ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত : ০৯:৪০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফয়েজ আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২ মে ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ ভারতে ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার বাসাইলভোগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূত। তার পিতার নাম গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এবং মাতা আরজুদা বানু। ফয়েজ আহমদ ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি ১৯৭৬ সালে শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে পদক প্রদান করে।

১৯৪৪ সালে কলকাতার সওগাত পত্রিকাতে লেখালেখির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ভারত বিভাজনের পর ঢাকা চলে আসেন। তিনি পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৮ সালে মূলত মূল ধারার সাংবাদিকতা শুরু করেন। সে সময় তিনি ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ ও পরবর্তীতে পূর্বদেশে পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫০ সালে ‘হুল্লোড়’ এবং ১৯৭১ সালে ‘স্বরাজ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে পিকিং রেডিওতে বাংলা ভাষার অনুষ্ঠান শুরু করার জন্যে তিনবছর মেয়াদে নিযুক্ত হন।

সে সময় চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হয়। এছাড়া তিনি ঢাকা রেডিওতে ১৯৫২-৫৪ সালে ‘সবুজ মেলা’ নামের ছোটদের বিভাগটি পরিচালনা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে দৈনিক বঙ্গবার্তার প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। সাংবাদিকতা করার সময় থেকে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকার প্রাচীন আর্ট গ্যালারী ‘শিল্পাঙ্গণ’। তিনি প্রগতিশীল পাঠাগার ‘সমাজতান্ত্রিক আর্কাইভ’-এর প্রতিষ্ঠাতা।

ভারত বিভাজনের পর ফয়েজ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম একজন ব্যক্তি ছিলেন। পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক আইয়ূব খানের আমলে তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ৪ বছর কারাবন্দী ছিলেন। হাইকোর্টে গঠিত বোর্ডের মাধ্যমে বিচারের পর তিনি মুক্তি পান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের আমলে আর একবার কারাভোগ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেন।

৮০’র দশকে ফয়েজ আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর সিণ্ডিকেটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জাতীয় কবিতা উৎসবের প্রথম পাঁচ বছর আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়া ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমির কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু পরে এরশাদের সামরিক শাসনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।

সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ শক্তি ও জামাতে ইসলামীর বিরুদ্ধে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এই কমিটি বাংলাদেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালে গণআদালত তৈরি করে। তিনি সেই গণআদালতের ১১ জন বিচারকের মধ্যে অন্যতম একজন বিচারক ছিলেন।

ফয়েজ আহমদ প্রধানত শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া ও কবিতা লিখেছেন। তার বইয়ের সংখ্যা প্রায় একশ। ফয়েজ আহমদের বইগুলোর মধ্যে ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ উল্লেখযোগ্য।

এই বই সিরিজের বাকি দুইটি হলোঃ সত্যবাবু মারা গেছেন ও নন্দনে নন্দিনী। ছড়ার বইয়ের মধ্যে- ‘হে কিশোর’, ‘কামরুল হাসানের চিত্রশালায়’, ‘গুচ্ছ ছড়া’, ‘রিমঝিম’, ‘বোঁ বোঁ কাট্টা’, ‘পুতলি’ ‘টুং’, ‘জোনাকী’, ‘জুড়ি নেই’, ‘ত্রিয়ং’, ‘তুলির সাথে লড়াই’, ‘টিউটিউ’, ‘একালের ছড়া’, ‘ছড়ায় ছড়ায় ২০০’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও তিনি চীনসহ বিভিন্ন দেশের পাঁচটি বই অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে হোচিমিনের জেলের কবিতা উল্লেখযোগ্য।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি