ঢাকা, রবিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর নিজের আত্মহত্যা

‘সকল সমস্যাই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়’

সোহাগ আশরাফ

প্রকাশিত : ১২:২২, ১১ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১২:৪১, ১১ অক্টোবর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

বিছানায় পড়ে আছে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে ও স্ত্রী অঞ্জনার নিথর দেহ। দুজনার বুকের ওপর রয়েছে দুটি কোরআন শরিফ। ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে পিতা বায়োজিদ আহমেদের মরাদেহ। যেখানে পাওয়া গেলো কিছু চিরকুট। একশ’রও বেশি ছোট ছোট চিরকুট হবে সেখানে।

পুলিশের ধারণা প্রথমে বায়োজিদ স্ত্রী ও সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেন, এরপর নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

রুমের মধ্যে পাওয়া একটি চিরকুটে লেখা, ‘আমি মরতে পারলাম না’।

যা দেখে মনে হলো, বায়োজিদও সম্ভবত বিষ খেয়েছিলেন, কিন্তু বিষ খেয়ে মৃত্যু হয়নি তার। তাই ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।

রুমের মধ্যে যে চিরকুটগুলো পাওয়া গেছে তার অন্য আরেকটিতে লেখা রয়েছে- ‘এই ঘরে আর কোনোদিন আলো জ্বলবে না’, ‘আজকেই শেষ দিন আমাদের’।

১০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের ৫ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে ওই তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বহুতল ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় তারা ভাড়া থাকতেন।

বাসাটিতে চারটি রুম রয়েছে। বাথরুমসহ সব জায়গায় ছোট ছোট চিরকুট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। বেডরুম ছিল ফুল দিয়ে সাজানো। সবার ছবি দিয়ে সাজানো অ্যালবাম পড়ে ছিল মেঝেতে। দরজায় লেখা ছিল, ‘আজ আমাদের শেষ বাসর ঘর।’

এ এক করুন কাহিনী। সিনেমার গল্পের মত মনে হলেও ট্র্যাজেডিতে পূর্ণ এই কাহিনীটি এই শহরের। কিন্তু কেনো এই হত্যা ও আত্মহত্যা?

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পরিবারের দুইজনকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বায়েজিদ। হতাশা, আর্থিক কষ্ট, অপমান, অভিমান ইত্যাদি বহুবিধ কারণে একটি স্বপ্নমাখা পরিবারের সব আলো নিভে গেলো। সত্যিই ও ঘারে আর আলো জ্বলবে না!

সাংবাদিকতার সূত্র ধরে প্রতিদিন বহু সংবাদ নিয়ে খেলা করতে হয়। এর মধ্যে পাঠকদের বিনোদন দেওয়া থেকে শুরু করে মাঠের খেলা নিয়েও কীবোর্ড ভারি হয়ে ওঠে। কিন্তু এ সংবাদটি আমার হৃদয়টাকে ভারি করে দিয়েছে। সংবাদটি আমাকে বেশ আহত করে।

দৈনিক কর্মব্যস্ততা, সাংসারিক ও পারিবারিক সমস্যা, অফিসের চাপ, অর্থ কষ্ট এগুলো সবাই চলার পথের সঙ্গী। মাঝে মাঝে আমিও যে হতাশ বা চিন্তিত হইনা এমনটি নয়। তবুও আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। জীবন মানেই সংগ্রম। জীবন মানেই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, হতাশা ও উচ্ছ্বলতা। জীবনে চলার পথে অর্থ প্রয়োজন। এই অর্থ আয়ের জন্য মানুষ কত কি না করে! সেখানে ঋণ হয়ে চাপে পড়াটাও স্বাভাবিক বিষয়।

এ ক্ষেত্রে হতাশা আসতেই পারে। কিন্তু সব কিছুরই সমাধান রয়েছে। ভালোবাসার মানুষ স্ত্রী অঞ্জনা ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বায়োজিদের সুখের সংসার ছিল। এক সঙ্গে তোলা তাদের ছবিগুলো দেখলে সেটা বোঝাই যায়। কিন্তু অর্থের কাছে তিনটি স্বপ্ন এভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে তা কি মেনে নেওয়া যায়?

কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের যে ঘৃর্ণ প্রক্রিয়া মাঝে মধ্যেই আমাদের আহত করে তার বিনাশ জরুরী।

বায়োজিদ নেই কিন্তু তার মত একই সমস্যায় যারা রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- জীবনটা আপনার হলেও এটি হরণ করার অধিকার আপনার নেই। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এই নেয়ামত আপনি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না বলেই সমস্যা আপনাকে গ্রাস করছে। চলার পথে সমস্যা থাকবেই, তবে এগুলোকে মোকাবেলা করার নামই জীবন।

মনে রাখতে হবে- আপনার কর্মের জন্য পরিবার দায়ি নয়। কিন্তু আপনার উপর নির্ভর করে আছে বেশ কিছু মানুষ। তাই সৎ কর্ম ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলুন। বারবার ব্যর্থ হলেও সাফল্য একদিন আসবেই!

মনে রাখতে হবে- ‘সকল সমস্যাই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।’
এসএ/

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি