজারঞ্জনকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে যান। ঠাকুরবাড়িতে উপাসনা, গুণীজনদের বক্তৃতা এবং রবীন্দ্রনাথের গান শুনে মুগ্ধ হন তিনি। কলেজে পড়ার পাশাপাশি চালিয়ে যান সঙ্গীতচর্চা।

প্রথম দেখাতেই রবীন্দ্রনাথের সত্তা এবং প্রভাব তাকে রীতিমতো অভিভূত করে ফেলে। দিনেন্দ্রনাথের কাছে শেখা ১৪টি গান দিয়ে তিনি ১৯৩২ সালে নেত্রকোনার দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রথম জন্মদিন উদযাপন করেন। শান্তিনিকেতনের বাইরে বাংলাদেশে তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসে এটাই প্রথম রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান। খোদ রবীন্দ্রনাথ নিজেই দিয়ে গেছেন এর দালিলিক স্বীকৃতি। জন্মদিন পালনের খবরে তখন শৈলজারঞ্জনকে চিঠি পাঠিয়ে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন কবি। সেই চিঠি এখনও আছে।

১৯৩২ সালের মাঝামাঝি ওকালতির ব্যবসা যখন সবে শুরু করেছেন তখন শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীতে রসায়নের অধ্যাপক পদে যোগদানের ডাক পান তিনি। বাবার বিরুদ্ধাচরণ করেই তিনি চলে যান বিশ্বভারতীতে। শৈলজারঞ্জনের ভাষায়, ‘জীবনের সবদিকে যে দ্বার খুলে গেল সে অনুভূতিটা শান্তিনিকেতনে না গেলে পেতাম না। সাধারণ গৃহস্থ জীবনেই জড়িয়ে থাকতাম।’

বিশ্বভারতীতে যোগদানের পর দিনেন্দ্রনাথের কাছে নিয়মিত গান শেখা শুরু করেন। একদিন রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে এক আসরে ‘গগণে গগণে আপনার মনে’ গানটি গেয়ে তাঁর প্রশংসা কুড়ান। এরপর থেকে আশ্রমের নিয়মিত সাপ্তাহিক পার্থনাতে গান গাইতে থাকেন। দিনে দিনে দিনেন্দ্রনাথের প্রিয় শিষ্য হয়ে ওঠেন। মূলত দিনেন্দ্রনাথই তাঁর প্রতিভার দরজাটি খুলে দেন। কিন্তু শৈলজারঞ্জন বিশ্বভারতীতে যোগদানের কিছুদিন পর দিনেন্দ্রনাথ স্থায়ীভাবে কলকাতা চলে যান। ১৯৩৫ সালে তিনি পরলোকগমন করলেন। এতে শৈলজারঞ্জনের গান শেখা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এমন সময় তাকে অবাক করে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজেই গান শেখানোর দায়িত্ব নেন। প্রতিদিন বিকেলে গুরুদেবের কাছে গান শিখতে শুরু করেন। গুরুদেব তাঁর প্রিয় গানগুলো শেখাতেন তাকে। গানের স্টক করতেন বলে রবীন্দ্রনাথ তাকে উপাধি দিয়েছিলেন- গীতাম্বুধি (গানের সাগর)। তিনি যখন শিখতে যেতেন তাকে দেখেই রবীন্দ্রনাথ অন্যদের বলতেন, ‘এবার আমার চাকরি শুরু হবে। ওই আসছেন গীতাম্বুধি।’

আবার কখনও কখনও তাকে গানের ‘স্যানিটারি ইন্সপেক্টর’ও বলতেন। এর কারণ শৈলজারঞ্জন গান শিখতে গিয়ে পারফেকশনের প্রতি খুব জোর দিতেন। বছরখানেক গান শেখানোর পর একদিন রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘ছোটদের গানের ক্লাস নাও, তুমি শিখছ, শেখাতে শেখাতে তোমার শিক্ষা আরও পাকা হবে।’ গুরুদেবের পরামর্শে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ক্লাস শুরু করলেন তিনি। পরে স্কুলের সাহিত্যসভার গান পরিচালনার ভারও এসে পড়ে তার ওপর।

শৈলজারঞ্জন ছিলেন কেমিস্ট্রির (রসায়ন) অধ্যাপক। এর বাইরে ছিলেন সঙ্গীতের শিক্ষক। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেউ যদি প্রশ্ন করে তুমি কী করো, তবে কী বলবে?’ শৈলজারঞ্জন বললেন, ‘আমি অধ্যাপনা করি বলবো।’ রবীন্দ্রনাথ আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘অধ্যাপনা তো করো, কী বিষয়ে বলবে?’ শৈলজারঞ্জন বললেন, ‘কেন, কেমিস্ট্রির?’ তখন রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘না না, একটা নয়, দুটো মিশিয়ে বলবে। হয় বলবে কেমিক্যাল মিউজিক, নয়তো বলবে মিউজিক্যাল কেমেস্ট্রি।’ অর্থাৎ তার ‘বিজ্ঞানের রসায়ন’ দিনে দিনে সঙ্গীত বা ‘রাগরাগিনীর রসায়ন’-এ পরিণত হয়েছিল।

অধ্যাপনার পাশাপাশি সঙ্গীত সাধনার মধ্য দিয়ে শৈলজারঞ্জন ক্রমেই রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। কবি বুঝতে পারেন শৈলজারঞ্জনের স্বপ্ন-সাধনার আকণ্ঠ কেবল সঙ্গীতের মধ্যে নিমজ্জিত। এরই মধ্যে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপিকার হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছেন। এক পর্যায়ে কবি তাঁর গানগুলি শুদ্ধরূপে চর্চা, সংরক্ষণ এবং প্রসারের ব্যাপারেও শৈলজারঞ্জনের ওপর অনেকখানি নির্ভর করতে শুরু করেন। তাছাড়া বিদ্বান মেধাবী শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছিলেন সমাদৃত। তাই যোগ্যতার বিচার-বিবেচনাতেই ১৯৩৯ সালে শৈলজারঞ্জনকে বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন কবি। সিদ্ধান্তের প্রাক্কালে শৈলজারঞ্জন কবিগুরুকে বলেন, ‘এ তো আমার পরম সৌভাগ্য। কিন্তু আমি তো তেমন কিছুই জানি না। আমি এখানকার লোকও নই। আমি কি পারবো?’ তখন কবি অভয় দিয়ে বলেন, ‘তুমি তো আমাকে মানো, তা হলেই হবে।’ দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে হেমেন্দ্রলাল রায়ের কাছে কিছুদিন হিন্দি ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখেন শৈলজারঞ্জন। তখন স্বরলিপি দেখে গান তোলা এবং স্বরলিপি লেখার কিছু কৌশল রপ্ত করেন। ১৯৩৪ সালের একদিন ‘মম মন উপবনে’ গানটির স্বরলিপি লিখে দেখান দিনেন্দ্রনাথকে। দিনেন্দ্রনাথ চোখ বড়ো বড়ো করে বলেন, ‘তুমি তো সুন্দর স্বরলিপি করেছো। তুমি আমাকে এটা দিয়ে যাও। আমি প্রবাসীতে পাঠিয়ে দিই।’ সে-ই প্রথম তাঁর স্বরলিপি পত্রিকায় ছাপা হয়। এরপর দিনেন্দ্রনাথ তাকে উৎসাহ জুগিয়ে স্বরলিপি লেখার অধিকার দেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবকিছুরই ভার দিয়ে দেন শৈলজারঞ্জনের ওপর। ১৯৩৬ সালে গ্রন্থন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সহ-অধ্যক্ষ কিশোরী মোহন সাঁতরাকে নির্দেশ দেন ‘এখন থেকে স্বরলিপি ছাপানোর আগে শৈলজারঞ্জনকে দেখিয়ে নেবে।’ শুধু তাই না, সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ হওয়ার পর তিনিই পাঠক্রমে স্বরলিপি বিষয়টি যুক্ত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন তাকে উৎসাহিত করে বলেন, ‘এমনভাবে শেখাবে যেন চিঠি পড়ার মতো প্রত্যেকে স্বরলিপি পাঠ করতে পারে।’

রবীন্দ্রনাথের দুই শতাধিক গান ও বেশকিছু নৃত্য নাট্যের স্বরলিপি করেছেন শৈলজারঞ্জন। সম্পাদনা করেছেন বেশকিছু স্বরলিপি গ্রন্থ। শুধু সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ বা গায়ক-স্বরলিপিকারক হিসেবে নয়, রবীন্দ্রনাথের গান ও নাটকের প্রচার-প্রসারেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এসব নিয়ে ছুটে গেছেন সুদূর রহ্মদেশের রেঙ্গুন পর্যন্ত।

রবীন্দ্রসঙ্গীতের টানে শান্তিনিকেতনের পরিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেলেও নিজ দেশ ও জন্মভূমির প্রতি গভীর টান অনুভব করতেন তিনি। জন্মভূমি নেত্রকোনাকে বলতেন ‘দেশ’, বাংলাদেশকে ‘স্বদেশ’ আর নিজের পরিচয় দিতেন‘ ‘বাঙাল’ হিসেবে। শান্তিনিকেতনে থিতু হওয়ার প্রায় তিনদশক পরে ১৯৭৪ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। এরপর আরও দুইবার আসেন ১৯৭৫ ও ১৯৮৬ সালে। যদিও জন্মভূমির টানে এসেছেন কিন্তু এ-দেশে রবীন্দ্রনাথের গান অবিকৃত ও শুদ্ধরূপে ছড়িয়ে দেওয়া ছিল তার আরেকটি বিশেষ উদ্দেশ্য। প্রত্যেকবার এসে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে আগ্রহী শিল্পীদের গান শিখিয়েছেন। সভা-সমিতিতে যোগ দিয়ে মূল্যবান বক্তৃতা করেছেন।

আরেকটি প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেই নয়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া করেছেন। তিনি কলাভবনের ছাত্রী ছিলেন। শৈলজারঞ্জন তখন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। একদিন বান্ধবীদের নিয়ে শৈলজারঞ্জনের সঙ্গে দেখা করে তার ক্লাস করার অনুমতি চাইলেন। অনুমতি দেয়ার পর নিয়মিত ক্লাস করতে লাগলেন। কলাভবনের ছাত্রী হয়েও শৈলজারঞ্জনের স্নেহধন্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শৈলজারঞ্জনকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের বৃহত্তর দায়িত্বভার কাঁধে নিয়েও প্রিয় শিক্ষককে ভুলে যাননি। যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি যখন তথ্য ও বেতার মন্ত্রী তখন দিল্লির এক অনুষ্ঠানে শৈলজারঞ্জন অনুযোগ করলেন, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কলকাতায় কী অনাচারই না চলছে।’ তাঁর সামান্য কথাতেই ‘আকাশবাণী’ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেন ইন্দিরা গান্ধী। কয়েকদিন পর দিল্লি থেকে ফিরে শৈলজারঞ্জন মজুমদার বুঝতে পারেন, আকাশবাণীর ডাইরেক্টর জেনারেল থেকে শুরু করে সদ্য নির্বাচিত শিল্পী অবধি সবাই রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরিবেশন ও অনাচার রোধে সতর্ক হয়েছেন।

কিংবদন্তিতুল্য এই সঙ্গীতগুরু ১৯৯২ সালের ২৪ মে ভোররাতে কলকাতার সল্টলেকের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৭৪ সালে জাতির পিতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু তখন তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। শৈলজারঞ্জনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারে আর ছাড়ুমই না।’ শৈলজারঞ্জন মজুমদার তখন বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি উদ্বাস্তুদের দখলে, শহরের বাড়িতে মসজিদ হয়েছে, থাকার জায়গা কোথায়?’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু জোর দিয়ে বলেন, ‘ছাইড়্যা দেন। আমি আপনেরে বাড়ি দেব, গাড়ি দেব। আপনার জায়গার অভাব হবে না।’ বঙ্গবন্ধুর এ আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন শৈলজারঞ্জন। আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘যাত্রাপথের আনন্দগান’-এ তিনি বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে লিখেছেন: ‘সে আমি ও আমার অন্তরের অন্তস্থলে উপলব্ধি করেছি।’  

লজারঞ্জন মজুমদারের বাড়ি নেত্রকোনার ভাটি বাংলার রাজধানী বলে খ্যাত মোহনগঞ্জ উপজেলায়। তৎকালীন নেত্রকোনা মহকুমার মোহনগঞ্জ থানার বাহাম গ্রামে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত অনেক স্থান ও জন্মভিটা রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও সংরক্ষণের উদযোগের অভাবে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বসত ভিটা উদ্ধাস্তুদের দখলে চলে গিয়েছিল। রবীন্দ্র চেতনার ধারার ও বাহক শৈলজারঞ্জন মজুমদারের অত্র এলাকার কৃতি সন্তান হিসেবে সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদান নি:সন্দেহে অতুলনীয়।

তাই এখানে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শৈলজারঞ্জন মজুমদারের স্মৃতি রক্ষার জন্য তার পৈতৃক ভিটায় শৈলজারঞ্জন সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। স্থাপনাটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসানের ভূমিকা মুখ্য।

ভাটিবাংলার জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে এটি নির্মিত হচ্ছে। শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মোহনগঞ্জ পৌরসভার বাহাম এলাকায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় আড়াই একর জমিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে নির্মাণ কাজ চলছে।

শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক একাডেমির এই প্রকল্পের মধ্যে থাকছে ৩ তলা বিশিষ্ট একাডেমী ভবন, এম্ফিথিয়েটার, কনফারেন্স হল, গ্রন্থাগার, জাদুঘর, সবুজ চত্বর ও পুকুর সম্বলিত একটি অত্যাধুনিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এছাড়াও  থাকছে একাডেমী প্রাঙ্গণে আধুনিক সুবিধা সম্বলতি Mela Kiosk।

এই সংস্কৃতি চর্চার উন্মোচিত ক্ষেত্রের উপর গবেষণার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।পাশাপাশি ঐতিহাসিকভাবে রবীন্দ্র চর্চার এই উর্বর ভূমি হাওরবেষ্টিত মোহনগঞ্জকে রবীন্দ্র সংস্কৃতির সম্ভাবনাময় চারণক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করারও যথেষ্ঠ সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। তাই শৈলজারঞ্জনের জন্মভিটায় একটি সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মান কাজ সমাপ্ত হলে তা মহুয়া মলুয়ার এই জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আরো সমৃদ্ধ করবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী তাহমিনা সাত্তার বলেন, শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি হয়ে উঠবে দু' বাংলার রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রেমীদের পদচারণায় মুখর। সাংস্কৃতিক বিকাশের উৎস ভূমি।আমাদের সাজ্জাদ ভাইয়ের উন্নয়ন মূলক অনেক কাজের মাঝে অনন্য একটি কাজ এটি। এটি এক সময় এ উপমহাদেশের অন্যতম একটি তীর্থক্ষেত্রে পরিনত হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একান্ত সহচর, শান্তিনিকেতনের সঙ্গীতাচার্য্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের জন্মভিটার পূণ্যভূমিতে গড়ে ওঠা এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি হয়ে উঠুক সকল সঙ্গীতপ্রেমীর মহামিলন ক্ষেত্র। শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক সর্বত্র।

আতিক রহমান বলেন, কীর্তিমানের মৃত্যু নাই-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহচর প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতজ্ঞ শৈলজারঞ্জন মজুমদার এঁর স্মরণে নির্মিতব্য এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি ভবিষ্যতে মোহনগঞ্জ বাসী তথা বৃহৎ ময়মনসিংহের জন্য জ্ঞান আহরণ ও মর্যাদা লাভে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাকিবুর রহমান জানান, গত বছরের নভেম্বরে এ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কাজের মেয়াদ ১৮ মাস। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এতদিন দ্রুতগতিতে কাজ চলছিল। তবে করোনার কারণে এখন একটু সমস্যা হচ্ছে। তার পরও আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেঃ আরিফুজ্জামান জানান,নেত্রকোনা জেলার বহু উন্নয়নের রূপকার সাজ্জাদুল হাসান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব’র পৃষ্ঠপোষকতায় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে এই সংস্কৃতি কেন্দ্রটি নির্মিত হলে যেমন অত্র অঞ্চলে রবীন্দ্র সঙ্গীত ও সংস্কৃতির প্রচার, প্রশিক্ষণ ও নতুন শিল্পী তৈরীর পথ সুগম হবে তেমনি শিল্প সাহিত্য সঙ্গীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের অবদান বিশেষ করে রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুরকার হিসেবে তার স্বীকৃতি দেশবাসীর নিকট তুলে ধরা হবে। সেই সাথে অত্র এলাকার পর্যটন শিল্পের বিকাশেও এই কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি